Advertisement
১০ মে ২০২৪
Earth

‘ব্রহ্মাণ্ডের ফের চুপসে যাওয়ার ইঙ্গিত এখনও নেই’

অধ্যাপক রায়চৌধুরী জানান, নক্ষত্রপুঞ্জ নিয়ে গত দু’দশকে নানান গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডের পত্তন পর্ব থেকে মাঝামাঝি সময়ে এসে ছড়িয়ে পড়ার গতি বেড়েছে।

মহাবিশ্বের ভবিতব্য রহস্যই রয়ে গিয়েছে।

মহাবিশ্বের ভবিতব্য রহস্যই রয়ে গিয়েছে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:০৮
Share: Save:

‘শিশু’ মহাবিশ্বের উদ্ভব প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে। তখন থেকেই ক্রমশ বাড়ছে ব্রহ্মাণ্ড, যেমন বাড়ে মানবশিশু। আবার ব্যাপারটা বেলুনে ক্রমশ হাওয়া ভরার সঙ্গেও তুলনীয়। আদি পর্বের সেই কথা অনেকেরই জানা। কিন্তু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ভবিষ্যৎ কী? বৃদ্ধির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে সে কি ফের চুপসে যেতে শুরু করবে? যেমন চুপসে যায় ফোলানো বেলুন? যেমন বার্ধক্য কুঁকড়ে দেয় মানুষকে? বৃদ্ধির তুরীয় অবস্থা থেকে ব্রহ্মাণ্ডের ত্রমসঙ্কোচনের আভাস আছে স্টিফেন হকিং-এর বিখ্যাত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’-এ। হকিং নিশ্চিত করে সঙ্কোচনের কথা বলেননি, সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। তাই মহাবিশ্বের ভবিতব্য রহস্যই রয়ে গিয়েছে।

জাতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান বক্তৃতামালায় (ন্যাশনাল স্পেস সায়েন্স সিমপোজ়িয়াম) সেই রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা করলেন পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স-এর অধিকর্তা সোমক রায়চৌধুরী। শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজ়িও হলে তিনি বলেন, ব্রহ্মাণ্ড ফের চুপসে যাবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং উন্নত মানের যে-সব টেলিস্কোপ মহাকাশে গিয়েছে এবং তার মাধ্যমে বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের যে-তথ্য মিলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, ব্রহ্মাণ্ড ক্রমশ স্ফীত হচ্ছে এবং সেই প্রসারণের বেগ উত্তরোত্তর বাড়ছে।

এই গতিবিধি লক্ষ্য করার ব্যাপারটিও বেশ আকর্ষক। শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে কয়েকশো কোটি আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রপুঞ্জের তথ্য আহরণ করে তাদের গতিবেগ দেখছেন বিজ্ঞানীরা। দেখছেন, নির্দিষ্ট গতিবেগে তারা আরও দূরে চলে যাচ্ছে। এই গবেষণায় ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাসও বোঝা সম্ভব। কয়েকশো কোটি আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে কয়েকশো কোটি বছর আগের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আলোকবর্ষ, মানে আলো এক বছরে যতটা পথ পাড়ি দেয়। তাই সেই নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে বেরিয়ে আসা আলো যখন টেলিস্কোপে এসে ধরা দিচ্ছে, তত ক্ষণে কয়েকশো কোটি বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তাই যে-নক্ষত্রপুঞ্জ পৃথিবী থেকে যত দূরে আছে, সে তথ্য দিচ্ছে তত দূর কালের। কম দূরত্ব হলে তুলনামূলক সময়ের ব্যবধানও কম।

অধ্যাপক রায়চৌধুরী জানান, নক্ষত্রপুঞ্জ নিয়ে গত দু’দশকে নানান গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডের পত্তন পর্ব থেকে মাঝামাঝি সময়ে এসে ছড়িয়ে পড়ার গতি বেড়েছে। অর্থাৎ সে ক্রমশ বাড়ছে। বস্তুত, সূচনা পর্বে যে-পরিমাণ শক্তি মহাকাশে ছড়িয়েছিল, তা রূপান্তরিত হয়ে গ্রহ, নক্ষত্র তৈরি করেছে। তাই শক্তির পরিমাণ কমেছে। সে-দিক থেকে গতিবেগ কমে আসার কথা। সেই হিসেবের ভিত্তিতে ধরে নেওয়া হয়েছিল, স্ফীতি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছলে মহাবিশ্বে থাকা বস্তুসমূহের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সঙ্কোচন শুরু হবে এবং ফের ছোট হতে থাকবে ব্রহ্মাণ্ড। কিন্তু অধ্যাপক রায়চৌধুরী বলছেন, মহাবিশ্বে এমন কিছু আছে, যার ফলে আকর্ষণের পরিবর্তে বিকর্ষণ হচ্ছে। তবে সেই বিকর্ষণের কারণ অজানা।

মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, ব্রহ্মাণ্ডের এই ক্রমশ বেড়ে চলার শেষ কোথায়? সেই রহস্যের উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Earth universe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE