Advertisement
E-Paper

মলিনার বিরুদ্ধে বদলার ম্যাচের আগে নিজের মেজাজে হাবাস

গর্বের রাজপ্রাসাদ এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপ। কান পাতলে স্রেফ হাহাকার আর হাহাকার! টিম হোটেলের লবিতে সাদা শার্ট-কালো প্যান্টের পুরোদস্তুর ফর্ম্যাল আউটফিটে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে দেখলে অবশ্য সেটা বোঝার উপায় নেই।

প্রীতম সাহা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৮
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

গর্বের রাজপ্রাসাদ এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপ। কান পাতলে স্রেফ হাহাকার আর হাহাকার!

টিম হোটেলের লবিতে সাদা শার্ট-কালো প্যান্টের পুরোদস্তুর ফর্ম্যাল আউটফিটে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে দেখলে অবশ্য সেটা বোঝার উপায় নেই। বরাবরের চাঁচাছোলা, স্পষ্ট বক্তা। চোখ টিপে মন চুরির কৌশলটাও জানেন। ভোলেননি। মস্তানি— হ্যাঁ, সেটাও সদর্পে চলছে।

এফসি পুণে সিটি কোচকে দেখলে কে বলবে, এ বারের আইএসএলে তাঁর দল যেন টাইটানিক। শুরুতে ঝাঁ-চকচকে দেখাচ্ছিল যে টিমটাকে, সেই টিমটাই ডোবার মতো অবস্থায়!

মজার ব্যাপার, শনিবার বিকেলে ঘড়িতে যখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে, মুম্বই থেকে লম্বা ফ্লাইট জার্নি করে ফিরেই সোজা টিমের প্র্যাকটিসে যোগ দিয়েছিলেন। এবং সাদা শার্টের ভাঁজের মতোই পুণে সিটি কোচের কণ্ঠস্বরের ঝাঁঝও এতটুকু তাতে টাল খায়নি। ‘‘দেখবেন এখান থেকে আমরা কিন্তু সেমিফাইনালের দিকে এগোব।’’

বছরখানেক আগে হলে হয়তো এ সব কথা হাবাসের মুখে মানাত। এখন সাত ম্যাচে ছ’পয়েন্টের পুঁজি নিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখা— স্যর হাবাস, একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না!

বরং হাবাসের প্রাক্তন টিমে তাঁর উত্তরসূরি মলিনার মুখে একেবারে ফিট লাগবে কথাগুলো। এটিকে কোচ মলিনার কোচিং-ধর্মের মতোই। দুর্বলতাকে নিয়ে অযথা টেনশন না করে তাকেই কী ভাবে শক্তি বানিয়ে ফেলা যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। হেল্ডার পস্টিগার কথাই ধরা যাক। আইএসএলের পৃথিবীতে যে কোনও কোচ যদি শুনতেন ‘টপ জেনারেল’ যুদ্ধের শুরুতেই ‘রিটায়ার্ড হার্ট’, রাতের ঘুম বলে শব্দটাই তাঁর মুছে যেত ম্যাচের আগে। অথচ কলকাতার কোচ মলিনা দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে। ঘুরছেন, ফিরছেন এবং তাঁর ‘ধীরে চলো, জয় করো’ নীতি নিয়ে সুন্দর এগিয়ে চলেছেন। হাবাসের মতো শত্রুপক্ষের ডেরায় এসে তর্জন-গর্জন নেই। প্রতি মিনিটে বুঝিয়ে চলেছেন, তিনি আলাদা। তাঁর ফুটবল-দর্শনও আলাদা।

মলিনা ও তাঁর টিমকে নিয়ে প্রতিপক্ষের পরোক্ষ ঠকঠকানিটাও ভাবা যায় না। টিমের কোচ হাবাসকে বাদ দিলে চাকচিক্যের দিক থেকে এমনিতে অন্য টিমগুলোর তুলনায় পুণের ভার কম। কোনও এক মার্সেলো নেই যিনি ভয়াবহ ফ্রি-কিকে বিপক্ষ ‘প্রাচীর’-কে কাঁপিয়ে দেবেন। কোনও মালুদা নেই যিনি নামলে বয়সকে মাথায় রেখেও সমীহের দূরবিনে দেখতে হবে। আবার এখানে কোনও হান্স মুল্ডারও পাবেন না, যিনি দৃষ্টিপথের মধ্যে থাকা মানে হাঁটাচলা, হাঁচি-কাশি সবই আপনাকে ল্যাপটপে টুকে রাখতে হবে। থাকার মধ্যে একজন মহম্মদ সিসোকো। উইকিপিডিয়ায় দেখাবে, ভদ্রলোক মালির জাতীয় দলের হয়ে ৩৪টা ম্যাচ খেলেছেন। জেরার যখন লিভারপুলে খেলতেন, তখন সেখানে। দেল পিয়েরো যখন জুভেন্তাসে, সেখানেও। আর একজন আছেন এডেল বেটে। আইএসএল ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার যাঁর ঝুলিতে প্রথম দু’বারের দু’টো ট্রফিই আছে। গোলকিপার হিসেবে এক বার এটিকে-র হয়ে চ্যাম্পিয়ন। এক বার চেন্নাইয়ানের হয়ে। এ বারও চোখে পড়ার মতো পারফরম্যান্স তাঁর। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোল বাঁচিয়েছেন পুণের হয়ে (২৬)। বেটে সবচেয়ে বেশি গোল বাঁচালে ডিফেন্সে সবচেয়ে বেশি ট্যাকল করেছেন সিসোকো (৩৩)। তবু গোল খাওয়া আটকায়নি যে। গোল হজমের লিস্টে এফসি গোয়ার পরেই হৃতিক রোশনের টিম।

আর সেই টিমের কোচ হাবাস এখন কলকাতার সাংবাদিক দেখলে ফতোয়া জারি করে দিচ্ছেন। টিম হোটেলে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা। প্র্যাকটিস দেখা-টেখা, ও সব কলকাতার সাংবাদিকদের জন্য নয়। হাবভাব এমন যেন কলকাতার মিডিয়া মানেই আস্ত এক-এক জন ‘র’ এজেন্ট!

সেই হাবাস, এটিকে স্টেডিয়ামে সাংবাদিক সম্মেলন সেরে বেরোনোর চল্লিশ মিনিট পর ড্যাং ড্যাং করে ঢুকলেন। যাতে টিম-এটিকে পুণের মেজাজ সম্পর্কেও ন্যূনতম আঁচ না পায়। দেরিতে আসার জন্য সতর্ক করা হল পুণে সিটিকে। তাতে অবশ্য ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব হাবাসের। আসলে এই হাবাসের মধ্যে প্রাক্তন পুণে সিটি কোচ ডেভিড প্লাটের ছায়া দেখা যাচ্ছে। গ্যারি লিনেকার-পল গাসকোয়েনদের সতীর্থও তো এ রকমই খুঁতখুতেঁ ছিলেন। তফাত একটাই। মলিনার জায়গায় সে দিন আইএসএল সম্রাট ছিলেন হাবাস।

তবে পুণে যতই দুর্বল টিম হোক না কেন, এটিকে সেটা মানতে নারাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রবিবারের ম্যাচকে কোয়ার্টার ফাইনালের মর্যাদা দিচ্ছেন মলিনা। জিতলেই নাকি সেমিফাইনাল অনেকটা নিশ্চিত। টিম— সেটা কী হবে, তা নিয়ে একটা ধোঁয়াশার আবহ তৈরি করে রেখেছেন তিনি। বিশেষ করে পস্টিগার প্রথম দলে থাকা নিয়ে টালবাহানা চলছেই। হাবাসের কাছে আবার এটিকে মানে আত্মসম্মানের লড়াই। যেন অদৃশ্য একটা ‘সাইন বোর্ড’ টাঙানো পুণে টিম হোটেলের বাইরে— ট্রফির দরকার নেই। কলকাতাকে হারাতে হবে! তাই লোকচক্ষুর আড়ালে গোপন প্র্যাকটিস সেরে ফেলাকে না হয় ছেড়ে দেওয়া গেল, গত সাত ম্যাচের টিম-কম্বিনেশন দেখেও সামান্যতম আন্দাজ পাওয়া যাবে না কে কোথায় খেলবেন? বুঝবেন কী, সাতটা ম্যাচে চারটে ছক। ৪-২-৩-১। ৩-৫-২। ৩-৪-৩। ৪-৫-১। তাই এটিকে-র প্রতিষেধক হিসেবে রবিবার কী চমকপ্রদ স্টাইল আমদানি করেন হাবাস, সেটা একটা রহস্য।

কিন্তু বুনো ওল থাকলে, বাঘা তেঁতুলও আবার থাকে! রাতের দিকে এটিকে সংসারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাবাসের ম্যাচ ধরে ধরে ছক পাল্টানোর ব্যাপারটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন মলিনা। প্লেয়ারদের নাকি বলে দিয়েছেন যে, পুণে কোচ যতই পজিশন নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলুন, যতই চমকপ্রদ ভাবে টিম পাল্টে-পাল্টে বিপক্ষকে ঘাবড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যান, প্রভাবিত না হতে। ফোকাসড থাকতে। রবিবার মাঠে নেমে হতভম্ব হওয়াটাকে সযত্নে বাদ দিতে হবে। শুধু একটাই দুশ্চিন্তা। বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামের মাঠ। সম্ভবত আইএসএলের ক্ষুদ্রতম মাঠ। বাউন্সও অসমান। আর টার্ফ বাউন্সি বলে বল নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন।

হাবাসের মেজাজ আর মস্তানিকে ছাপিয়ে এটাই না আজ অজানা আতঙ্ক হয়ে ছুটে আসে মলিনার টিমের দিকে!

antonio lópez habas ISL ATK vs Pune
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy