Advertisement
১১ মে ২০২৪
রিপোর্ট দিল হু

দেশের দূষণ-মানচিত্রে দ্বিতীয় হাওড়া, কলকাতা তিন নম্বরে

প্রায় তিন দশক আগেই চিহ্নিত করা হয়েছিল ভয়ঙ্কর দূষিত শহর হিসেবে। রাজ্যে প্রথম বায়ুদূষণ মাপাও শুরু হয় সেখানে। কিন্তু আজও দূষণের ছবিটা বদলায়নি হাওড়ায়! বুধবার বায়ু দূষণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সর্বশেষ রিপোর্টে প্রকাশিত দেশের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় হাওড়া। দিল্লির পরেই! পিছিয়ে নেই হাওড়ার ‘যমজ ভাই’ কলকাতাও। দেশের মহানগরীগুলির মধ্যে দূষণে তৃতীয় হয়েছে সে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

প্রায় তিন দশক আগেই চিহ্নিত করা হয়েছিল ভয়ঙ্কর দূষিত শহর হিসেবে। রাজ্যে প্রথম বায়ুদূষণ মাপাও শুরু হয় সেখানে। কিন্তু আজও দূষণের ছবিটা বদলায়নি হাওড়ায়! বুধবার বায়ু দূষণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সর্বশেষ রিপোর্টে প্রকাশিত দেশের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় হাওড়া। দিল্লির পরেই! পিছিয়ে নেই হাওড়ার ‘যমজ ভাই’ কলকাতাও। দেশের মহানগরীগুলির মধ্যে দূষণে তৃতীয় হয়েছে সে।

হু-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, কলকাতার বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ সহনমাত্রার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। একই পরিস্থিতি হাওড়াতেও। দিল্লির ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অনুমিতা রায়চৌধুরী জানান, হু-এর জনস্বাস্থ্য নীতি অনুযায়ী বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার বার্ষিক গড় সহনমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০ মাইক্রোগ্রাম। সেখানে কলকাতায় তার মাত্রা ৪৩ এবং হাওড়ায় ৪৭। তিনি বলেন, “ফলে শ্বাসনালি ও ফুসফুসের রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও বেশি।”

বিশ্বের যে ১৬০০টি শহরের উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়েছিল হু, তাদের মধ্যেও সবার উপরে রয়েছে নয়াদিল্লি। যা কি না তীব্র ধোঁয়াশার জন্য কুখ্যাত বেজিংকেও হার মানিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী দিল্লির বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১৫৩ মাইক্রোগ্রাম। যদিও হু-র এই রিপোর্টকে পক্ষপাতগ্রস্ত বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের বায়ু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। হু-র এই দাবিকেই মানতে নারাজ তারা।

গত অক্টোবরে হু-র রিপোর্টে কলকাতা-হাওড়ার দূষণের ছবিটা প্রকাশ পেয়েছিল। বলা হয়েছিল, মাত্রাতিরিক্ত দূষণে ক্যানসার বা শ্বাসনালির রোগের প্রকোপ বাড়বে রাজ্যে। কিন্তু অভিযোগ, সেই দূষণ-চিত্রে লাগাম টানার কোনও চেষ্টাই নেই প্রশাসনের। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, রোগের প্রকোপ তো বাড়বেই, দূষণ দৌড়ে অদূর ভবিষ্যতে দিল্লিকেও টপকে যেতে পারে কলকাতা-হাওড়া।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, কলকাতা ও হাওড়ায় সবচেয়ে বেশি দূষণ ছড়ায় গাড়ি থেকে। অন্যান্য শহরের চেয়ে কলকাতায় রাস্তার পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু গাড়ি বেশি। ফলে ব্যস্ত সময়ে যানজট বাড়ে, কমে গাড়ির গতি। “গাড়ির গতি কম থাকলে দূষণ বাড়বে” এমনটাই বলছেন এক পরিবেশবিদ। শুধু তাই নয়, বাইরে থেকে যে সব মালবাহী লরি ঢোকে, তা থেকেও দূষণ ছড়ায় বলে অভিযোগ। পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রেই ওই গাড়িগুলির দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র থাকে না। তা তেমন ভাবে পরীক্ষাও হয় না। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “মালবাহী লরি থেকে দূষণ কলকাতার বড় বিপদ। এর সঙ্গেই জুড়ে গিয়েছে নির্মাণকাজ থেকে ছড়ানো দূষণ। শহর ও শহরতলির আশপাশে একের পর এক বহুতল নির্মাণ চলছে। সেখান থেকে বালি, সিমেন্ট বা কংক্রিটের গুঁড়ো বাতাসে মিশছে। তা ঢুকছে মানুষের শরীরে। নির্মাণ কাজ চলার সময়ে তা ঢেকে রাখাই নিয়ম। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই তা মানা হয় না বলে অভিযোগ। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, “দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা পরিবেশ দফতর এ রাজ্যে প্রায় নিষ্ক্রিয়।” তিনি জানান, কলকাতা বা হাওড়া যে দূষণের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে, তা জানতে হু-র রিপোর্ট পড়তে হচ্ছে। এ রাজ্যে তো তেমন ব্যবস্থাই নেই।

অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই দূষণ কমাতে নানা পরিকল্পনা প্রশাসন নিয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলেই দূষণ বাড়ছে। কেমন সেই পরিকল্পনা? বিশ্বজিৎবাবু জানান, হাওড়ায় ফাউন্ড্রি শিল্প এবং নানা ধরনের কুটিরশিল্প ছিল। তা থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে, এ কথাও জানা ছিল। ঠিক হয়, দূষিত শিল্পগুলিকে শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু নানা কারণেই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। “ঘটা করে ফাউন্ড্রি পার্ক গড়ার কথা বলা হয়েছিল। তা হল কই!”— বললেন এই প্রাক্তন পর্ষদ-কর্তা।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, হাওড়ার দূষণ যে বেশি, তার প্রভাব কলকাতাতেও পড়তে বাধ্য। কারণ, দু’টি শহর প্রায় লাগোয়া। হাওয়ায় ভেসে হাওড়ার দূষিত ধূলিকণা মহানগরে হাজির হবে। শহরেরই এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলেন, “হাওড়ার বিপদ যে আমাদেরও আশঙ্কার কারণ, সেটা আমাদের বুঝতেই হবে।”

এ শহরের দূষণ চিত্রটা এমন কেন? দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার বক্তব্য, দূষণ নিয়ে পর্ষদের উৎকন্ঠা থাকলেও নানা কারণে সব সময় আইন লাগু করা যায় না। কিন্তু সেই বেড়াজালের মধ্যে থেকেও দূষণে লাগাম টানার চেষ্টা করেন তাঁরা। বিভিন্ন মনিটরিং স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কিন্তু সেই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর?

প্রশ্ন সেখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kuntak chattyopadhyay who pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE