Advertisement
E-Paper

ভুবি-বুমরাকে তো ফেরাতেই হল, হুঙ্কার স্টুয়ার্টের

ফর্মের যে শিখরে রয়েছেন ভারত অধিনায়ক, তাতে তাঁর মুখে এখন এই কথাই মানায়। কিন্তু বুধবার বিশাখাপত্তনমে যে ভাবে তিনশোর বেশি রান তুলেও জয় হাতছাড়া হতে দেখেছে বিরাট শিবির, তার পরে তাঁদের এখন অন্য চিন্তা করতেই হচ্ছে। 

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৫
জুটি: পুণেতে নজরে ভারতের পেস বিভাগের দুই তারকা ভুবি-বুমরা।

জুটি: পুণেতে নজরে ভারতের পেস বিভাগের দুই তারকা ভুবি-বুমরা।

পুণের বিমানবন্দর থেকে শহরের অভ্যন্তরে যাওয়ার রাস্তার ধারে এক হোর্ডিংয়ে দেখা গেল বিরাট কোহালির বিশাল ছবি। সেই ছবির নীচে মরাঠি ভাষায় যা লেখা, তার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘পারো তো ছিনিয়ে নাও’।

ফর্মের যে শিখরে রয়েছেন ভারত অধিনায়ক, তাতে তাঁর মুখে এখন এই কথাই মানায়। কিন্তু বুধবার বিশাখাপত্তনমে যে ভাবে তিনশোর বেশি রান তুলেও জয় হাতছাড়া হতে দেখেছে বিরাট শিবির, তার পরে তাঁদের এখন অন্য চিন্তা করতেই হচ্ছে।

সিরিজে সেই একপেশে হাওয়া যে আর বইছে না, তা পরিষ্কার হয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচের কথাতেই। ‘‘ওরা চাপে পড়েছে বলেই তো দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার আর যশপ্রীত বুমরাকে ডেকে আনল,’’ শুক্রবার পুণের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দল নিয়ে অনুশীলনে নামার আগে বলে গেলেন শিমরন হেটমায়ারদের অস্ট্রেলিয়ান কোচ স্টুয়ার্ট ল। বিশাখাপত্তনমে শেই হোপ ও হেটমায়ারের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে ক্যারিবিয়ান শিবিরের উত্তাপ যে বেড়ে গিয়েছে, তা তো কোচের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে।

যতই হোক, কোচ অস্ট্রেলিয়ান তো। ভারতের বিরুদ্ধে একটা চোরাগোপ্তা বিদ্বেষ নিশ্চয়ই আছে। তা ছাড়া ভারতে এসে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। ক্রিকেট জীবনে টেস্টের চেয়ে ওয়ান ডে খেলেছেন অনেক বেশি। তাই স্টুয়ার্ট ল-কে সাদা বলের ক্রিকেটেই বেশি স্বচ্ছন্দ লাগে।

কিন্তু সে সবে কেউ পাত্তা দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। ভারতীয় শিবিরের মধ্যেও যেমন ছুটির মেজাজ, সারা দিন বিশ্রাম করে কাটালেন ক্রিকেটারেরা, তেমনই ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও নিশ্চয়তার বাতাবরণ। শনিবার পুণের মাঠে মন মাতানোর ব্যাপারে যেমন বিরাট কোহালির ওপর মোটা টাকার বাজি রাখতে চান অনেকে, তেমনই দলের দুই সেরা বোলার ফিরে আসায় হোপ-হেটমায়ারের জুটিরও দফারফা হবে, এই আশাতে রয়েছেন ক্রিকেট ভক্তরা।

সদ্য দশ হাজার ওয়ান ডে রান পূর্ণ করা ভারত অধিনায়ক এই সিরিজে পাঁচ ম্যাচে পাঁচটা সেঞ্চুরি করে আর একটা মাইলফলক তৈরি করবেন কি না, সেই আলোচনাও এ দিন শোনা গেল এমসিএ স্টেডিয়ামে। তাঁদের কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেল, ‘‘অস্বাভাবিক নয়, একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। যে ভাবে, যে গতিতে এগিয়ে চলেছেন বিরাট, তাতে টানা পাঁচটা সেঞ্চুরি হলেও অবাক হওয়ার নেই।’’ প্রথম দুই ওয়ান ডে-তে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানেরা তিনশোর ওপর রান তুলে আত্মবিশ্বাসের ঝুলি বড় করে নিলেও বিরাট নামক ‘হার্ডল’-এই আটকে যাচ্ছেন ক্যারিবিয়ান বোলাররা। সেই দুশ্চিন্তা রয়েই গিয়েছে তাঁদের শিবিরে। শুক্রবার যখন স্টুয়ার্ট ল-কে জিজ্ঞেস করা হল, বিরাটকে থামানোর কোনও উপায় বার করতে পারলেন? প্রথমে মুচকি হাসলেন তিনি। তার পর যোগ করলেন, ‘‘সে দিন (বুধবার) তো ৪০-এই ওকে ফিরিয়ে দিতে পারতাম (ক্যাচ ফেলেন জেসন হোল্ডার)। সুযোগটা যদিও কঠিন ছিল। কিন্তু এই স্তরের ক্রিকেটে তো এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতেই হবে। ওই ক্যাচটা ধরতে পারলে ম্যাচের রঙই বদলে যেত।’’ তার পরে ভারত অধিনায়ক সম্পর্কে ভাল ভাল কিছু কথা, ‘‘অসাধারণ ক্রিকেটার। দারুণ সব স্ট্রোক খেলতে পারে। যে ভাবে একটা ইনিংস তৈরি করে, দেখার মতো। প্রচুর পরিশ্রম করে। আর সেটা করে খুব সহজ ভাবেই। এটাই ওর কৃতিত্ব।’’ বিরাটের জন্য আলাদা ছক যে কষা আছে, তা জানিয়ে ল বলে দিলেন, ‘‘ওকে নিয়ে পরিকল্পনা তো রয়েছেই। তবে ওর কাছে সব কিছুর জবাবও রয়েছে। তাই এই প্রশ্নটা প্রায় রোজই শুনতে হয় আমাদের। তবে বিরাট কোহালিও তো মানুষ। সে ভুল করলে আমাদের সেই সুযোগ নিতেই হবেই। সে যত কঠিনই হোক।’’

মোদ্দা কথাটা হল, বিরাটকে আটকানোর সাধ থাকলেও সাধ্য আছে কি না, তা নিয়েই ধন্দে ক্যারিবিয়ান কোচ। এ বার যাতে তা সাধ্যেও কুলোয়, সে জন্য শুক্রবার চড়া রোদের মধ্যে ক্যাচ প্র্যাক্টিসও করলেন ক্যারিবিয়ানরা। বিশেষ করে পয়েন্ট, কভার, থার্ডম্যান অঞ্চলে ছুটে আসা তীব্র গতির ক্যাচগুলো আর আকাশে ওঠা ক্যাচগুলো। তবে অনুশীলনেও বেশ কয়েকটা ক্যাচ পড়তে দেখা গেল তাঁদের হাত থেকে। যা দেখে কোচ স্টুয়ার্ট ল নিশ্চয়ই খুব একটা খুশি হননি।

এমসিএ স্টেডিয়ামের উইকেট দেখে মনে হল পাশেই পুণে-মুম্বই হাইওয়ে থেকে একখণ্ড তুলে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন উইকেট দেখলে যেমন বিরাট কোহালি খুশি হবেন, তেমনই হোপ-হেটমায়াররাও। আবার একটা সাড়ে ছ’শো রানের ম্যাচ হতে চলেছে শনিবার, এমনই ভাবছেন অনেকে। এখানে যে তিনটি ওয়ান ডে হয়েছে, তার প্রথম দুটোতে প্রায় সাতশো করে ও শেষেরটায় প্রায় পাঁচশো রান উঠেছে। অবশ্য এটাও মনে রাখতে হবে, শনিবার ভারতীয় টিমলিস্টে দু’টো নাম ফিরে আসছে— ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরা। যাঁরা দলের সেরা দুই বোলিং অস্ত্র এবং ছবিটা পাল্টে দিতে পারেন অনায়াসে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার অবশ্য রাতের শিশির। গত কয়েক দিন ধরে যা শিশির পড়ছে সন্ধেবেলা, সে রকম যদি শনিবারেও ঘটে, তা হলে পরে যারা বোলিং করবেন তাঁদের কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। বিশাখাপত্তনমে এই সমস্যার কথা বলেছিলেন কুলদীপ যাদব। এ সব ক্ষেত্রে বল ভিজিয়ে অনুশীলন করাটাই রীতি। কিন্তু শুক্রবার কুলদীপরা যেখানে অনুশীলনেই নামলেন না, সেখানে সমস্যাটা মিটবে কী করে, কে জানে!

তবে যত সমস্যাই আসুক, ভারতীয় দলে এখন সব প্রশ্নেরই একটাই উত্তর— ‘বিরাট কোহালি হ্যায় না’! যিনি মাঠে নেমেই হুঙ্কার দেন, ‘পারো তো ছিনিয়ে নাও’।

Cricket ODI India West Indies Bhuvneswar Kumar Jaspreet Bumrah Stuart Law
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy