Advertisement
E-Paper

মায়ের মোটা চালেই চ্যাম্পিয়ন জলপাইগুড়ির স্বপ্না

মা চা বাগানে ঠিকে কাজ করে সংসার টানেন। বাড়িতে আমিষ পদ ছিল তাই স্বপ্নের মতো। বাসনাদেবীর কথায়, “মোটা চালের ভাত, ডাল, শাকই বেশি করে দিতাম। এই খেয়েই তো মেয়ে একের পর এক মেডেল জিতল।”

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৫
লড়াকু: জাকার্তায় স্বপ্না। বুধবার। — পিটিআই

লড়াকু: জাকার্তায় স্বপ্না। বুধবার। — পিটিআই

প্রায় দেড় দশক আগের কথা। জলপাইগুড়ি এলাকার কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে স্পোর্টস হয়েছিল পাতকাটার মাঠে। সব ক’টি স্কুলের মধ্যে হাইজাম্পে প্রথম হওয়া ছাত্রীর নাম ছিল স্বপ্না বর্মন।

দৌড়ের সেই শুরু। তার পর ছুটতে ছুটতে ছুটতে বুধবার সন্ধ্যায় আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাতকাটা ঘোষপাড়ার মেয়ে স্বপ্না। মা বাসনাদেবীর কানে এখনও ভাসে স্বপ্নার প্রথম দিকের কোচেদের কথা: আরও বেশি করে ডিম, কলা, ফল খাওয়াতে হবে। নিয়মিত মাংসের স্টু! ভ্যানচালক বাবা পঞ্চাননবাবু তত দিনে শয্যাশায়ী। মা চা বাগানে ঠিকে কাজ করে সংসার টানেন। বাড়িতে আমিষ পদ ছিল তাই স্বপ্নের মতো। বাসনাদেবীর কথায়, “মোটা চালের ভাত, ডাল, শাকই বেশি করে দিতাম। এই খেয়েই তো মেয়ে একের পর এক মেডেল জিতল।”

স্বপ্নার কোচেদের বক্তব্য, যে সিদ্ধান্ত খেলা পাগল ছোট্ট মেয়েটির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল, তা হল সাইয়ের ক্যাম্পে পাঠানো। সাইয়ে সুযোগ পাওয়ার পরে পরিবারের সদস্যদের কয়েক জন আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মা। সেখান থেকেই স্বপ্নার সোনার দৌড় শুরু। কখনও রাজ্য, কখনও বা দেশের হয়ে নানা প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছেন স্বপ্না। এশিয়াডে যে হেপ্টাথলনে সাফল্য, তা সাতটি খেলা নিয়ে প্রতিযোগিতা। তার মধ্যে আছে ১০০ মিটার হার্ডলস, ২০০ মিটার এবং ৮০০ মিটার দৌড়, হাইজাম্প, লংজাম্প, শটপাট এবং জ্যাভেলিন ছোড়া। অন্যতম কঠিন এই প্রতিযোগিতায় সাতটি বাধা টপকে যে সব থেকে বেশি পয়েন্ট পাবে, সে-ই সোনা জিতবে।

আরও পড়ুন: যন্ত্রণা জিতেই সোনার মেয়ে স্বপ্না

মিষ্টিমুখ: স্বপ্নার মা বাসনাদেবী ও বাবা পঞ্চাননবাবু। ছবি: সন্দীপ পাল

স্বপ্না সাইয়ে যোগ দিয়েছেন পাঁচ বছর আগে। তার পর থেকে আর নতুন কেউ উঠে আসেনি জলপাইগুড়িতে। জলপাইগুড়ির স্কুল ক্রীড়ার অন্যতম কোচ রাজীব ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘হেপ্টাথলন ইভেন্টটা স্কুল ক্রীড়ায় অন্তর্ভুক্ত নেই। তাই স্কুল পর্যায় থেকে কেউ উঠে আসছে না।’’ তাঁর কথায়, “যারা পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলায় বেশি পারদর্শী, তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা উচিত। এশিয়াডে যে ইভেন্টগুলো আছে, সেগুলো স্কুল পর্যায়ে শুরু করা উচিত।”

জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন ছেলেমেয়েরা একটি বা দু’টি ইভেন্ট নিয়ে অনুশীলন করে। এখন জলপাইগুড়িতে সাইয়ের ক্যাম্প হয়েছে। সেখানে উন্নত অনুশীলনের সুযোগ আছে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্সের সম্পাদক উজ্জ্বল দাস চৌধুরী বলেন, “এখন সাইয়ের ক্যাম্প জলপাইগুড়িতে হওয়ার জন্য আশা করি আরও অনেক স্বপ্না বর্মন গড়ে উঠবে। এত দিন যে সুযোগ উত্তরবঙ্গে ছিল না।” স্বপ্না-ই নতুন খেলোয়াড়দের স্বপ্ন হবে, আশা ক্রীড়া মহলের।

আরও পড়ুন: টস জিতে ব্যাটিং ইংল্যান্ডের, দল অপরিবর্তিত ভারতের

আরও পড়ুন: এশিয়ান গেমসে দুটো রুপো জিতেও কেরিয়ার নিয়ে আশঙ্কায় দ্যুতি​

Swapna Jalpaiguri Tea Garden Asian Games 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy