সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টের একটি নির্দেশ মহম্মদ শামির বিপক্ষে গিয়েছে। স্ত্রী হাসিন জাহানকে প্রতি মাসে দেড় লক্ষ এবং মেয়ের জন্য প্রতি মাসে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তার পর আবার শামির উদ্দেশে তোপ দেগেছেন হাসিন। তাঁর দাবি, শামির খারাপ সময় এ বার শুরু হয়েছে।
সমাজমাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট লিখেছেন হাসিন। সেখানে শুরুতেই শামির উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। তবে হাসিনের উদ্দেশ্য বোঝা গিয়েছে তার পরেই। ব্যঙ্গ করে শামির উদ্দেশে লিখেছেন, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সম্পর্ক রাখবেন। হাসিন লিখেছেন, “সাত বছর ধরে আইনি লড়াই লড়ছি। কী লাভ হল তোমার? চরিত্রহীন, লোভী, ছোট মনের মানুষ হওয়ার জন্য নিজের পরিবার শেষ করে দিলে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “আমাদের মেরে ফেলার জন্য, বদনাম করার জন্য, সমস্যায় ফেলার জন্য কত জন দুষ্কৃতিকে তুমি খুঁজেছ। কিছু লাভ হয়েছে? যে পয়সা ওদের দিয়েছ সেটা যদি নিজের মেয়ের পড়াশোনা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য খরচ করতে এবং আমাকে সম্মান করতে তা হলে কত ভাল হত। একটা সম্মানের জীবন অন্তত দিতে পারতে।”
হাসিন জানিয়েছেন, হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের অধিকার পাওয়ার জন্য তিনি লড়়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফায়দা তুলে শামি যতই তাঁকে কলুষিত করার চেষ্টা করুন, লাভ কিছুই হবে না বলে জানিয়েছেন হাসিন। তাঁর দাবি, যে লোকেরা শামির পাশে এখন রয়েছেন তাঁরাই খারাপ সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটারের জীবন শেষ করে দেবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মডেল এবং অভিনেত্রী জাহানের সঙ্গে বিয়ে হয় শামির। ২০১৫ সালে তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্য সুখের হয়নি। ২০১৮ সালে যাদবপুর থানায় শামি এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেন জাহান। স্ত্রী নির্যাতন, বিষ খাওয়ানো, খুনের চেষ্টা, ধর্ষণ-সহ একাধিক অভিযোগ করা হয় শামির বিরুদ্ধে। বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আদালতেরও দ্বারস্থ হন জাহান। প্রোটেকশন অফ উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট ২০০৫ অনুযায়ী মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার খরচ এবং অন্তর্বর্তিকালীন ভরণপোষণ বাবদ ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। নিজের জন্য মাসে ৭ লাখ এবং মেয়ের জন্য মাসে ৩ লাখ টাকা চান। কিন্তু নিম্ন আদালতে তাঁর এই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। আলিপুর আদালত শুধুমাত্র তাঁর সন্তানকে ৮০,০০০ টাকা প্রতি মাসে দেওয়ার নির্দেশ দেয় শামিকে। পরে জেলা জজ সেই নির্দেশ সংশোধন করে জাহানকেও মাসে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন জাহান। তাঁর আইনজীবী বলেন, মাসে জাহানের আয় ১৬ হাজার টাকা। ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত থেকে সুদ বাবদ এই টাকা পান তিনি। এই টাকায় তাঁর এবং কন্যার খরচ চালানো সম্ভব নয়। অথচ শামির সঙ্গে থাকার সময় থেকে তাঁরা ব্যয়বহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে তাঁর প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা। অন্য দিকে, তাঁর প্রাক্তন স্বামীর ২০২০-২১ অর্থ বর্ষের আয় প্রায় ৭.১৯ কোটি টাকা। সামর্থ্য থাকতেও তিনি টাকা দিতে চাইছেন না।
আরও পড়ুন:
শামি এর জবাবে আদালতকে জানান, তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী একজন সফল মডেল এবং অভিনেত্রী। বিজ্ঞাপনেও কাজ করেন। তাঁর মাসিক আয় অন্তত ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে তাঁর বেশ কিছু আমানত রয়েছে। তথ্য গোপনের অভিযোগও করেন শামি।
জোরে বোলারের যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শামিকে অন্তর্বর্তিকালীন ভরণপোষণ বাবদ মাসে ৪ লাখ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। একই সঙ্গে নিম্ন আদালতকে মূল মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি (৬০ দিন) করার নির্দেশ দিয়েছেন।