Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Ravichandran Ashwin

Ravichandran Ashwin: হঠাৎ রাগে অগ্নিশর্মা অশ্বিন, মনে করাচ্ছেন কোহলীকে

এত রাগ কেন অশ্বিনের? অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে গিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই সময় তো রাগ দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে।

রেগে কাঁই অশ্বিন।

রেগে কাঁই অশ্বিন। —ফাইল চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ১৩:৫৬
Share: Save:

কানপুর টেস্টের চতুর্থ দিন উইল ইয়ংয়ের এলবিডব্লিউ চাইলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেন। ভারতের অন্য ক্রিকেটাররা যখন হাত মেলাতে ব্যস্ত, অশ্বিন কিন্তু তখন চোখ রাখছিলেন মাঠের বড় স্ক্রিনে চলতে থাকা টাইমারের দিকে। নির্ধারিত ১৫ সেকেন্ড শেষ হওয়ার পর রিভিউ চাইতে গেলেন ইয়ং। সঙ্গে সঙ্গে হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে উঠলেন অশ্বিন। মনে করিয়ে দিলেন সময় শেষ। ইয়ং মাঠ ছাড়ার পর যদিও দেখা গেল, রিভিউ নিতে পারলে বেঁচে যেতেন তিনি।

শুধু এই আউটের আবেদনের ক্ষেত্রেই নয়, বার বার আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে অশ্বিনকে। কানপুর টেস্টে বল করার সময় ক্রিজের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাচ্ছিলেন বার বার। নন স্ট্রাইকার ব্যাটারের সামনে চলে যাওয়ায় আম্পায়ার সতর্কও করেন অশ্বিনকে। সেই সময় আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন তিনি। যে ভঙ্গিতে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলছিলেন তা ক্রিকেটের জন্য খুব ভাল বিজ্ঞাপন নয়। ২০১৯ সালে আইপিএল-এ জস বাটলারকে মাঁকড়ীয় পদ্ধতিতে আউট করেন অশ্বিন। সেই সময়েও তাঁর মধ্যে এক রোখা মনোভাব দেখা গিয়েছিল।

ক্রিকেটকে বলা হয়, ‘জেন্টলম্যানস গেম’। সেই ভদ্রলোকের খেলায় কিছু নিয়মের বাঁধন আছে। অশ্বিন সেই বাঁধনের ফাঁকগুলি ঠিক খুঁজে নেন। কখনও মাঁকড় আউটে নাম জড়ায় তাঁর, কখনও আবার বিতর্কিত আউটে। অনেকেই বলবেন রবিবারের পড়ন্ত বেলায় ভারতের উইকেট দরকার ছিল, অশ্বিন সেটাই এনে দিয়েছেন। আবার অনেকে বলবেন বোলার অশ্বিন বোধ হয় জানতেন রিভিউ নিলে আউট নাও পেতে পারেন, সেই জন্যই এত বেশি উদগ্রীব ছিলেন তিনি।

এত রাগ কেন অশ্বিনের?

এত রাগ কেন অশ্বিনের? —ফাইল চিত্র

তথ্য প্রযুক্তিতে স্নাতক অশ্বিন। খেলার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন সমান তালে। কেরিয়ারের শুরুতে মিডিয়াম পেস বল করতেন তিনি। অশ্বিনের বাবা ছিলেন পেস বোলার। ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছেন নিয়মিত। পেসারদের মধ্যে বল করার সময় যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গি দেখা যায়, সেটাই দেখা যাচ্ছে অশ্বিনের মধ্যে। বিরাট কোহলী দলে না থাকায় আরও বেশি চোখে পড়ছে অশ্বিনের এই ভঙ্গি।

এত রাগ কেন অশ্বিনের? অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে গিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই সময় তো রাগ দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে। তবে এখন কেন রাগেন? ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মে তাপমাত্রা কলকাতার মতো প্রচণ্ড না বাড়লেও ভারতীয় দলের সাজঘরের তাপমাত্রা যে বেশ কিছুটা উষ্ণ ছিল তার কিছু আভাস পাওয়া গিয়েছিল। অধিনায়ক বিরাট কোহলীর বিরুদ্ধে বোর্ডের কাছে বেশ কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার অভিযোগ করেন বলেও শোনা যায়। সেই সিরিজে একটি ম্যাচেও প্রথম একাদশে জায়গা পাননি অশ্বিন।

জো রুট জানিয়েছিলেন অশ্বিনকে নিয়ে চিন্তা রয়েছে। কিন্তু কোহলীরা তাঁকে দলেই রাখেননি। টসের পর বিরাট বলেছিলেন, ‘‘আসলে, ইংল্যান্ড দলে অনেক বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান রয়েছে। তাদের সমস্যায় ফেলতে পারে রবীন্দ্র জাডেজার বোলিং।’’ অশ্বিনকে দলে না নেওয়ার এমন যুক্তি অবাক করেছিল ক্রিকেট মহলকে।

এর মাঝেই আসে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার নিক কম্পটনের টুইট। তিনি লেখেন, ‘কেউ কি আমায় ব্যাখ্যা করতে পারেন যে কেন কোহলীর সঙ্গে অশ্বিনের ব্যক্তিগত সমস্যা দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বার বার প্রভাব ফেলছে?’ ভারতীয় দলের সিদ্ধান্তকে খোঁচা দেন অশ্বিনের স্ত্রী প্রীতিও। একটি ভিডিয়ো টুইট করেন তিনি। যেখানে দেখা গিয়েছে গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে দূরবীন দিয়ে কিছু দেখছেন তাঁর মেয়ে। সঙ্গের ক্যাপশনে প্রীতি লিখেছেন, ‘অশ্বিনকে খোঁজার চেষ্টা চলছে।’

দলে বাদ পড়া নিয়ে অশ্বিন যখন শিরোনামে, সেই সময় সবাইকে অবাক করে টি২০ বিশ্বকাপের দলে ঢুকে পড়েন ভারতীয় স্পিনার। নিন্দকেরা বলেন, “এটা তো সান্ত্বনা পুরস্কার।” সাদা বলের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে অশ্বিন কোথাও নজর কেড়েছেন সেটাও হয়তো দূরবীন দিয়েই খুঁজতে হত। দেশের হয়ে তার চার বছর আগে শেষ টি২০ খেলা অশ্বিন বিশ্বকাপে নীল জামা পরে মাঠে নেমে পড়লেন। কিন্তু পাকিস্তান বা নিউজিল্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নয়। সেই সব ম্যাচে ‘বিস্ময়’ স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীর উপর ভরসা রেখেছিল দল। ফল কী হয়েছিল তা সকলেরই জানা। অশ্বিন যখন সাদা বল হাতে নিলেন, তখন বিশ্বকাপ থেকে কার্যত বিদায় ঘটে গিয়েছে কোহলীদের।

দলে থেকে ব্রাত্য হওয়ার যন্ত্রণা কী তা একজন ক্রিকেটার মাত্রই জানেন। আর তিনি যদি টেস্টে ৪০০ উইকেট নেওয়া কোনও কেউকেটা হয়ে থাকেন, তবে যে সেই জ্বালা আরও বেশি হবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই। জ্বালা, যন্ত্রণার পর্ব কাটিয়ে এখন ভারতীয় দলে নিয়মিত অশ্বিন। কিন্তু ক্ষোভ বেড়েছে সাজঘরে বসে? সেটাই কি ফুটে বার হয়ে আসছে মাঠে?

ভারতীয় দলে আগ্রাসন, আক্রমণাত্মক ভঙ্গি বলতে কোহলীর মুখ মনে পড়ে সমর্থকদের। কিন্তু কখনও কখনও তাঁকেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন অশ্বিন। কানপুরে কোহলী না থাকায় তাঁর সহকারী রহাণে রয়েছেন দায়িত্বে। শান্ত বলেই পরিচিত তিনি। ব্যাটে রান না থাকায় আরও বেশি চুপ করে গিয়েছেন বলেও মনে হচ্ছে। এমন অবস্থায় মাঠে মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছে ‘অগ্নিশর্মা’ অশ্বিনকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE