রিকি পন্টিং এবং শ্রেয়স আয়ার। নতুন কোচ-অধিনায়ক জুটি আইপিএলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পঞ্জাব কিংসকে। দু’জনেই বিতাড়িত! গত বছর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও অধিনায়ক শ্রেয়সকে তাড়িয়ে দিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষ। দিল্লি ক্যাপিটালস ভরসা রাখতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক পন্টিংয়ের উপর।
এই মুহূর্তে সাদা বলের ক্রিকেটে দেশের অন্যতম সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটার শ্রেয়স। ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ বা গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দলের সাফল্যের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল শ্রেয়সের। আইপিএলেও ফর্মে আছেন। ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ তাঁর নেতৃত্বে ১০ বছরের ট্রফির খরা কাটিয়েও ধরে রাখার কথা ভাবেননি কেকেআর কর্তৃপক্ষ। নিলামের আগে শ্রেয়সের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতা হয়নি। নিলামেও শ্রেয়সের জন্য সে ভাবে ঝাঁপাতে দেখা যায়নি বেঙ্কি মাইসোরদের (কেকেআর সিইও)।
অন্য দিকে, পন্টিংয়ের উপর ভরসা রাখতে পারেননি দিল্লি কর্তৃপক্ষও। অস্ট্রেলিয়ার তিনটি এক দিনের বিশ্বকাপ এবং দু’টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিজয়ী দলের সদস্য পন্টিং। অধিনায়ক হিসাবে দুই প্রতিযোগিতাতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন দু’বার করে। ক্রিকেটজীবনে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসাবে বিবেচিত হতেন। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দিল্লির কোচের দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু প্রত্যাশিত ফল না হওয়ায় গত আইপিএলের পর তাঁকে বিদায় জানানো হয়।
দিল্লির বিতাড়িত পন্টিংয়ের সঙ্গে চুক্তি করতে দেরি করেননি পঞ্জাব কর্তৃপক্ষ। আবার আইপিএলের নিলামে শ্রেয়সের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপান তাঁরা। অভিজ্ঞ কোচ এবং অধিনায়কের উপর আস্থা রাখার সুফল পাচ্ছে পঞ্জাব। পন্টিং এবং শ্রেয়সের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। বেশি কথা বলেন না কেউ। দু’জনেই একটু চাপা স্বভাবের। কাজে করে দেখাতে পছন্দ করেন তাঁরা। কোচ-অধিনায়কের সম্পর্কের এই রসায়নও পঞ্জাবের ভাল খেলার অন্যতম উপাদান।
কোচ এবং অধিনায়ক পরস্পরের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করেন। একে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেন। কোচ পন্টিং তাঁর অধিনায়ককে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতাও দেন। নিজে অধিনায়ক থাকার সময় যে ধরনের স্বাধীনতা চাইতেন, তেমন স্বাধীনতা দেন শ্রেয়সকেও। যেমন লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ম্যাচে শ্রেয়স চেয়েছিলেন জস ইংলিসকে ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে তুলে আনতে। পন্টিং আপত্তি করেননি। তার সুফলও পেয়েছে পঞ্জাব। ম্যাচের পর শ্রেয়সের ক্রিকেট- ভাবনার প্রশংসাও করেছেন কোচ। পারস্পরিক এই ভরসাই পঞ্জাবের কাজ মসৃণ করছে।
অধিনায়ক শ্রেয়সকে নিয়ে পন্টিংয়ের মূল্যায়ন, ‘‘আগের থেকে শ্রেয়স এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী। অভিজ্ঞতা ওকে সাহায্য করছে। যে কোনও পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নিজের সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারে। যে কোনও অধিনায়কের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘গত বছর আইপিএল জয় শ্রেয়সকে বদলে দিয়েছে। অনুশীলনে, ম্যাচে বা হোটেলে সতীর্থদের সঙ্গে সহজ, স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে। দলের সবাই ওকে পছন্দ করে। যা একজন অধিনায়কের বড় শক্তি।’’
আরও পড়ুন:
খেলোয়াড়দের সঙ্গে অধিনায়কের সমীকরণের মধ্যে ঢোকেন না কোচ পন্টিং। তিনি মূলত রণকৌশল তৈরি করেন। কারও কোথাও সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টা করেন। শ্রেয়স ছাড়া দলের অন্য ক্রিকেটারদের মতামতকেও গুরুত্ব দেন। প্রয়োজনে তাঁদের পরামর্শও কাজে লাগান। কারও উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন না। শৃঙ্খলা বজায় রেখেও সাজঘরের পরিবেশ খোলামেলা রাখেন। কোচ পন্টিংকে নিয়ে খুশি পঞ্জাবের ক্রিকেটারেরাও। আইপিএলের মাঝে দলের একাধিক ক্রিকেটার সে কথা বলেছেন। পন্টিংয়ের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে সাফল্য পাওয়ার কথা বলেছেন।
দিল্লির কোচ থাকার সময় পন্টিং সারা বছর যোগাযোগ রাখতেন ঋষভ পন্থের সঙ্গে। দলের অন্য ক্রিকেটারদের জন্যও তাঁর ফোন সব সময় খোলা থাকত। বছরের যে কোনও সময় যে কোনও ক্রিকেটীয় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। চেষ্টা করতেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশার। সেই দর্শনেই পঞ্জাব শিবির সামলাচ্ছেন পন্টিং।
কোচ-অধিনায়কের এই যুগলবন্দি আশার আলো দেখাচ্ছে কখনও আইপিএল জিততে না পারা পঞ্জাব কর্তৃপক্ষকেও। ঘরের মাঠে ১১১ রানের পুঁজি নিয়েও কেকেআরকে ১৬ রানে হারিয়েছিলেন শ্রেয়সেরা। আসলে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে হাল ছাড়ছেন না পঞ্জাবের ক্রিকেটারেরা। একদম শেষ পর্যন্ত লড়াই করার অস্ট্রেলীয় মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছেন পন্টিং। তাঁর পরিকল্পনা শ্রেয়সের নেতৃত্বে নিখুঁত ভাবে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছেন অর্শদীপ সিংহ, যুজবেন্দ্র চহলেরা। আছেন প্রভসিমরন সিংহ, প্রিয়ংশ আর্যের মতো তরুণ। অভিজ্ঞতা-তারুণ্যের ভারসাম্যযুক্ত দলও তাই দৌড়চ্ছে।
এ বারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১১টি ম্যাচ খেলে ৭টি জিতেছে পঞ্জাব। কেকেআরের সঙ্গে ইডেন গার্ডেন্সের ম্যাচটি বৃষ্টির জন্য বাতিল হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পঞ্জাব। প্লে-অফ খেলা প্রায় নিশ্চিত।