Advertisement
E-Paper

একমাত্র কুম্বলের সঙ্গেই এই অশ্বিনের তুলনা করব

আমাদের দেশে বোলারদের মধ্যে খাঁটি ম্যাচ-উইনার খুব কম এসেছে। তবে আজ নাগপুর টেস্টে ওর বোলিং দেখে উঠে বলতেই হচ্ছে, অশ্বিন একেবারে খাঁটি ম্যাচ-উইনিং বোলার। আটটা টেস্টে ৫৫ উইকেট, এ বছরের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি যে ও, অধিনায়ক কোহলি যে বলছে অশ্বিন এখন বিশ্বের সেরা স্পিনার, এগুলোই প্রমাণ করে দিচ্ছে অশ্বিন নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৩

আমাদের দেশে বোলারদের মধ্যে খাঁটি ম্যাচ-উইনার খুব কম এসেছে। তবে আজ নাগপুর টেস্টে ওর বোলিং দেখে উঠে বলতেই হচ্ছে, অশ্বিন একেবারে খাঁটি ম্যাচ-উইনিং বোলার। আটটা টেস্টে ৫৫ উইকেট, এ বছরের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি যে ও, অধিনায়ক কোহলি যে বলছে অশ্বিন এখন বিশ্বের সেরা স্পিনার, এগুলোই প্রমাণ করে দিচ্ছে অশ্বিন নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।

বেদী-প্রসন্ন-চন্দ্রশেখরের ত্রিভুজ। তার পর অনিল কুম্বলে আর হরভজন সিংহ— আমাদের দেশের সেরা স্পিনারদের তালিকায় যারা রয়েছে, তাদের সঙ্গে নিজেকে তুলনায় নিয়ে এসেছে অশ্বিন। আর আমার তো মনে হচ্ছে, এক কুম্বলেকে বাদ দিলে বাকি চারজনকেই এখন ছাপিয়ে গিয়েছে তামিলনাড়ুর অফস্পিনার। বেদী আর প্রসন্নর প্রতিভা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না। কিন্তু ওরা কখনওই আনপ্লেয়েবল ছিল না। চন্দ্র মাঝেমধ্যে ও রকম বিষ ছড়াত। কিন্তু অশ্বিনের ধারাবাহিকতা ওর মধ্যে দেখিনি।

পড়ুন: জয়ের আগাম সৌরভেও কলঙ্কের ছায়া

ভাজ্জি একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত বল করেছে ঠিকই। কিন্তু ও কখনওই টিমের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার হয়ে উঠতে পারেনি। যখন দেশের এক নম্বর স্পিনার ছিল, তখনও না। আসলে হরভজন কোনও দিনই সর্বোচ্চ স্তরে দারুণ প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারেনি। এই জায়গাটায় কিন্তু ভাজ্জির থেকে অশ্বিনকে এগিয়ে রাখতেই হবে।

বরং আমি বলব, এই অশ্বিন সেরা ফর্মের কুম্বলের পাশে থাকবে। অশ্বিন এখন কুম্বলের মতোই প্রভাবশালী, কুম্বলের মতোই বিধ্বংসী। কুম্বলের মতো বিপক্ষের ত্রাস। কুম্বলের মতো টিমের প্রধান বোলিং অস্ত্র। কুম্বলের মতো একা হাতে ম্যাচ জেতাতে পারে এই অশ্বিন। কুম্বলের সঙ্গে আরও একটা মিল পাচ্ছি আমি। নতুন বলে বল করতে কুম্বলের কোনও সমস্যা হত না। অশ্বিনেরও হচ্ছে না। দু’জনেই নতুন বলে উইকেট তোলার ব্যাপারে সফল।

আমি নিজে একটু আধটু স্পিনটা খেলেছি এক সময়। আমাকে যদি বলেন, এই মুহূর্তে কুম্বলে না অশ্বিন— কাকে খেলতে সমস্যায় পড়বেন, আমি বলব, অশ্বিন। কারণ ওর বৈচিত্রটা অনেক বেশি।

পড়ুন: খারাপ কোথায়, আমি তো স্পোর্টিং উইকেট বানিয়েছি

আজ অশ্বিন যে এই জায়গাটায় পৌঁছে গিয়েছে, তার একটা বড় কারণ ওর বৈচিত্র। শুধুমাত্র অফস্পিনে নিজেকে আটকে রাখেনি অশ্বিন। ক্যারম বল, দুসরা, ফ্লিপার— কখন কোনটা হাত থেকে বেরোবে বোঝা যায় না বলেই ব্যাটসম্যান সব সময় অনিশ্চয়তায় ভোগে। বলটা ফ্লাইট করাচ্ছে বেশি। হাওয়ায় বেশি পাক খাচ্ছে ওর ছাড়া ডেলিভারিগুলো। যার জন্য প্রতিটা বলের পিছনে বেশি শক্তি দিতে পারছে। যে সব উইকেটে বাকিরা সাহায্য পাচ্ছে না, সেখানেও বেশি টার্ন আর বাউন্স পাচ্ছে অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে পল হার্মারকে যে ক্যারম বলটায় বোকা বানিয়ে আউট করল, দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

এর সঙ্গে যোগ করুন অব্যর্থ ভাবে ঠিক জায়গায় বল করে যাওয়ার ক্ষমতা। পিচের সঠিক স্পটগুলো বের করে যাওয়া। ইদানীং ওকে দেখে মনে হচ্ছে ফিটনেস নিয়েও আগের চেয়ে বেশি খাটছে। আর একটা বড় ব্যাপার হল, ও খুব স্মার্ট বোলিং করছে। যাকে বল করছে, সেই ব্যাটসম্যানের শরীরী ভাষা বুঝে তার উপর সেই মতো চাপ তৈরি করছে। শ্রীলঙ্কা সফরে সঙ্গাকে চার বার আউট করাটা দারুণ উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রথম বার ওর মোকাবিলা করার সময় সঙ্গার ফুটওয়ার্ক অনিশ্চিত ছিল। দ্বিতীয় বার আরও বেশি। আর শেষ বার সঙ্গাকে দেখে মনে হল, অশ্বিনের মোকাবিলা করার চেষ্টাটাই আর করছে না। এই সিরিজে আমলার মুখেরও সে রকম হাবভাব দেখছি।

অশ্বিনের আত্মবিশ্বাসও ঈর্ষণীয়। এই সিরিজের মধ্যেই কবে একটা ও বলেছিল, যে কোনও ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে প্রথম কুড়ি মিনিট ও প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী থাকে যে, হাওয়ায় ওকে বিট করতে পারবেই পারবে। সেটা ও কাজেও করে দেখিয়েছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর ওর সব শিকারের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই ক্রিজে আধ ঘণ্টার বেশি টিকতে পারেনি।

সব মিলিয়ে অশ্বিন এখন ভয়ঙ্কর একটা প্যাকেজ। যাকে দেখলে বিপক্ষ রীতিমতো ভয় পেয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সময়ই কিন্তু পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিচ্ছে অশ্বিন। বিপক্ষ ব্যাটিং একাই ফালাফালা করে দিচ্ছে। তবে হ্যাঁ, ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে এখনও অশ্বিনের সেরা বোলিং হিসেব চার উইকেটে আটকে। তবে ও যে ভাবে নিজেকে পরের লেভেলে নিয়ে গিয়েছে, তাতে আমার মনে হয় ওর ক্ষমতা শুধু উপমহাদেশের টার্নিং ট্র্যাকে আটকে থাকবে না। বিদেশেও এর পর ভাল করবে। ও এমন একটা স্টাইল আয়ত্ত করেছে যেটা বিদেশেও ওকে সাহায্য করবে।

ashwin 12-98 south africa test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy