চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে ভারত। অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রোহিত শর্মারা। পাঁচটি ম্যাচে বিপক্ষের ৫০টি উইকেটের মধ্যে ৪৭টি তুলে নিয়েছেন ভারতীয় দলের বোলারেরা। ফাইনাল ছাড়া সব ম্যাচে প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছেন তাঁরা। প্রতিযোগিতায় সাফল্যের কৃতিত্ব দলের বোলারদের দিয়েছেন ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীর। তাঁর যুক্তি কতটা সঠিক, খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।
নভজ্যোৎ সিংহ সিধু ফাইনালের পর গম্ভীরকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছিলে ছ’জন বোলার খেলিয়ে। ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের শেষ দিকে আমরা বিরাট কোহলিকেও বল করতে দেখেছিলাম। ভারতীয় ক্রিকেটে কি নতুন ধারণা তৈরি হয়েছে? ছ’জন বোলার নিয়ে খেলার পরিকল্পনা নিয়ে তোমার মতামত কী?’’
ভারতীয় দলের কোচ উত্তরে বলেন, ‘‘শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় থেকেই আমরা ছ’জন বোলার নিয়ে খেলছি। ওই সিরিজ়টা আমরা হেরেছিলাম। তোমার হয়তো মনে থাকবে, রিয়ান পরাগকে আমরা ষষ্ঠ বোলার হিসাবে ব্যবহার করতাম। তার আগে আমরা পাঁচ বোলার নিয়ে প্রথম একাদশ তৈরি করতাম। ৩০ গজের বৃত্তের মধ্যে পাঁচ জন ফিল্ডার থাকে। দু’প্রান্ত থেকে দুটো নতুন বল ব্যবহার হয়। ফলে পাঁচ জন বোলার থাকলে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়।’’ গম্ভীর আরও বলেছেন, ‘‘প্রথম দিন থেকেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, ছ’জন বোলার নিয়ে খেলব। তার জন্য ব্যাটিং শক্তি নিয়ে কিছুটা আপস করতে হলে করব। কারণ বোলারেরাই প্রতিযোগিতা জেতায়। ব্যাটারেরা শুধু ছন্দ তৈরি করে দিতে পারে। একটা ম্যাচ জেতাতে পারে। প্রতিযোগিতা জেতায় কিন্তু আসলে বোলারেরাই।’’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রতিটি ম্যাচেই তিন জন করে বিশেষজ্ঞ বোলার এবং অলরাউন্ডার নিয়ে প্রথম একাদশ তৈরি করেছেন গম্ভীর। তাঁর পরিকল্পনার সুফলও প্রমাণিত। তিনি কি ঠিক? বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক তথা প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় গম্ভীরের কথাকেই সমর্থন করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বলা হয় ক্রিকেট ব্যাটারদের খেলা। ডন ব্র্যাডম্যান থেকে সুনীল গাওস্কর, ভিভ রিচার্ডস বা এখনকার বিরাট কোহলিরাই নায়কের সম্মান পেয়েছে। ব্যাটারেরা ম্যাচ বাঁচাতে পারে বা ড্র করতে পারে। জেতায় আসলে বোলারেরাই। জিততে হলে প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে হয়। সেটা তো বোলারেরাই করে। এই জন্যই আলাদা করে শেন ওয়ার্নের নাম বলা হয়।’’ বাংলার প্রাক্তন বোলার সৌরাশিস লাহিড়ীও সহমত গম্ভীরের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটাই ক্রিকেটের ধ্রুব সত্য। ব্যাটারেরা যত রানই করুক, বোলারেরা প্রতিপক্ষের সব উইকেট তুলতে না পারলে ম্যাচ জেতা যায় না। দলের রানের মধ্যে প্রতিপক্ষকে আটকে রাখার কাজটা বোলারদেরই করতে হয়। টেস্ট ম্যাচে ব্যাটারেরা হাজার রান করলেও ম্যাচ জেতা যায় না, যদি না বোলারেরা ২০টা উইকেট নিতে পারে। একজন ব্যাটার হয়তো বড় রানের ইনিংস খেলে একটা ম্যাচ জেতাতে পারে। কিন্তু প্রতিযোগিতা জিততে হলে সব ম্যাচ জিততে হয়। সেই কাজটা বোলারেরাই করে।’’
গম্ভীরের ছ’জন বোলার নিয়ে দল সাজানোর পরিকল্পনাকেও সমর্থন করছেন বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। তাঁদের বক্তব্য, এক জন বা দু’জন বোলারের খারাপ দিন গেলে লড়াই করার মতো উপায় থাকে না পাঁচ জন বোলার হলে। ছ’জন বোলার দলে থাকলে বিকল্প বেশি থাকে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াও সহজ হয়।