শিল্প-খরার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং রাস্তা সম্প্রসারণে জমির সমস্যা বাধা তো বটেই। এমনকী দূষণ নিয়ন্ত্রণরও ব্যাহত হচ্ছে জমির অভাবে। যেমন বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। জমি অধিগ্রহণে সমস্যার জন্যই সেখানে ছাইয়ের দূষণ ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জাতীয় পরিবেশ আদালতে জানালেন রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের আইনজীবী। নিগমের কৌঁসুলির এই যুক্তি অবশ্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে আমল পায়নি। বিচারপতি প্রতাপ রায় সোমবার নিগমকে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জানান, তার মধ্যে ছাইয়ের দূষণ বন্ধ করতে হবে। নইলে বিদ্যুৎ ইউনিট বন্ধ করা হবে। বিচারপতি রায়ের মন্তব্য, “এখানে জমি অধিগ্রহণ করতে গেলেই শাসক দল আন্দোলন করবে। জমি অধিগ্রহণ হবে কী করে!”
আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ছাই ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেই ছাই মিশছে স্থানীয় চন্দ্রভাগা নদীর জলেও। এর ফলে জল দূষিত হয়ে যাচ্ছে। আবার হাওয়ায় সেই ছাই মেশায় ঘটছে বায়ুদূষণও। সব মিলিয়ে এলাকার পরিবেশ এবং বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল পরিবেশ আদালত।
নিগমের আইনজীবী সপ্তাংশু বসু এ দিন পরিবেশ আদালতে জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছাই জমানোর ‘অ্যাশ পন্ড’ বা পুকুর ভরে গিয়েছে। কিন্তু জমি-সমস্যার জন্য ছাই জমানোর নতুন পুকুর তৈরি করা যাচ্ছে না। সপ্তাংশুবাবু জানান, ২০০৯ সালে ছাই জমানোর পুকুর তৈরির জন্য সরকারের কাছে জমি চাওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে সরকার কিছু জমি দিয়েছে। কিন্তু সেই জমির মাঝখানে ৩-৪ জন পাট্টাদার রয়েছেন। তাঁরা জমি ছাড়ছেন না। ওই ৩-৪ জনের জমি অধিগ্রহণ না-করায় পুরো প্রকল্পটি আটকে রয়েছে।
নিগমের বক্তব্য শোনার পরে পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় এবং পি সি মিশ্রের বেঞ্চ এ দিন নির্দেশ দিয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ছাই ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতেই হবে। এই ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে চন্দ্রভাগা নদীর জলদূষণ নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।