Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গৌরব নিয়ে বিদায়, বলে গেলেন বিন্দ্রা

জীবনের শেষ গুলিটা ছুড়েই বিরক্তিতে গ্লাভস খুলে ফেললেন। তার পর তাকালেন স্কোর বোর্ডের দিকে। বোঝাই গেল আফসোসে ডুবে গিয়েছেন। মিক্সড জোনে তো কথাই বলতে চাইছিলেন না অভিনব বিন্দ্রা। চূড়ান্ত হতাশ। অনেক অনুরোধে তাঁর মুখ থেকে বের হল শুধু কয়েকটা লাইন।

.

.

রতন চক্রবর্তী
রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৯
Share: Save:

জীবনের শেষ গুলিটা ছুড়েই বিরক্তিতে গ্লাভস খুলে ফেললেন। তার পর তাকালেন স্কোর বোর্ডের দিকে। বোঝাই গেল আফসোসে ডুবে গিয়েছেন।

মিক্সড জোনে তো কথাই বলতে চাইছিলেন না অভিনব বিন্দ্রা। চূড়ান্ত হতাশ। অনেক অনুরোধে তাঁর মুখ থেকে বের হল শুধু কয়েকটা লাইন। ‘‘শেষটা আরও ভাল হলে ভাল লাগত। পদক পেলে তো ভাল লাগেই। কিন্তু যেখানে শেষ করলাম সেটাও যথেষ্ট গৌরবের। এ রকম মঞ্চে সব কিছুই ঘটতে পারে। মাথা উঁচু করেই বিদায় নিচ্ছি।’’

অলিম্পিক্সে ভারতের একমাত্র ব্যক্তিগত সোনার মালিক সোমবার নিজের শেষ গেমসে ফাইনালে উঠেও বিদায় নিলেন কিছুটা নাটকীয় মূহূর্ত তৈরি করে। শ্যুট অফে।

অভিনব পদক পাবেন এবং তাঁর বিদায় বেলা স্মরণীয় করে রাখা হবে, এই আশায় দিওদরা শ্যুটিং রেঞ্জে ভারতীয় শ্যুটাররা ভিড় করেছিলেন পতাকা নিয়ে। কে নেই সেখানে? গগন নারাঙ্গ থেকে জিতু রাই। হিনা সিধু থেকে অয়নিকা পাল— সবাই। দর্শকাসনেও প্রচুর ভারতীয়। তাঁদের হাতেও ছিল জাতীয় পতাকা। অভিনবের জন্য সমর্থনের জোরটা ছিল এতটাই যে, সোনাজয়ী ইতালির নিকোলো ক্যাম্প্রিয়ানি সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বললেন, ‘‘অভিনব খুব বড় শ্যুটার। কিন্তু এখানেও যে ওর এত ফ্যান আছে জানা ছিল না। এক একটা সময় ওর জন্য চিৎকারটা এত জোরে হচ্ছিল যে, ধৈর্যচ্যুতি ঘটছিল।’’

অভিনব প্রথম দিকে উঠে এসেছিলেন দু’নম্বরে। তিন, চার, দুই— ওঠা নামা করতে করতে হঠাৎ-ই ছন্দপতন। ষোলো রাউন্ডে এসে টাই হয়ে গেল। ইউক্রেনের সের্হিই কুলিশের সঙ্গে টাই হয়ে গেল অভিনবের। দু’জনেরই পয়েন্ট ১৬৩.৮। আর তার পরই তৈরি হল উত্তেজনা।

অভিনবের শট নেওয়ার একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। যা দিয়ে দূর থেকে তাঁকে চেনা যায়। অভিনব এবং কুলিশকে একটি করে গুলি ছুড়তে বলা হল। অভিনব স্কোর করলেন ১০ আর ইউক্রেনের কুলিশ মারলেন ০.৫ বেশি। ১০.৫। হতাশার বিদায় হয়তো একেই বলে! জীবনের শেষ অলিম্পিক্সে সতেরো রাউন্ডেই শেষ অভিনবের লড়াই। অবসর ঘোষণা করে দেওয়া চ্যাম্পিয়নের শ্যুটিং জীবনও। তাঁর চতুর্থ হওয়া মনে করাল মিলখা সিংহ, পিটি উষা এবং জয়দীপ কর্মকারকে।

আইওএ থেকে সম্ভাব্য পদকজয়ীদের যে তালিকা তৈরি হয়েছিল, তাতে শ্যুটিং থেকে পদক ধরা হয়েছিল অম্তত চারটি। অভিনব এবং গগন নারাঙ্গ— দুই অলিম্পিক্স পদকজয়ীকেই রাখা হয়েছিল সেই তালিকায়। এক জনের মুঠিতে বেজিং থেকে আনা সোনার পদক। অন্য জনের লন্ডন থেকে আনা ব্রোঞ্জ। জিতু-হিনারা হতাশ করার পর প্রথম পদকের আশায় এই দু’জনের দিকেই তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ।

কিন্তু দু’জনের দিনের শুরুটা হল দু’রকম ভাবে। পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে গগন ফাইনালেই উঠতে পারলেন না। সেখানে অভিনব বিন্দ্রা ফাইনালে গেলেন সাত নম্বর হয়ে। কোয়ালিফিকেশনের ছয় রাউন্ডে শুরুর তিনটি রাউন্ড ভাল না করলেও শেষ দিকে সামলে দিয়েছিলেন তিনি। গগনের আবার শুরুটা ভাল হয়েছিল। তবে পরের দিকে একেবারেই খারাপ করলেন। ৬২১.৭ পয়েন্ট তুলে তেইশে শেষ করলেন প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়ে। চেন্নাইয়ের তারকা শ্যুটার এই ইভেন্টেই গত লন্ডন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন। গগনের অবশ্য রিওয় আরও দু’টি ইভেন্ট আছে। ৫০ মিটার রাইফেল প্রোন এবং ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশন।

অভিনবের সেখানে এই একটাই ইভেন্ট। রিও-তে নামার আগে অভিনব দীর্ঘদিন পরিবার ছেড়ে বিদেশে ট্রেনিং নিয়েছেন। ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ রাখতেন না। যেন শেষ অলিম্পিক্স স্মরণীয় করে রাখার তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। কিন্তু হল না মধুরেণ সমাপয়েত। বিদায় নিতে হল পদকশূন্য অবস্থায়।

শ্যুটিং-এর এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘আথেন্স অলিম্পিক্সে এ ভাবেই শেষ মুহূর্তে ছিটকে গিয়েছিল ও। সেই সময় শেষ দিকের রাউন্ডে চাপ নিতে পারত না। যে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আলাদা মানসিক ট্রেনিং নিয়েছে। তাতে অনেকটাই শুধরে গিয়েছিল। কিন্তু এখানে আবার সেটা হল দেখে খারাপ লাগছে।’’

সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ নেওয়ার জন্য ইতালি, ইউক্রেন বা রাশিয়ার শ্যুটাররা যখন ভিকট্রি স্ট্যান্ডে উঠছেন তখন নীরবে বেরিয়ে গেলেন অভিনব। কারও দিকে না তাকিয়ে। পারিপার্শ্বিকে তখন তাঁর জীবনের শেষ গুলির ‘বিদ্রোহ’ নয়, জীবনের শেষ অলিম্পিক্সের ব্যর্থতা নয়, আলোচনার পুরোটাই এক নিপাট ভদ্র, বিতর্কহীন চরিত্রের চিরতরে বিদায় নেওয়া।

সোনা-রুপো-ব্রোঞ্জের পদক মূল্যের চেয়ে যার দাম কম কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhinav Bindra Rio Olympics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE