ইউএস ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে সহজ জয় পেলেন কার্লোস আলকারাজ়। ৬-১, ৬-০, ৬-৩ গেমে হারালেন ইটালির মাত্তিয়া বেলুচ্চিকে। এ দিকে, সেমিফাইনালে তাঁর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ নোভাক জোকোভিচ জানিয়েছেন, নিজের খেলায় এখনও খুশি হতে পারেননি। আরও উন্নতি দরকার তাঁর। টেনিস কোর্টে র্যাকেট ভাঙায় বড় জরিমানা করা হয়েছে ড্যানিল মেদভেদেভকে।
প্রথম দুই ম্যাচে কেউ আলকারাজ়ের সার্ভিস ভাঙতে পারেননি। গত বার দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে বিদায় নিলেও এ বার আলকারাজ়ের খেলায় আরও আগ্রাসন দেখা যাচ্ছে। নিখুঁত টেনিস খেলছেন তিনি। ম্যাচের পর আলকারাজ় বললেন, “গত বারের হারটা মাথায় রেখেই কোর্টে নেমেছিলাম। কিছু খারাপ চিন্তাও মাথায় আসছিল। চিন্তায় ছিলাম। তবে নিজেকে এটাও বলেছি, গত বারের ফল এ বার আর হবে না।”
বিশ্বের ৬৫ নম্বর বেলুচ্চিকে শুরু থেকেই দাঁড়াতে দেননি আলকারাজ়। বেসলাইন থেকে খেলছিলেন। পাশাপাশি তাঁর ড্রপ শটও নজর কাড়ে। ৩০ মিনিটেই প্রথম সেট জিতে নেন। বিপক্ষকে মাত্র চারটে গেম জিততে দিয়েছেন। ইউএস ওপেনে গত ১৭টি ম্যাচে এটি তাঁর সবচেয়ে ভাল জয়। আলকারাজ় বলেছেন, “ম্যাচে একটা পরিকল্পনা নিয়ে নামছি। প্রথম থেকে শেষ শট পর্যন্ত সেটাই অনুসরণ করার চেষ্টা করছি।”
তৃতীয় রাউন্ডে আমেরিকার ওয়াইল্ড কার্ড এলিয়ট স্পিজিরির বিরুদ্ধে খেলবেন আলকারাজ়। ২০২২-এর পর আবার ইউএস ওপেন জেতার লক্ষ্যে নেমেছেন তিনি। সফল হলে বিশ্বের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড়ও হয়ে যেতে পারেন। শেষ ৩৩টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছেন আলকারাজ়।
এ দিকে, জাকারি ভাজদাকে হারিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে উঠলেও পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না জোকোভিচ। কারণ নিজের খেলায় মজা পাচ্ছেন না তিনি। ম্যাচের পর জোকোভিচ বলেন, “নিজের খেলায় খুশি নই। তবে এমনও দিন যেতে পারে যে দিন আপনি নিজের সেরা টেনিসটা খেলতে পারলেন না অথচ জয়ের একটা পথ খুঁজে নিলেন। বেশি দার্শনিক হতে চাই না। তবে এখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে ভাল লাগে আমার। কোর্টে নেমে জেতার ইচ্ছা এখনও জাগে। সব সময় ভাল খেলা সম্ভব নয়।”
জোকোভিচকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, টেনিসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী? সার্বিয়ার তারকার উত্তর, “এ নিয়ে অনেক তর্ক হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা এবং টেনিসজীবন থেকে বলতে পারি, সেরা দুটো জিনিস হল কেরিয়ার স্ল্যাম বা গোল্ডেন স্ল্যাম জেতা (অলিম্পিক্স সোনা এবং চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম) এবং অনেক বছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর থাকা। গ্র্যান্ড স্ল্যাম এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রচুর খেলোয়াড় নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেয় জেতার জন্য। পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলতে থাকা এবং দীর্ঘ দিন বিশ্বের এক নম্বর থাকাও কঠিন কাজ।”
উল্লেখ্য, জোকোভিচ ৪২৮ সপ্তাহ বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি গোল্ডেন স্ল্যামেরও অধিকারী। সে সম্পর্কে বলেছেন, “২০১১-এ উইম্বলডন জিতে বিশ্বের এক নম্বর হয়ে ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করার পর আমি তৃপ্ত হয়েছিলাম। সেই সময় ২৩ বছর বয়স ছিল। আমি ভেবেছিলাম, এখনও তো ১৫ বছর খেলতে হবে। নতুন লক্ষ্য স্থির করতে হবে। ২০১১-র মধ্যে চারটে স্ল্যামের তিনটে জেতার পর মনে হয়েছিল, কেন কেরিয়ার স্ল্যাম পূরণ করার চেষ্টা করব না? ২০১৬-য় সেটা করতে পেরে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম।”
ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ডে হেরে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করেছিলেন মেদভেদেভ। কোর্টে র্যাকেটও ভেঙেছিলেন। তার জন্য ৪২,৫০০ ডলার বা ৩৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হল তাঁকে। যদিও বেঞ্জামিন বনজ়ির বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের পর ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচের তৃতীয় সেটে। বনজ়ির বিরুদ্ধে প্রথম দু’টি সেট হেরে গিয়েছিলেন মেদভেদেভ। তৃতীয় সেটে ৫-৪ এগিয়ে থাকাকালীন সার্ভিস ছিল বনজ়ির। সেই গেম জিতলে স্ট্রেট সেটে মেদভেদেভকে হারিয়ে দিতেন তিনি। বনজ়ির প্রথম সার্ভিস নেটে লাগে। দ্বিতীয় সার্ভিস করার আগে দেখা যায়, কোর্টে এক চিত্র সাংবাদিক ঢুকে পড়েছেন। নিজের জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তা দেখে চেয়ার আম্পায়ারের মনে হয়, খেলার ছন্দ নষ্ট হয়েছে। তাই তিনি বনজ়িকে আবার প্রথম সার্ভিস নিতে বলেন।
চেয়ার আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি মেদভেদেভ। তিনি তেড়ে যান চেয়ার আম্পায়ারের দিকে। প্রশ্ন করেন, কেন বনজ়িকে আবার প্রথম সার্ভিস নিতে বলা হল। আম্পায়ারের যুক্তি মানতে পারেননি মেদভেদেভ। তর্ক করতে থাকেন তিনি। মেদভেদেভ সমর্থন পান লুই আর্মস্ট্রং স্টেডিয়ামের দর্শকদের। তাঁরা চেয়ার আম্পায়ারকে বিদ্রুপ করতে থাকেন। ফলে ৭ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। মেদভেদেভকে দেখা যায়, হাতের ইশারায় সমর্থকদের তাতাচ্ছেন। আবার দর্শকদের জন্য হাতের ইশারায় ‘ভালবাসা’ও দেখান তিনি। এ ভাবে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করার জন্য শাস্তি পেয়েছেন মেদভেদেভ।
তার পরেও চুপ থাকেননি তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উঠতেই বেনজির আক্রমণ করেছেন। মেদভেদেভ বলেন, “প্রথমেই সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে আমার মনে হয় চেয়ার আম্পায়ার তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর হয়তো হ্যামবার্গার খেতে ইচ্ছা করছিল। হয়তো অনেক ক্ষণ চেয়ারে বসে ঘুম পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি তাঁর কথা শুনিনি। তাঁকে আরও ২ ঘণ্টা ওখানেই বসিয়ে রেখেছি। ম্যাচ হয়তো আমি হেরেছি। কিন্তু চেয়ার আম্পায়ার যা চেয়েছিলেন তা হতে দিইনি। সেটাই আমার জয়।” সাম্প্রতিক অতীতে টেনিসে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক জড়িয়েছেন বহু তারকা। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক নোভাক জোকোভিচ। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর এ ভাবে কাউকে চেয়ার আম্পায়ারের দিকে সরাসরি নিশানা করতে শোনা যায়নি।
মেদভেদেভ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ফোটোগ্রাফারের জন্য মেজাজ হারাননি তিনি। ২০২১ সালের ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন বলেন, “ফোটোগ্রাফারের কোনও দোষ নেই। কিন্তু একটা শব্দ হলেই যদি আবার নতুন করে প্রথম সার্ভিস করতে বলা হয় তা হলে তো মুশকিল। আমি সেই সিদ্ধান্তটা মানতে পারিনি। নিজের যুক্তি দিয়েছি। তর্ক করেছি। ঠিক করেছি।”
চেয়ার আম্পায়ারের পাশাপাশি আয়োজকদেরও একহাত নিয়েছেন মেদভেদেভ। এর আগে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করায় রেইলি ওপেলকাকেও শাস্তি পেতে হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মেদভেদেভ। তিনি বলেন, “আমাকে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে তা বললে সমস্যায় পড়ব। তাই সেটা বলছি না। শুধু এ টুকু বলতে পারি, বড় অঙ্কের জরিমানা হয়েছে। রেইলিকেও এই রকম জরিমানা করা হয়েছিল।”
আরও পড়ুন:
মেদভেদেভের দাবি, তাঁদের মতো খেলোয়াড়কে ভাল চোখে দেখেন না আয়োজকেরা। তাই তাঁদেরই শাস্তি পেতে হয়। তিনি বলেন, “আমি জানি না। ওরা আমাদের মতো খেলোয়াড়দেরই শাস্তি দেয়। আমি, কিরগিয়স, বুবলিক, রেইলি। ওরা আমাদের পছন্দ করে না।” ‘আমাদের মতো’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা বলেননি মেদভেদেভ। তবে যাঁদের উদাহরণ তিনি দিয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই বিতর্কিত। তাই অনেকেই ভাবছেন, তিনি হয়তো বিতর্কিত খেলোয়াড়দের কথা বলেছেন। চেয়ার আম্পায়ার ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে এ ভাবে মুখ খোলায় ভবিষ্যতে মেদভেদেভকে আরও বড় শাস্তি পেতে হবে কি না, সেটাই দেখার।