স্বপ্না বর্মন। —ফাইল চিত্র।
তাঁর জুতো বিশেষভাবে বানাতে হয়। এমনিতেই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে জুতো বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। ব্যাতিক্রম নন স্বপ্নাও। কিন্তু স্বপ্নার জুতো যেন আরও একটু স্পেশ্যাল। যা নিয়ে মোটেও তাড়াহু়ড়ো সম্ভব নয়। অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই তৈরি হয়েছে স্বপ্নার জুতো। এ বার এশিয়ান গেমসের আগে সেই পুরনো জুতোর উপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে স্বপ্নাকে। নতুন জুতো জোটেনি তাঁর।
কেন বিশেষভাবে তৈরি হয় স্বপ্নার জুতো?
স্বপ্নার পা স্বাভাবিক মানুষের থেকে একটু আলাদা। ওর দু’পায়েই পাঁচটির জায়গায় ছ’টি করে আঙুল। যে কারণে সাধারণ শেপের জুতো ওর পক্ষে পরা সম্ভব হয় না। আর সেই জুতো পরে যদি নামতে হয় অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে তা হলে তো আরই সম্ভব নয়। স্বপ্নার ইভেন্ট হল হেপ্টাথেলন। হেপ্টাথেলনের একটি হাই জাম্প। তার জন্য দরকার হয় বিশেষ ধরনের জুতো। যা বাকি হেপ্টাথেলটরা দোকান থেকেই কিনে নিতে পারেন। স্বপ্না বর্মন বলেন, ‘‘আমার সব থেকে বড় দুশ্চিন্তার কারণ আমার জুতো। হাই জাম্পের জন্য যে জুতো দরকার সেটা আমার কাছে নেই।’’
২১ বছরের স্বপ্না আগামী সপ্তাহেই নামবেন ট্র্যাকে। লক্ষ্য অবশ্য দেশের জন্য পদক নিয়ে আসা। কিন্তু ভাবাচ্ছে জুতো। একটাই চিন্তা, জুতো সঙ্গ দেবে তো? স্বপ্না বলেন, ‘‘আমি কখনও জুতো বানাতাম না। কিন্তু একটা বিশেষ ধরনের জুতোর মডেল ছিল যা আমি ব্যবহার করতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল সেই মডেলটি আর পাওয়া যায় না ভারতে। আমার একপাটি সেই মডেলের পুরনো জুতো রয়েছে। জাকার্তায় সেটা দিয়েই কাজ চালাতে হবে।’’
আরও পড়ুন
বাবার ভ্যান ব্রেক কষেছে, জীবনের ট্র্যাকে স্বপ্নের সোনাজয়ী লাফ ‘পুচু’র
জলপাইগুড়ির গ্রাম থেকে উঠে আসা স্বপ্না বর্মনের এই পর্যন্ত পৌঁছনোর লড়াইটাই ছিল অনেক কঠিন। একটা সময় ভেবেছিলেন সব ছেড়ে দেবেন। দিয়েওছিলেন। কিন্তু ফিরে আসতে হয় শেষ পর্যন্ত খেলার টানে। দুই পায়ে একটি করে বেশি আঙুল হওয়ায় পায়ের সাইজও স্বাভাবিকের থেকে বড়। যে কারণে জুতোও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিক মাপের জুতো পরলে পায়ে লাগে দৌড়তে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড দেখে একটা পাওয়া গিয়েছিল তাও বন্ধ হয়ে গেল। অনেকেই উপদেশ দিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচার করে পায়ের আঙুল বাদ দিয়ে দিতে। কিন্তু তা করতে চাননি স্বপ্না। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘এটা সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আমি বাকি জীবনটা এই নিয়েই কাটাতে চাই। অনেকেই বলেছিল বাদ দিতে। আপাতত আমি তা নিয়ে ভাবছি না। এখন একমাত্র লক্ষ্য এশিয়ান গেমস।’’
আরও পড়ুন
সোনার ছেলে সৌরভ এখনও চাষে যায় বাবার সঙ্গে
স্বপ্নার কোচ সুভাষ সরকার খুব ভাল করেই জানেন সমস্যাটা। চেষ্টাও কম করেননি। তিনি বলেন, ‘‘এই ছোট্ট একটা বিষয় কত বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে জানা ছিল না। সব কিছু চেষ্টা করে দেখে নিয়েছি। স্থানীয় জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থার জুতোও দেখা হয়েছে কিন্তু তার মান খুব খারাপ। মান পড়ে যায় খেলার। প্যারা-অ্যাথলিটদের জুতোও দেখেছি। সেটাও ওর পায়ের জন্য ঠিক নয়।’’ এই এক অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে শুধু মানসিক জোড়েই লড়ে যাচ্ছেন স্বপ্না। চোট ছিটকে দিয়েছিল প্রায় এক বছর। গত বছরই ফিরেছেন ট্র্যাকে। ফিরেই জায়গা করে নিয়েছেন এশিয়ান গেমসে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। হেপ্টাথেলনে স্বপ্নার সেরা স্কোর ৫৯৪২। এর কাছে পৌঁছতে পারলেই পদক নিশ্চিত করে ফেলতে পারবেন স্বপ্না। তাই জুতোর সমস্যা ভুলেই ঝাঁপাতে চাইছেন এই বঙ্গকন্যা।
(অলিম্পিক্স, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস হোক কিংবা ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ - বিশ্ব ক্রীড়ার মেগা ইভেন্টের সব খবর আমাদের খেলা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy