ব্রাইডন কার্সের বল হালকা হাতে পয়েন্ট অঞ্চলে খেলে সিঙ্গল নেওয়ার সময়ই হেলমেট খুলে ফেললেন যশস্বী জয়সওয়াল। অপর প্রান্তে পৌঁছে মারলেন এক বিরাট লাফ। কিছু ক্ষণ আগেও পায়ের টানে সমস্যা হচ্ছিল। তখন অবশ্য সব ব্যথা উধাও। শতরানের উল্লাসে শিশুর মতো লাফাচ্ছেন যশস্বী। জড়িয়ে ধরলেন অপর প্রান্তে থাকা অধিনায়ক শুভমন গিলকে। সাজঘরেও তখন সকলে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। হেডিংলের মাঠে ইতিহাস তৈরি করলেন ভারতীয় ব্যাটার।
যশস্বীই ভারতের একমাত্র ওপেনার যিনি হেডিংলের মাঠে শতরান করেছেন। এর আগে এই মাঠে ভারতীয় ওপেনার হিসাবে সর্বাধিক রান করেছিলেন ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ৮৭ রান টপকালেন যশস্বী। আরও একটা নজির গড়েছেন তিনি। ভারতের পঞ্চম ব্যাটার হিসাবে ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম টেস্টে শতরান করেছেন যশস্বী। এর আগে বিজয় মঞ্জরেকর (১৯৫২ সালে ১৩৩ রান), সন্দীপ পাতিল (১৯৮২ সালে ১২৯ রান), সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৬ সালে ১৩১ রান) ও মুরলী বিজয় (২০১৪ সালে ১৪৬ রান) ইংল্যান্ডের মাঠে প্রথম টেস্ট শতরান করেছিলেন। তাঁদের ক্লাবে যোগ দিলেন যশস্বী। শেষ পর্যন্ত ১০১ রান করে আউট হলেন তিনি।
আরও একটা নজির গড়েছেন যশস্বী। টেস্ট কেরিয়ারে চারটে সফরে গিয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে বাকি তিনটে সফরে প্রথম টেস্টেই শতরান করেছেন তিনি। এই নজিরও অন্য কোনও ভারতীয় ব্যাটারের নেই।
ইংরেজ বোলারদের খুব পছন্দ করেন যশস্বী। তাঁর পরিসংখ্যান সে কথা বলে। গত বছর ভারত সফরে এসেছিল ইংল্যান্ড। সেই সিরিজ়ে পাঁচ টেস্টে ৭১২ রান করেছিলেন যশস্বী। দুটো দ্বিশতরানের ইনিংস খেলেছিলেন ভারতীয় ওপেনার। বিশাখাপত্তনমে প্রথম ইনিংসে ২০৯ ও রাজকোটে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এ বার করলেন ১০১ রান। টেস্ট কেরিয়ারে যশস্বীর পাঁচটা শতরানের মধ্যে তিনটেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
তবে এর আগে যে চারটে শতরান যশস্বী করেছেন তার মধ্যে এই শতরানকে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে রাখবেন তিনি। এর সঙ্গে লড়াই হবে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের বিরুদ্ধে করা ১৬১ রানের ইনিংস। তার একমাত্র কারণ ইংল্যান্ডের পিচ ও আবহাওয়া। টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিতে একবারও ভাবেননি ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস। ভারত অধিনায়ক শুভমনও জানিয়েছিলেন, টস জিতলে তিনি বল নিতেন। এর থেকেই পরিষ্কার, মেঘলা আবহাওয়ায় শুরুতে ব্যাট করা সহজ ছিল না।
আরও পড়ুন:
শুরুতে সমস্যা হচ্ছিল যশস্বীর। ইংরেজ বোলারেরা মূলত অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল বা গুড লেংথে বল করছিলেন। তাঁরা চাইছিলেন যশস্বী ড্রাইভ মারার চেষ্টা করুক। এই মাঠে ড্রাইভ মারা সহজ নয়। ফাঁদে পা দেননি যশস্বী। তাড়াহুড়ো করেননি। বল ব্যাটে আসতে দিচ্ছিলেন। থার্ড ম্যান ও পয়েন্ট অঞ্চলে রান নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ধীরে ধীরে থিতু হওয়ার পর হাত খোলেন তিনি। কভারের উপর দিয়ে একটা দর্শনীয় ছক্কাও মারেন তিনি।
তবে তার মধ্যেই বেশ কিছু বল তাঁর ব্যাটের কানা ঘেঁষে যাচ্ছিল। সেই বলগুলো মারার চেষ্টা করছিলেন যশস্বী। পারছিলেন না। পরিসংখ্যান বলছে এই ইনিংসে ২৭.৯ শতাংশ ফল্স শট মেরেছেন তিনি। অর্থাৎ, শট মারতে গিয়ে ব্য়াটে-বলে করতে পারেননি। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে টেস্টে শতরানের ইনিংসে এটাই সর্বাধিক ফল্স শট। অর্থাৎ, কষ্ট করে তিন অঙ্কে পৌঁছোছেন তিনি। হাল ছাড়েননি।
যশস্বীর এই ইনিংসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তাঁর বড় শটের সংখ্যা। ১০১ রানের মধ্যে ১৬টা চার ও একটা ছক্কা মেরেছেন তিনি। অর্থাৎ, ৭০ রান তিনি করেছেন বাউন্ডারিতে। ১৫৯ বলের মধ্যে ১৭টা বলে এসেছে এই ৭০ রান। বাকি ১৪২ বলে করেছেন ৩১ রান। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, খারাপ বল ছাড়েননি যশস্বী। তৈরি থেকেছেন। অপেক্ষা করেছেন। লড়েছেন। আর সেই লড়াইয়ে ভর করে রেকর্ড গড়েছেন তিনি।