Advertisement
E-Paper

খাবার জোটে না, বাংলার সাঁতারু সাহিলের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে

বাংলার কোথাও আন্তর্জাতিক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সুযোগ নেই। বালি গ্রামাঞ্চলের ঘোলা জলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমস্য হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঠিকমতো এগোনো যায় না, সেখানে অনুশীলন করেই দেশের সেরা হয়েছেন জুনিয়র বিভাগে।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:২৬
উপেক্ষিত: চার পদক জিতেও বঞ্চিত সাহিল। নিজস্ব চিত্র

উপেক্ষিত: চার পদক জিতেও বঞ্চিত সাহিল। নিজস্ব চিত্র

পুষ্টিকর খাবার জোগানোর পয়সা জোগাড় করতে পারছেন না বাবা-মা। ফলে, প্রত্যেক দিন পাঁচ-ছয় ঘণ্টার প্রশিক্ষণের পর এশীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে চার-চারটি পদক জেতা সাঁতারুর জোটে শুধুই রুটি-তরকারি।

বাংলার কোথাও আন্তর্জাতিক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সুযোগ নেই। বালি গ্রামাঞ্চলের ঘোলা জলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমস্য হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঠিকমতো এগোনো যায় না, সেখানে অনুশীলন করেই দেশের সেরা হয়েছেন জুনিয়র বিভাগে।

সামনে কোনও জাতীয় শিবির নেই। ফলে আন্তর্জাতিক কোচের কাছে শিক্ষা নেওয়া এবং ভাল সুইমিং পুলে প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। রাজ্য সংস্থার কর্তাদের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি। ফলে চূড়ান্ত উপেক্ষা আর অবহেলার জেরে শেষ হয়ে যেতে বসেছে দেশের ও রাজ্যের অন্যতম সাঁতারু চোদ্দো বছরের সাহিল লস্করের খেলোয়াড় জীবন।

সাব-জুনিয়র, জুনিয়র, এশীয় মিট মিলিয়ে যাঁর ভাড়াবাড়ির ভাঙাচোরা আলমারিতে রয়েছে প্রায় ষোলোটি পদক, সেই সাহিল সোমবার বলছিল, ‘‘কী ভাবে সাঁতার কাটব জানি না। বাবা রং মিস্ত্রি। কোনও দিন কাজ থাকে, কোনও দিন থাকে না। খাবারই তো জোটে না। অনুশীলনের পরে মুরগির মাংস, ডিম-সব অন্য প্রোটিন খাবার জোটে না। জাতীয় শিবিরে থাকলে এগুলো পাই। এখানে কে দেবে? বাড়িতে রুটি-তরকারি করে দেয় মা। কান্না পায়। কী ভাবে সাঁতার চালিয়ে যাব, জানি না। সব অন্ধকার মনে হয়।’’

ভাল করে সাজিয়ে কথা বলতে পারে না সাহিল। কিন্তু সুইমিং পুলে নামলেই ঝড় তোলে সে। তাঁর এখনকার কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘আকবর আলি মিরের পর বাংলায় এত ভাল সাঁতারু দেখিনি। দারুণ প্রতিভা। কিন্তু কিছু করতে পারছি না এর জন্য।’’ জুনিয়র এবং সাব জুনিয়রে রাজ্যের সেরা সাঁতারু সাহিল। যত বার নেমেছে, তত বারই সোনা-রুপো জিতেছে। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুতে এশীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে হইচই ফেলে দেয় ক্যানিংয়ের ছেলে সাহিল। আঠারোটি দেশের সাঁতারুদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুটি রুপো এবং দুটি ব্রোঞ্জ জেতে সে। ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে রুপো, ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে ব্রোঞ্জ ছাড়াও দুটি রিলে দলের সদস্য হয়ে রুপো ও ব্রোঞ্জ জেতে সে। সাহিল বলছিল, ‘‘ভেবেছিলাম এটা পাওয়ার পর আমি সিনিয়র বিভাগেও ভাল কিছু করব। কিন্তু কোনও সুযোগই তো পাচ্ছি না। ভাগ্যটাই আমার খারাপ। না হলে মারধর খেয়ে যে ভাবে আমাকে বেঙ্গালুরুর নিহার আমিনের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল, তা ভুলব না।’’

ঘটনাটা কী? সাহিলের দাবি, বেঙ্গালুরুতে সাঁতারুদের জন্য একটি অ্যাকাডেমি চালান দেশের অন্যতম নামী কোচ সত্তরোর্ধ্ব নিহার আমিন। সেখানে টাকা দিয়ে সাঁতার শেখেন সবাই। কিন্তু সাহিল দরিদ্র বলে তাঁকে বিনা পয়সায় শেখাতেন নিহার। ‘‘নিহার স্যারের বয়স হয়েছে। উনি আমাকে ছেলের মতো ভালবাসতেন। কিন্তু ওর সহকারীরা যাঁরা অ্যাকাডেমি চালাতেন, তাঁরা আমাকে হিংসা করতেন। বলতেন, ‘বিনা পয়সায় এত খাওয়াদাওয়া করা যাবে না।’ ওঁরাই আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন,’’ বলছিল সাহিল। ‘‘এত মেরেছিল যে ভয়ে পালিয়ে এসেছিলাম,’’ বলার সময় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের গলায় এখনও আতঙ্ক।

ছেলেকে সাঁতার শেখাবেন বলে ক্যানিংয়ের ভিটেমাটি ছে়ড়ে হাওড়ায় ভাড়াবাড়িতে চলে আসেন বাপি লস্কর। বলছিলেন, ‘‘আমি তো প্রত্যেক দিন কাজ পাই না। ওর মা ক্যানিংয়ে পুরনো শাড়ি বিক্রি করত। সেটাও বন্ধ। কী যে হবে।’’

সাহিলের এই অবস্থার কথা কর্তাদের জানিয়েছিলেন তাঁর কোচ সুব্রত। কিন্তু কোনও গুরুত্ব পাননি। রাজ্য সংস্থার সচিব স্বপন আদক বললেন, ‘‘আমাকে সাহিলের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কী করতে হবে তা বলেনি। বললে নিশ্চয়ই সাহায্য করব।’’ বেঙ্গল অলিম্পিক্স সংস্থার প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সাহিলের অবস্থা এ রকম, তা জানি না। এমন প্রতিভা কেন অবহেলায় নষ্ট হবে? আমি কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

এখন দেখার, রাজ্যের সেরা সাঁতারুর জীবনে দীপাবলির আলো পৌঁছয় কি না?

Bengal Swimmer Nutrition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy