Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
গণ সংবর্ধনায় আপ্লুত টিম অস্ট্রেলিয়া

যেন এক অপার্থিব মুহূর্ত: জনসন

শহর মেলবোর্নের কেন্দ্রস্থল এ রকম জমাট ভিড় সাধারণত ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার্স ডে-র মতো পার্বণ কিংবা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফর্মুলা ওয়ানের মতো এ দেশের অন্য খেলার ইভেন্টের সময় দেখতে অভ্যস্ত। জাতীয় ক্রিকেট দলের প্লেয়ারদের চাক্ষুষ করতে ফেডারেশন স্কোয়ারে এত অস্ট্রেলিয়ানের ঢল হয়তো আজই প্রথম! তবে এঁরা এক-এক জন ব্যাগি গ্রিন তো আর নিছক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার নন, মাইকেল ক্লার্ক আর তাঁর প্রত্যেক সতীর্থ এখন অস্ট্রেলিয়ার এক-এক জন জাতীয় বীর।

বিশ্বজয়ের উৎসবে! মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কোয়্যারে চ্যাম্পিয়নরা। সোমবার। ছবি: এএফপি

বিশ্বজয়ের উৎসবে! মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কোয়্যারে চ্যাম্পিয়নরা। সোমবার। ছবি: এএফপি

চেতন নারুলা
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৪:২৬
Share: Save:

শহর মেলবোর্নের কেন্দ্রস্থল এ রকম জমাট ভিড় সাধারণত ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার্স ডে-র মতো পার্বণ কিংবা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফর্মুলা ওয়ানের মতো এ দেশের অন্য খেলার ইভেন্টের সময় দেখতে অভ্যস্ত। জাতীয় ক্রিকেট দলের প্লেয়ারদের চাক্ষুষ করতে ফেডারেশন স্কোয়ারে এত অস্ট্রেলিয়ানের ঢল হয়তো আজই প্রথম! তবে এঁরা এক-এক জন ব্যাগি গ্রিন তো আর নিছক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার নন, মাইকেল ক্লার্ক আর তাঁর প্রত্যেক সতীর্থ এখন অস্ট্রেলিয়ার এক-এক জন জাতীয় বীর।

সোমবার তাই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার টিমের গণ-সংবর্ধনা ঘিরে প্রথম বিশ্বের এক মেগা শহরেও কাজের দিনের দুপুরে যে রকম মানুষের ঢল নেমেছিল, তা স্থানীয় অনেক অস্ট্রেলীয়ই বলছেন, তাঁদের দেশে নাকি কোনও খেলায় আগে দেখা যায়নি। শুধুই কি সাধারণ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটভক্তরা আবেগে ভাসছিলেন? রবিবার সারা রাত শ্যাম্পেনে ভেসে কাপ-জয়ের উৎসব পালন করা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের জনাকয়েকের মধ্যে পরের দিন দুপুরেও একটুআধটু ঝিমোনো হাবভাব থাকলেও ওই রকম জনপ্লাবন দেখে তাঁরাও পর মুহূর্তে যেন ছিলে ছেড়া ধনুক! চব্বিশ ঘণ্টাও না পেরনো বিশ্বজয়ী ক্রিকেটারদের মধ্যে কয়েক জন তো উত্তেজনায় নিজেদের নিরাপত্তাটত্তা বেমালুম ভুলে মঞ্চ থেকে সটান দর্শকদের ভিড়ে মিশে যেতেও পিছপা হননি।

পার্টি চলছে রাতভর।

সেমিফাইনাল-ফাইনালে দুরন্ত পারফর্ম দেখানো মিচেল জনসন আপ্লুত হয়ে বলে দিলেন, ‘‘সব কিছু মিলেজুলে এই মুহূর্তটাকে অপার্থিব দেখাচ্ছে! কালকের রাতের টুকরো ফ্ল্যাশব্যাক, টুর্নামেন্টে আমাদের খেলার কিছু রিপ্লে, এত মানুষের জমায়েত, আমাদের জন্য এত সমর্থন, ভালবাসা দেখে কেমন যেন মনে হচ্ছে এ সব সত্যিই তো? না কি স্বপ্ন! নিজের দেশে বিশ্বসেরা হওয়ার অভিজ্ঞতার চেয়ে ভাল কিছু আর হয় না আজ বুঝলাম।’’

গর্বের চুম্বন। কাপ হাতে জনসন।

একই সঙ্গে বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য টিম অস্ট্রেলিয়া কতটা নির্মম ছিল সেটা আবার বলেছেন ব্র্যাড হাডিন। ‘‘ফাইনালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটাররা যদি স্লেজিংয়ের শিকার হয়ে থাকে তা হলে ওদের সেটা প্রাপ্যই। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ওদের সঙ্গে বিশ্বকাপ ম্যাচে ওরাও মাঠে আমাদের অনেক সুমধুর কথা বলেছিল। সত্যি বলতে, টুর্নামেন্টে ওদের দেশে আমাদের সাত দিনই অনেক সুমধুর কথা শুনতে হয়েছিল। কাল তাই ফাইনালের আগে টিমমিটিংয়ে আমি বলেছিলাম, আমি কিন্তু চুপ থাকব না। ওরা আবার কিছু বললে আমি এ বার সব বার করে ফেলব!’’

ড্রেসিংরুমে কাপমুগ্ধ ম্যাক্সওয়েল।

ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট মিচেল স্টার্কের গোটা বিশ্বকাপ জুড়ে ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলিং করার রহস্য আবার ফাঁস করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কোচ ক্রেগ ম্যাকডারমট। সাতাশিতে বর্ডারের অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপজয়ী টিমের অন্যতম পেসারের কথায়, ‘‘ভাল গতি, অনেক দেরিতে সুইং করানো আর অসাধারণ লেংথে ধারাবাহিক বোলিং—এই তিন গুণে স্টার্ক গোটা টুর্নামেন্টে মারাত্মক হয়ে উঠেছিল। তবে আসল অস্ত্রটা ইয়র্কার। যা ও নতুন বলের মতোই পুরনো বলে, ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে, ডেথে—যখন ইচ্ছে তখন করে ব্যাটসম্যানকে পুঁতে দিয়েছে। বারোর মধ্যে ন’টা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে যেখানে ব্যাটসম্যান ছিল এ বারের বিশ্বকাপে কোনও রেকর্ডের মালিক।’’

সমর্থকদের মাঝে বিদায়ী অধিনায়ক।

শেন ওয়াটসন অস্ট্রেলিয়ার ২০০৭ বিশ্বকাপজয়ী টিমেও ছিলেন। নিজের দুটো কাপ জয়ের তুলনাকে অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার দুই সন্তানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘‘সে বার আর এ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার তুলনাটা অনেকটা নিজের দুটো সন্তানের মধ্যে তুলনা করার মতোই। যদিও আমার কোনও দ্বিতীয় সন্তান নেই। প্রথম সন্তান সব সময় স্পেশ্যাল। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, আমি দারুণ ভাগ্যবান, এমন একটা সময় জন্মেছিলাম যে, নিজের দেশে বিশ্বকাপ জেতা দলে থাকতে পেরেছি। অপার্থিব মুহূর্ত উপভোগ করছি।’’

সেলফি তোলায় মজে ওয়াটসন।

ফাইনালে প্রতিবেশী দেশকে এতটাই একপেশে হারিয়েছে ক্লার্ক বাহিনী যে, নিউজিল্যান্ডের কাগজও হেডিংয়ে ম্যাকালামের দলকে ‘দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ বলেও সেটার সংক্ষিপ্তসার করেছে ‘গোট’— জিওএটি! প্রশংসার মোড়কে খোঁচা।

ছবি: টুইটার, গেটি ইমেজেস, এএফপি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE