Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আইএসএল
Sport News

পিছিয়ে পড়েও রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে এটিকে

শেষ বাঁশি বাজতেই আর ধরে রাখা গেল না হাবাসকে। দু’হাত শূন্যে ছুড়তে ছুড়তে মাঠে ঢুকে পড়লেন তিনি। প্রবীর দাস চলে গেলেন গ্যালারির সামনে।

উল্লাস: ফাইনালে উঠে কৃষ্ণ-সহ এটিকে ফুটবলারেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উল্লাস: ফাইনালে উঠে কৃষ্ণ-সহ এটিকে ফুটবলারেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৫:২৬
Share: Save:

এটিকে ৩ • বেঙ্গালুরু ১

(দুই পর্ব মিলিয়ে ৩-২ জয়ী এটিকে)

স্বপ্নপূরণ।

ম্যাচ শেষ হতে তখনও বাকি কয়েক মিনিট। ৩-১ এগিয়ে এটিকে। সাইড লাইনের ধারে উত্তেজনায় কাঁপতে থাকা কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসকে প্রাণপণে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারেরা।

শেষ বাঁশি বাজতেই আর ধরে রাখা গেল না হাবাসকে। দু’হাত শূন্যে ছুড়তে ছুড়তে মাঠে ঢুকে পড়লেন তিনি। প্রবীর দাস চলে গেলেন গ্যালারির সামনে। পাগলের মতো মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়চ্ছেন। গত মরসুমে চোটের জন্য খেলতে পারেননি। রবিবার তাঁর পাস থেকেই গোল করলেন রয় কৃষ্ণ ও ডেভিড উইলিয়ামস। ম্যাচের পরে প্রবীর বললেন, ‘‘পিছিয়ে পরেও হাল ছাড়িনি। বাড়তি উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। নিজেদের বলেছিলাম, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।’’ ড্রেসিংরুমে ফিরে শুধু সতীর্থদের সঙ্গে নয়, টিম বাসে ওঠার আগে ভক্তদের সঙ্গেও নাচলেন তিনি।

ডেভিড উইলিয়ামসকে দেখা গেল, মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে ঘাসে চুম্বন করছেন। আর এক গোলদাতা রয় কৃষ্ণকে জড়িয়ে ধরেছেন জবি জাস্টিন। দু’হাত মুঠো করে হুঙ্কার দিচ্ছেন গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য। প্রথম পর্বের ম্যাচে তাঁর ভুলেই গোল করেছিলেন বেঙ্গালুরুর দেশহর্ন ব্রাউন। এ দিন অবধারিত তিনটি গোল বাঁচিয়ে শাপমুক্তি ঘটালেন বঙ্গ গোলরক্ষক।

আরও পড়ুন: ঝড় তুলে টোকিয়োর ছাড়পত্র পাঁচ বক্সারের

একই ছবি হসপিটালিটি বক্সেও। রুদ্ধশ্বাস জয়ের আনন্দে দলের অন্যতম অংশীদার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও উল্লাসে গা ভাসালেন। ক্রিকেট জীবনে তাঁর প্রত্যাবর্তনের কাহিনি সকলের কাছেই অনুপ্রেরণার। রবিবার প্রবীরদের লড়াইয়ে যেন নিজেকে খুঁজে পেলেন। সেই এক হার-না-মানা মানসিকতা। ম্যাচ শেষেমাঠে নেমে এসে কচি-কাঁচাদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে শুরু করে দিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট। ক্লান্তিহীন ভাবে ছবির আব্দার মেটালেন। গ্যালারিতে তখনও চলছে উৎসব!

আইএসএল সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে বেঙ্গালুরু কোচ কার্লেস কুদ্রাতের রক্ষণাত্মক রণনীতি এটিকের জয়ের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দিয়েছিল। রবিবাসরীয় যুবভারতীতে দেখা গেল সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া বেঙ্গালুরুকে। রক্ষণাত্মক ফুটবলের বর্ম খুলে ফেলে শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় সুনীল ছেত্রীদের। পাঁচ মিনিটেই অসাধারণ গোল আশিক কুরুনিয়নের।

ব্যতিক্রম একমাত্র হাবাস। এটিকে কোচকে দেখা গেল, সাইড লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে ফুটবলারদের নির্দেশ দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়। ডিফেন্ডার প্রবীরকে বাড়তি দায়িত্ব দিলেন আক্রমণ গড়ে তোলার। সেই মন্ত্রে বদলে গেল এটিকে। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করলেন এদুয়ার্দো গার্সিয়া, ফ্রান্সিসকো গঞ্জালেসরা। ৩০ মিনিটে প্রবীরের পাস থেকে অসাধারণ গোল করে সমতা ফেরালেন রয় কৃষ্ণ। কিন্তু ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করার জন্য এক গোল যথেষ্ট নয়। প্রথম পর্বে ০-১ হারায় অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততেই হবে। এবং কোনও অবস্থায় গোল খাওয়া চলবে না। দ্বিতীয়ার্ধে ৩-৫-২ বদলে ৪-৩-৩ ছকে এটিকে খেলা শুরু করতে অস্বস্তি আরও বাড়ল সুনীলদের। যুবভারতীর হাজার পঞ্চাশ দর্শক দেখলেন দুরন্ত প্রত্যাবর্তন।

৬১ মিনিটে নিজেদের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ডেভিড উইলিয়ামসকে ফাউল করলেন সুরেশ সিংহ। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি তিনি। ৭৯ মিনিটে ডেভিড ফের ঝলসে উঠলেন। প্রবীরের সেন্টার থেকেই অসাধারণ হেডে বল জালে জড়িয়ে দিলেন। তৃপ্ত হাবাস সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘শুরুতে পিছিয়ে গেলেও আমরা হাল ছাড়িনি। ছেলেদের বলেছিলাম, নিজেদের উপরে বিশ্বাস রাখ। অসাধারণ খেলেছে প্রবীর ও ডেভিড।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘দ্বিতীয়ার্ধে ৪-৩-৩ ছকে খেলা শুরু করতেই জয় নিশ্চত হয়ে যায়।’’

এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, জন জনসন, সুমিত রাঠি, প্রবীর দাস, রেজিন এম (জয়েশ রানে), এদুয়ার্দো গার্সিয়া (ভিক্টর আদেভা), ফ্রান্সিসকো গঞ্জালেস (আর্মান্দো পেনা), সুসাই রাজ, ডেভিড উইলিয়ামস ও রয় কৃষ্ণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football ATK ISL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE