কোথায় গেল ‘বাজ়বল’ (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নামে টেস্টে তাদের দ্রুতগতিতে খেলার ধরনকে এই নামে ডাকা হয়)? কোথায় গেল সেই ভয়ডরহীন ব্যাটিং? কোথায় গেল উইকেট পড়লেও বড় শট খেলার প্রবণতা? বদলে লর্ডসে দেখা গেল ধ্রুপদী ক্রিকেট। সেই ধৈর্য ধরে ব্যাট করা। উইকেট ছুড়ে না আসা। বোলারকে সম্মান জানিয়ে খারাপ বলের অপেক্ষা করা। এজবাস্টনে হারের পর লর্ডসে খেলার ধরনই বদলে ফেলল ইংল্যান্ড। ফলে উইকেট তুলতে সমস্যা হল ভারতেরও। প্রথম দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ডে রান ৪ উইকেটে ২৫১। ৯৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন জো রুট। টেস্টে নিজের ৩৭ নম্বর শতরানের সামনে তিনি। সঙ্গে রয়েছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। ৩৯ রান করে খেলছেন তিনি।
এজবাস্টনে ৩৩৬ রানে হারের পর লর্ডসে ইংল্যান্ড কী ভাবে ব্যাট করে সে দিকেই সকলের নজর ছিল। এই টেস্ট শুরুর দু’দিন আগে দেখা যাচ্ছিল লর্ডসের উইকেট সবুজ। ভারত অধিনায়ক শুভমন গিলও বলেছিলেন, লর্ডসে ব্যাট করা অত সহজ হবে না। কিন্তু কোথায় কী? ম্যাচের দিন দেখা গেল, সব ঘাস কেটে ফেলা হয়েছে। পাটা উইকেট। সেখানে যে ভাবে সাবধানি ব্যাটিং ইংল্যান্ড করল, তাতে বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় বোলারদের ভয় এখনও তাদের মনের মধ্যে রয়েছে। নইলে এই উইকেটে এত ধীরে ব্যাট ইংল্যান্ডের মতো দলের কাছে কেউ আশা করেননি। ‘বাজ়বল’ থেকে সরতে বাধ্য হয়েছে ইংল্যান্ড। সারা দিন ধরে উইকেট তোলার অনেক চেষ্টা করেছে ভারত। বুমরাহ, আকাশদীপেরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু উইকেট থেকে কোনও সাহায্য পাননি তাঁরা। এই উইকেটে বাউন্সও খুব কম। প্রথম দিনই অনেক বল দুই ড্রপে উইকেটরক্ষকের কাছে গিয়েছে। এই পিচে উইকেট তোলা যে সহজ নয় তা প্রথম দিনই বোঝা গিয়েছে।
ভারত-ইংল্যান্ড তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনের স্কোরকার্ড। গ্রাফিক - আনন্দবাজার ডট কম।
টস জিতে স্টোকসের প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা গিয়েছিল, রান তাড়া করার কথা আর ভাবছে না তারা। তখনই ইঙ্গিত মিলেছিল, খেলার ধরনেও হয়তো বদল হবে। হলও সেটা। এই টেস্টে ফিরেছেন জসপ্রীত বুমরাহ। পাশে গত টেস্টে ১৭ উইকেট নেওয়া আকাশদীপ ও মহম্মদ সিরাজ। ভারতের পেস আক্রমণের সামনে ধীরে খেলো নীতি নিলেন বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলি। তাঁদের খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, স্বাভাবিক খেলার বিপরীত ব্যাট করছেন। তার মাঝেও কয়েক বার ঝুঁকি নিয়ে শট খেলার চেষ্টা করছিলেন ক্রলি। কিন্তু ভারতীয় পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তা হচ্ছিল না।
ভারতের প্রধান তিন পেসারকে সামলে নেন দুই ওপেনার। দেখে মনে হচ্ছিল, চাপের সময় কাটিয়ে উঠেছেন তাঁরা। তখনই ধাক্কা খেল ইংল্যান্ড। নীতীশ রেড্ডি নিজের প্রথম ওভারেই ডাকেট ও ক্রলিকে ফেরত পাঠালেন। জোড়া ধাক্কার পর দেখা গেল পুরনো রুটকে। যে রুট শুরু থেকে রিভার্স সুইপ মারার চেষ্টা করেন না। সোজা ব্যাটে রান করেন। বড় ইনিংস খেলার মানসিকতা নিয়ে নামেন। তাঁকে সাহায্য করলেন ওলি পোপ। দুই ব্যাটারই এজবাস্টনে রান পাননি। তাই এই টেস্ট তাঁদের কাছে জবাব দেওয়ার মঞ্চ ছিল। মধ্যাহ্নভোজ ও চা বিরতির মাঝে তাঁদের আউট করতে পারেননি ভারতীয় বোলারেরা।
আগের ম্যাচের নায়ক আকাশদীপ এই টেস্টের প্রথম দিন উইকেট পেলেন না। সবচেয়ে বেশি রানও দিলেন তিনি। তবে খারাপ বল করেননি আকাশদীপ। ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি তাঁকে। বেশ কিছু বল ব্যাটের পাশ দিয়ে বেরিয়েছে। কিন্তু লাগেনি। কয়েকটা ক্ষেত্রে অল্পের জন্য এলবিডব্লিউ হয়নি। উইকেট পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বুমরাহকেও। হেডিংলেতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ ওভার বল করে উইকেট পাননি তিনি। এজবাস্টনে খেলেননি। লর্ডসে প্রথম উইকেট পেতে তাঁর লাগল ১৫ ওভার।
চা বিরতির পর প্রথম বলেই ৪৪ রানের মাথায় পোপকে আউট করে ভারতকে খেলায় ফেরান রবীন্দ্র জাডেজা। হ্যারি ব্রুক রান পাননি। ১১ রানের মাথায় তাঁকে আউট করেন বুমরাহ। ঠিক যখন মনে হচ্ছে ভারত খেলায় ফিরছে, তখন আবার জুটি বাঁধলেন রুট। এ বার অধিনায়ক স্টোকসের সঙ্গে। দেড়শো বল খেলার পর প্রথম রিভার্স সুইপ মারলেন রুট। বোঝা যাচ্ছিল, বড় রান করার জন্য কতটা মরিয়া তিনি। স্টোকসও ধৈর্য ধরে খেললেন। মাঝে হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যায় তাঁর রান নিতে সমস্যা হলেও তাড়াহুড়ো করেননি ইংরেজ অধিনায়ক।
আরও পড়ুন:
প্রথম দিন ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের থেকেও ভারতের চিন্তা বাড়ালেন ঋষভ পন্থ। দ্বিতীয় সেশনে বুমরাহের একটা বল ধরতে গিয়ে বাঁহাতের আঙুলে চোট পান পন্থ। মাঠে কিছু ক্ষণ চিকিৎসা চলে। তার পরেও কিপিং করতে পারেননি তিনি। উঠে যান। বদলে নামেন ধ্রুব জুরেল। প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনিই মাঠে ছিলেন। পন্থকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল যথেষ্ট যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর চোট কতটা গুরুতর তা এখনও জানা যায়নি। উইকেটরক্ষক পন্থের থেকেও ব্যাটার পন্থকে ভারতের বেশি দরকার। তিনি ব্যাট করতে পারবেন কি না তা-ও এখনও জানা যায়নি।
চলতি সিরিজ়ে প্রথম বড় রান এল রুটের ব্যাট থেকে। ইংরেজ সমর্থকেরা চাইছিলেন রুট ফর্মে ফিরুন। লর্ডসে ফিরলেন তিনি। খেলার ধরন বদলে তিনি সফল। ১৯১ বল খেলে ৯৯ রানে অপরাজিত ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটার। তিনি যে ভাবে খেলছেন তাতে দ্বিতীয় দিন তাঁকে তাড়াতাড়ি ফেরাতে না পারলে চিন্তা বাড়বে ভারতের।