জশ টংয়ের বল কভার দিয়ে চার মেরে হেলমেট খুলে দৌড়লেন শুভমন গিল। তার পর হুঙ্কার ছাড়লেন। দূরে দাঁড়িয়ে তার সাক্ষী থাকলেন জো রুট, বেন স্টোকসেরা। যে ইংল্যান্ডের মাটিতে এর আগে চারটে টেস্টে মাত্র ৮৮ রান করেছিলেন তিনি, সেখানে অধিনায়ক হিসাবে প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে এল শতরান। দাপট দেখালেন ভারত অধিনায়ক। ১৪০ বলে শতরান করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চান।
শুভমন ঢুকে পড়লেন বিজয় হজারে, সুনীল গাওস্কর, বিরাট কোহলির ক্লাবে। এর আগে এই তিন ভারতীয় অধিনায়ক হিসাবে প্রথম টেস্টে শতরান করেছিলেন। ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই অধিনায়ক হিসাবে অপরাজিত ১৬৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন হজারে। ১৯৭৬ সালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১১৬ রান করেছিলেন গাওস্কর। তার পরে দীর্ঘ অপেক্ষা। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের মাঝপথে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি টেস্ট থেকে অবসর নিলে অধিনায়ক করা হয় কোহলিকে। প্রথম টেস্টেই ১১৫ রান করেছিলেন তিনি। সেই ক্লাবে ঢুকলেন শুভমন।
হেডিংলেতে নামার আগে শুভমন জানিয়েছিলেন, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি না থাকলেও কোনও চিন্তা নেই। তাঁরা জিতবেন। কিন্তু জিততে গেলে তো ভাল খেলতে হবে। সেটাই শুক্রবার দেখা গেল। টস হেরেছিলেন শুভমন। ইংল্যান্ডের মাটিতে শুরুতে ব্যাট করতে হয়েছিল। শুভমন নিজেও জানিয়েছিলেন, টস জিতলে বল করতেন। তবে টস হারা হয়তো শাপে বর হল। শুরুর এক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর তেমন কিছু করতে পারলেন না বোলারেরা। বল সুইং করল। বেশ কিছু বল ব্যাট ঘেঁষে বার হল। কিন্তু লাগাতার ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারলেন না ইংরেজ বোলারেরা।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ব্যাট করতে নামেন শুভমন। তাঁকে দেখে মনে হল, নেটে দু’ঘণ্টা ব্যাটিং করে নেমেছেন। শুরু থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট খেললেন। বড় শট খেলতে ভয় পাননি। প্রথম ৩০ রান ১০০-র স্ট্রাইক রেটে করেন তিনি। ৫০ রান করেন মাত্র ৫৫ বলে। মনে হচ্ছিল না, টেস্ট খেলছেন। পেসার থেকে স্পিনার— কারও সামনেই সমস্যায় পড়লেন না শুভমন।
আরও পড়ুন:
অর্ধশতরানের পরেও রানের গতি কমাননি শুভমন। তাঁকে আটকানোর জন্য একটা পরিকল্পনা করেছিলেন ইংরেজ বোলারেরা। লেগ সাইডে ছ’জন ফিল্ডার রেখে ক্রমাগত শরীর লক্ষ্য করে শর্ট বল করেছেন। তাতেও শুভমনকে আটকানো যায়নি। কখনও পুল শটে ফাইন লেগের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরেছেন। কখনও মিড অন দিয়ে পুল মেরেছেন। আবার কখনও লেগ সাইডে সরে গিয়ে কভার দিয়ে চার মেরেছেন। তাঁকে কোনও ভাবেই সমস্যায় ফেলতে পারছিলেন না ইংরেজ বোলারেরা। শুভমনের চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বড় রান করে তবেই থামবেন।
শেষ পর্যন্ত টংয়ের বলে কভার অঞ্চলে চার মেরে নিজের শতরান পূর্ণ করলেন শুভমন। ১৫টা চার মেরেছেন তিনি। তার পরে আবার গার্ড নিলেন ভারত অধিনায়ক। মারলেন ইনিংসের প্রথম ছক্কা। দিনের শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে অপরাজিত তিনি। দ্বিতীয় দিন দ্বিশতরানের হাতছানি রয়েছে তাঁর সামনে। এখন দেখার অধিনায়ক হিসাবে প্রথম টেস্টে দ্বিশতরানের নজির তিনি গড়তে পারেন কি না।