Advertisement
E-Paper

‘পাটা রাস্তা’-য় এসেও মুখ থুবড়ে পড়লেন পন্থেরা! টেস্ট ব‍্যাটিংয়ের অ-আ-ক-খ ভুলে গম্ভীরের ছাত্রেরা প্রমাণ করলেন মাস্টারমশাই-ই ঠিক

ভারতের ব্যাটিংয়ের যা হাল, তাতে পিচ কোনও বিষয় নয়। ইডেনের ঘূর্ণি উইকেটই হোক, বা গুয়াহাটির পাটা উইকেট, হাল একই হবে। ঠিক এই কথাটাই তো বলেছিলেন গৌতম গম্ভীর।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৫০
cricket

আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন একের পর এক ভারতীয় ব্যাটার। ছবি: পিটিআই।

কুলদীপ যাদব গুয়াহাটি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষে বলেছিলেন, এই উইকেট পাটা রাস্তার মতো। গুয়াহাটির সেই পাটা রাস্তাতেও গাড়ি চালাতে পারলেন না ভারতীয় ব্যাটারেরা। মুখ থুবড়ে পড়লেন একের পর এক ব্যাটার। তাঁরা প্রমাণ করে দিলেন, ভারতের ব্যাটিংয়ের যা হাল, তাতে পিচ কোনও বিষয় নয়। ইডেনের ঘূর্ণি উইকেটই হোক, বা গুয়াহাটির পাটা উইকেট, হাল একই হবে। ঠিক এই কথাটাই তো বলেছিলেন গৌতম গম্ভীর। ইডেনে আড়াই দিনে টেস্ট হারের পর বলেছিলেন, উইকেটের দোষ দিয়ে কী হবে? ভাল ব্যাট করতে হবে। নইলে জেতা যাবে না। গম্ভীরই যে ঠিক তা প্রমাণ করে দিলেন সাই সুদর্শন, ধ্রুব জুরেল, নীতীশ কুমার রেড্ডিরা।

এই পিচেই দু’দিন ব্যাট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই পিচেই সেনুরান মুথুস্বামী শতরান করেছেন। ৯৩ রানের ইনিংস খেলেছেন মার্কো জানসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার নীচের সারির ব্যাটারেরা ২৬৪ রান করেছেন। যে পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় ১২ ঘণ্টা ব্যাট করেছে, সেখানে দু’ঘণ্টা ব্যাট করতেও হিমশিম খেল ভারত। যে ভাবে তারা আউট হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কোথায় টেস্ট খেলার মানসিকতা? কোথায় ধৈর্য? কোথায় খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করা? সর্বোপরি, কোথায় টেস্ট খেলার টেকনিক? এই টেকনিকে ২০ ওভারের ম্যাচ সামলে দেওয়া যায়, কিন্তু টেস্ট? নৈব নৈব চ! যে ভাবে পন্থেরা উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন, তাতে সুনীল গাওস্কর থাকলে আরও এক বার বলতেন, স্টুপিড, স্টুপিড, স্টুপিড!

টেস্ট ব্যাটিংয়ের অ-আ-ক-খ ভুলে গিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। না আছে ডিফেন্স, না আছে ডিফেন্স করার মানসিকতা। প্রথম থেকেই চালিয়ে খেলার চেষ্টা। যতই পাটা উইকেট হোক, সেখানেও যে বোলারকে সম্মান করতে হয়, সেটা হয়তো ভুলে গিয়েছেন পন্থেরা। গাওস্করের মতো ব্যাটার বার বার বলেছেন, টেস্টে প্রথম ঘণ্টা বোলারকে দাও, পরের পাঁচ ঘণ্টা তোমার। সেই আপ্তবাক্যও মানছে না ভারত। তার ফলেই ভরাডুবি হচ্ছে। ১২২ রানের মধ্যে ভারতের সাত ব্যাটার আউট হয়েছেন। টপ ও মিডল অর্ডারের এই হাল হলে রান হবে কী ভাবে? ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারেরা ভারতকে হারিয়েছিলেন। গুয়াহাটিতে সাত উইকেটের মধ্যে জানসেনই নিয়েছেন চারটি। অর্থাৎ, এখানে ভোগাচ্ছেন পেসারেরা।

ভারতীয় ব্যাটারেরা কী ভাবে আউট হলেন তা এক বার দেখে নেওয়া যাক।

লোকেশ রাহুল— পেস বোলারদের সামলাচ্ছিলেন। স্পিন আসতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। কেশব মহারাজের বল পিচে পড়ে সামান্য ঘুরল। ব্যাস! সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন। বল ভাল ছিল। কিন্তু রাহুলের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারের উচিত ছিল তা সামলানো। পারলেন না রাহুল।

যশস্বী জয়সওয়াল— একমাত্র যশস্বীকেই যা একটু সাবলীল দেখাচ্ছিল। সেই তিনিও সাইমন হারমারের বলের বাউন্সই সামলাতে পারলেন না। আর একটু দেরিতে খেললে ক্যাচ উঠত না। তাড়াতাড়ি শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি।

সাই সুদর্শন— আইপিএলের রেকর্ড দেখে কাউকে টেস্ট খেলিয়া দিলে যা হয়, সুদর্শনের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। লাল বলের ক্রিকেটেও তিনি টি-টোয়েন্টির শট খেলেন। হারমারের একটি শর্ট পিচ বল তিনি মিড উইকেটে খেলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বল মাটিতে রাখতে পারেননি। হাওয়ায় খেলেন। ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন। যে তিন নম্বরে এক সময় রাহুল দ্রাবিড়, চেতেশ্বর পুজারারা খেলতেন, সেই তিন নম্বরকে হাসির খোরাক বানিয়ে ছেড়েছেন সুদর্শন।

ধ্রুব জুরেল— ভারত ‘এ’ দলের হয়ে খেলা ও ভারতীয় দলের হয়ে খেলা যে এক নয়, সেটা হয়তো এখনও বুঝতে পারেননি জুরেল। এই সিরিজ়ে তাঁকে ব্যাটার হিসাবে খেলানো হয়েছে। দুই টেস্টের তিন ইনিংসেই ব্যর্থ তিনি। জানসেন তাঁর উচ্চতার জন্য বাকিদের থেকে বেশি বাউন্স পান। সেটা যাঁরা খেলা দেখছেন, তাঁরাও জানেন। জুরেল বোধহয় জানেন না। তিনি নামার পর বার বার বাউন্সার করছিলেন জানসেন। বার বার মারার চেষ্টাও করছিলেন জুরেল। ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরের একটি বাউন্সারে অবশেষে ব্যাট লাগল। বল সামান্য হাওয়ায় উঠে ফিল্ডারের হাতে পড়ল। শূন্য রানে ফিরলেন জুরেল।

ঋষভ পন্থ— ইডেনে হারের পর বলেছিলেন, অজুহাত দিতে চান না। ১২৪ রান করা উচিত ছিল। তাঁরা পারেননি। গুয়াহাটিতে তো তার প্রয়োজন ছিল না। ৪৮৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মারেন পন্থ। সকলে জানেন, তিনি এ ভাবেই খেলেন। কিন্তু এই টেস্টে তো দ্রুত রান করার প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল উইকেটে পড়ে থাকার। পন্থ নতুন নন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁর। সেই তিনিই জানসেনের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে শট মারতে গেলেন। এটা তো টি-টোয়েন্টি চলছে না। কেন টেস্ট সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন ভারতের ব্যাটারেরা। অধিনায়ক যে ভাবে উইকেট ছুড়ে দিলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।

নীতীশ কুমার রেড্ডি— বিশেষজ্ঞেরা বার বার বলছেন, ভারতের মাটিতে টেস্টে নীতীশের কাজটা ঠিক কী? তার পরেও গম্ভীর তাঁকে খেলাচ্ছেন। আর নীতীশ বার বার প্রমাণ করছেন, বিশেষজ্ঞেরাই ঠিক। ভারতের উইকেটেও যিনি বলের বাউন্স সামলাতে পারেন না, তিনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে গেলে কী করবেন? কী ভাবে খেলবেন।

রবীন্দ্র জাডেজা— কিছুটা ভরসা ছিল জাডেজার উপর। কারণ, আগেও তিনি দেখিয়েছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে পারেন। গুয়াহাটিতে পারলেন না। জানসেনের বল ছাড়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বল ছাড়ার ন্যুনতম নিয়মও কি জানেন না তিনি? যে ভাবে ব্যাট উপরের দিকে রেখে তিনি বল ছাড়তে গেলেন তা দেখলে সুনীল গাওস্করের মতো ব্যাটার রেগে যাবেন। বল তাঁর কাঁধে লেগে তার পর ব্যাটে লেগে হাওয়ায় উঠল। আউট হলেন।

ইডেন টেস্টে সকলে পিচকে দোষারোপ করছিলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ভারতের উচিত ভাল পিচে খেলা। ভাল পিচ বলতে বোঝায়, যেখানে ব্যাটারেরাও রান পাবেন। গুয়াহাটিতে তেমনই উইকেট। অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারেরা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন। এমন নয় যে, ভারত অন্য কোনও উইকেটে খেলছে। সেই একই উইকেট। তা হলে পন্থেরা কেন খেলতে পারছেন না? ইডেন টেস্টে হারের পর ভারতের দুই সহকারী কোচ সীতাংশু কোটাক ও রায়ান টেন দুশখাতেও পিচকে দায়ী না করে দলের ব্যাটারদের দায়ী করেছিলেন। তাঁরাই কি তা হলে ঠিক? যে পিচই হোক, একই ভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে ভারতের ব্যাটিং? গুয়াহাটিতে সেই প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে।

India vs South Africa 2025 India Cricket Gautam Gambhir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy