Advertisement
E-Paper

সারগাছিতে বিজ্ঞান অনুশীলন কেন্দ্র

সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা অনেক বিষয় অলৌকিক বা যাদু বলে মনে হয়। তার নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে সুনির্দিষ্ট কার্য-কারণ। আমজনতা থেকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সামনে সেই ‘অলৌকিক’ ঘটনার কার্য-কারণ বিশ্লেষণ করে বিভ্রম কাটাতে আজ, শনিবার দুপুরে সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে ‘স্বামী অখণ্ডানন্দ সায়েন্স সেন্টার’-এর দ্বারোদ্ঘাটন হতে চলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
চলছে হাতেকলমে বিজ্ঞানের পাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে হাতেকলমে বিজ্ঞানের পাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা অনেক বিষয় অলৌকিক বা যাদু বলে মনে হয়। তার নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে সুনির্দিষ্ট কার্য-কারণ। আমজনতা থেকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সামনে সেই ‘অলৌকিক’ ঘটনার কার্য-কারণ বিশ্লেষণ করে বিভ্রম কাটাতে আজ, শনিবার দুপুরে সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে ‘স্বামী অখণ্ডানন্দ সায়েন্স সেন্টার’-এর দ্বারোদ্ঘাটন হতে চলেছে। সায়েন্স সেন্টারের নাম ‘স্বামী অখণ্ডানন্দ সায়েন্স সেন্টার’। ওই সায়েন্স সেন্টারের দু’টো ভাগ রয়েছে। একটিতে রয়েছে নানান ‘অলৌকিক’ ঘটনার প্রদর্শনী ও তার কার্য-কারণের ব্যাখ্যা। এই বিভাগটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মায়ার অতীত সম্বোধি’। তার পাশের ঘরে রয়েছে ‘বিজ্ঞান অনুশীলন কেন্দ্র’। রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও কারিগরি দফতরের দেওয়া ৪০ লক্ষ টাকায় ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামস (এনসিএসএম)-এর সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে এই বিজ্ঞান বিভাগ। আজ সেই প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতির মিউজিয়াম সংক্রান্ত উপদেষ্টা সরোজ ঘোষ। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা এনসিএসএম-এর ডিরেক্টর জেনারেল-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

১১৭ বছর আগে ১৮৯৭ সালে স্বামী অখণ্ডানন্দ মহারাজ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রথম শাখা প্রতিষ্ঠা করেন সারগাছিতে। তার দু’ বছর পর ১৮৯৯ সালে কয়েক জন দুঃস্থ ও অনাথ শিশু নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বিদ্যালয়। জন্ম সার্ধশতবর্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই বিজ্ঞান বিভাগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বামী অখণ্ডানন্দ সায়েন্স সেন্টার’। সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক বিশ্বময়ানন্দ বলেন, “আপাত অলৌকিক ঘটনার পিছনে রয়েছে কার্য-কারণ। দৃষ্টিগত অবস্থানের ভিন্নতার জন্য একই জিনিস বিভিন্ন রূপে দেখা যায়। ক্রমাগত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়। তখন মানুষ পরম লক্ষ্যে পৌঁছয়। তার জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে সংযোগ। সেই পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে ‘স্বামী অখণ্ডানন্দ সায়েন্স সেন্টার’-এর ‘মায়ার অতীত সম্বোধি’ শাখাটি। সেই কারণেই এমন নামকরণ।”

‘মায়ার অতীত সম্বোধি’ শাখায় ১৭টি প্রকল্পের প্রদর্শনী রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পের পাশেই নাতিদীর্ঘ ব্যাখা লেখা। সঙ্গে রয়েছে স্বামী বিবেকান্দ ও ভগিনী নিবেদিতার বাণী। এ ভাবেই বিজ্ঞানের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার মেল বন্ধনের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমেই রয়েছে বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ জল সঙ্কটের আশঙ্কা নিয়ে একটি প্রকল্প। সেখানে দেখানো হয়েছে এক জন ভারতীয় সারা জীবনে এক হাজার কোটি লিটার জল ব্যবহার করে। তার মধ্যে শতকরা ৫ ভাগ আসে সরাসরি জল থেকে। বাকি ৯৫ ভাগ আসে পরোক্ষ খাদ্য খাবার ও ফলমূল থেকে। যেমন আলু ও বার্লির কথা ধরা যাক। এক কেজি আলু চাষ হতে প্রয়োজন হয় ২৯০ লিটার জল। অন্য দিকে যব উৎপাদন ও তা থেকে এক কেজি বার্লি পেতে খরচ হয় ১৫০০ লিটার জল। ডেমনস্ট্রেটর মৃদুল ঘোষ বলেন, “অথচ কত ভাবেই না পানীয় জলের অপচয় হয়।” সেই কারণে প্রকল্পের পাশে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী, “নিজের কর্ম দোষে শাস্তি পাই, কিন্তু ঈশ্বরকে দোষ দিই কেন?”

দু’টো সমান্তরাল আয়নার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে অতলস্পর্শী কুয়ো। সেই কুয়োর কোনও তল পাওয়া যাচ্ছে না। পাশেই বিবেকানন্দের বাণী, “অতীত ঘটনার ক্রমের দিকে নিরন্তর ফিরে ফিরে তাকানোর অভ্যেসই আমাদের মুক্তির সন্ধান করতে ও আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে বাধা সৃষ্টি করে।” ‘কুহেলিভেদী সত্য’ শীর্ষক একটি প্রকল্প তৈরি হয়েছে কয়েকটি অদৃশ্য আয়নার সাহায্যে। সেখানে থালায় সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ফল। সেই থালার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালে মনে হবে দেহহীন কোনও ব্যক্তির কেবল মুণ্ডু ফল খাচ্ছে। ওই যাদুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে বিবেকানন্দের বাণী--“আমাদের মধ্যে ও সত্যের মধ্যে কুহেলির ব্যবধান তৈরি হয় বলেই ভুল তৈরি হয়।” এক কেজি ওজনের একটি অ্যালুমিনিয়ামের চাটু শূন্যে ভাসছে। পরিবর্তনশীল চৌম্বক শক্তির সাহায্যে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। থ্রিডি, নিউটনের তৃতীয় সূত্রের প্রয়োগ- সহ মজাদার বিভিন্ন প্রদর্শনী রয়েছে ওই সায়েন্স সেন্টারে। বিশ্বময়ানন্দ বলেন, “এখানে ছাত্ররা নিজেরাই প্রজেক্ট তৈরি করবে। তাদের মধ্যে জানার আকাক্ষা তৈরি করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

science centre sargachi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy