রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির ১৬৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি জয় এনে দিল ভারতকে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচে সম্মানের লড়াইয়ে জিতে লজ্জা এড়াল গৌতম গম্ভীরের দল। এক দিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসাবে প্রথম জয় পেলেন শুভমন গিল। শনিবার সিডনিতে ভারত জিতল ৯ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়ার ২৩৬ রানের জবাবে ভারত ৩৮.৩ ওভারে ১ উইকেটে করল ২৩৭ রান।
প্রথম দু’ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন কোহলি। সিডনিতে প্রথম রান করে ছোট্ট উচ্ছ্বাস সেরে নিলেন। বোঝা গেল চাপে ছিলেন। চাপ কাটতেই হাত খুললেন। জুটি বাঁধলেন দীর্ঘ দিনের সঙ্গী রোহিতের সঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচে রান পাওয়া রোহিত এ দিন খেললেন ঝুঁকিহীন ইনিংস। আগের ম্যাচের (৫৭টি) মতো প্রচুর ডট বল খেলেননি। বহু দিন পর রো-কো জুটির দাপট দেখলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২২ গজে পরস্পরকে পেয়ে সাবলীল ব্যাটিং করলেন। বুঝিয়ে দিলেন, বয়স তাঁদের ৩৬-৩৮ যাই হোক, মিচেল স্টার্ক-জশ হেজ়লউডদের মতো বোলারদের শাসন করার মতো ক্ষমতা এখনও রয়েছে। বুঝিয়ে দিলেন, ঠিকঠাক শট মারলে বল বাউন্ডারি লাইনে গিয়েই থামে।
রো-কো জুটি দেখিয়ে দিল ব্যাটিং কঠিন নয়। সাত মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন দু’জনেই। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন সাড়ে চার মাস। রো-কো প্রথম দু’ম্যাচে প্রত্যাশাপূরণ করতে পারেননি। তাতেই গেল গেল রব উঠে গিয়েছিল। তাঁদের ক্রিকেট ভবিষ্যতকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল অনিশ্চয়তার কানা গলিতে। ভারতীয় দলের দুই সিনিয়র ব্যাটার জুটি বেঁধে খোলস ছাড়তেই ঝকঝকে দেখাল শুভমনের দলকে। সিরিজ়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলকে চ্যাম্পিয়নের মতো মনে হল। চ্যাম্পিয়নই তো! এই সিরিজ়ের আগে ভারত শেষ বার এক দিনের ক্রিকেট খেলেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। রোহিতের নেতৃত্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত।
রো-কো জুটি গম্ভীর-শুভমনের দলের মানরক্ষা করল। তাঁরা নিজেদের স্থান কি রক্ষা করতে পারলেন? গম্ভীরের আগামী পরিকল্পনায় কি তাঁরা থাকবেন? প্রশ্ন থাকবেই। ২০২৭ বিশ্বকাপের আগে সময় রয়েছে। রো-কো’র কাছে ধারাবাহিকতা চাইবেন গম্ভীর। প্রতি ম্যাচে পরীক্ষায় বসতে হবে দুই সিনিয়র ক্রিকেটারকে। তরুণ প্রতিভাবান ব্যাটারেরা লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছেন। চাপ নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনের শেষটুকু টিকিয়ে রাখতে হবে রোহিত এবং কোহলিকে। যে যতই সিডনি থেকে ম্য়াচ এবং সিরিজ় সেরার পুরস্কার নিয়ে দেশে ফিরুন নেতৃত্ব হারানো রোহিত।
ওপেন করতে নেমে এ দিনও দারুণ কিছু করতে পারেননি অধিনায়ক শুভমন। তবে তাঁর ২৬ বলে ২৪ রানের মধ্যে বড় ইনিংসের সম্ভাবনা ছিল। শুভমন আউট হওয়ার পর দায়িত্ব তুলে নেন দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। কোহলি ব্যক্তিগত ৩৬ রানের মাথায় এক বার নাথান এলিসের বলে এলবিডব্লুউয়ের আবেদন থেকে বেঁচে যান। মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। ডিআরএসের আবেদন খারিজ করে দেন তৃতীয় আম্পায়ারও। এ ছাড়া প্রায় নিখুঁত ব্যাটিং করলেন দু’জনেই।
১৯৮৪ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনও এক দিনের সিরিজ়ে হোয়াইটওয়াশ হয়নি ভারতীয় দল। ৪১ বছর পর সেই লজ্জার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল শুভমনের ভারত। এ যাত্রায় লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল রো-কো জুটি। ভবিষ্যতের দল গঠনের পরিকল্পনা শুরু করে দেওয়া গম্ভীরও স্বস্তি পেলেন নিশ্চই। ১০৫ বলে এক দিনের ক্রিকেটে নিজের ৩৩তম শতরান করলেন রোহিত। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ১২৫ বলে ১২১ রানের ইনিংস খেলে। তাঁর ব্যাট থেকে এল ১৩টি চার এবং ৩টি ছয়। ২২ গজের অন্য প্রান্তে কোহলি অপরাজিত থাকলেন ৮১ বলে ৭৪ রান করে। মারলেন ৭টি চার। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তাঁরা।
সূচি অনুযায়ী, আগামী বিশ্বকাপের আগে কমপক্ষে আরও ২১টি এক দিনের ম্যাচ খেলবে ভারত। ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজ় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা (অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৫), নিউ জ়িল্যান্ড (জানুয়ারি এবং অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৬), আফগানিস্তান (জুন ২০২৬), ওয়েস্ট ইন্ডিজ় (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০২৬), শ্রীলঙ্কার (ডিসেম্বর ২০২৬) বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের (জুলাই ২০২৬) বিরুদ্ধে রয়েছে তিন ম্যাচে অ্যাওয়ে সিরিজ়। বিশ্বকাপের আগে আরও ম্যাচ বাড়তে পারে। এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হওয়া ২১টি ম্যাচেই কি সফল হবেন রোহিত এবং কোহলি? প্রতিটি ম্যাচে সফল হওয়া সম্ভব নয়। অন্তত ১৫-১৬টি ম্যাচে পারলেও হয়তো আগামী বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন তাঁরা। না হলে গম্ভীরের সঙ্গে অপেক্ষায় রয়েছেন নতুন ভারতীয় দলের স্বপ্ন দেখা প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর। লড়াইটা যেন দিল্লি-মুম্বই বনাম দিল্লি-মুম্বই!
রো-কো জুটির সামনে এ দিন নির্বিষ দেখিয়েছে অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণকে। ২৩ রানে ১ উইকেট জশ হেজ়লউডের। আর কেউ উইকেট পাননি। নাথান এলিস, কুপার কোনোলি, ম্যাথু শর্টেরা ভারতীয় ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারেননি। মিচেল স্টার্ক প্রথম ওভারে রোহিতের সমীহ আদায় করে নিলেও পরে কাজের কাজ কিছু করতে পারেননি।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শ। এ দিন পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি আয়োজকেরা। প্রথম ছয় ব্যাটার কিছু ক্ষণ করে ২২ গজে টিকলেও, অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ দিকে পর পর উইকেট পড়ে। ৪৬.৪ ওভারেই শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। শুরুটা খারাপ করেননি ট্রেভিস হেড এবং মার্শ। হেড করেন ২৫ বলে ২৯। মার্শের ব্যাট থেকে এসেছে ৫০ বলে ৪১ রান। তিন নম্বরে নেমে ম্যাথু শর্ট করেন ৪১ বলে ৩০। তাঁকে সাজঘরে ফেরাল ০.৬৭ সেকেন্ডে ধরা কোহলির ক্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে টানেন মূলত চার নম্বরে নামা ম্যাট রেন শ। মাঝের ওভারগুলিতে বড় শট না নিয়ে খুচরো রানে সচল রাখেন স্কোরবোর্ড। তাঁর ৫৮ বলে ৫৬ রানের নিয়ন্ত্রিত ইনিংসে রয়েছে ২টি চার। অ্যালেক্স ক্যারেকেও (৩৭ বলে ২৪) রান করতে পরিশ্রম করতে হল। হর্ষিত রানাকে মারতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন শ্রেয়স আয়ারের হাতে। ভাল ক্যাচ নেন ভারতের সহ-অধিনায়কও। রোহিতের পরামর্শ শুনে মিচেল ওয়েনকে (১) খোঁচা দিতে বাধ্য করেন হর্ষিত। প্রাক্তন অধিনায়কই ক্যাচ নেন ফাঁদে ফেলে। স্টার্ক (২), হেজ়লউড (০) দলকে ভরসা দিতে পারেননি। কিছুটা চেষ্টা করেন এলিস (১৯ বলে ১৬)। ২ রান করে অপরাজিত থাকেন অ্যাডাম জ়াম্পা।
আরও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয়দের উইকেটগুলি ভাগাভাগি করে নেন ভারতীয় বোলারেরা। ৩৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আপাতত সমলোচনা থামালেন হর্ষিত। কিন্তু সব ম্যাচে তো তিনি মাঠে রোহিতের পরামর্শ পাবেন না! ৪৪ রানে ২ উইকেট ওয়াশিংটন সুন্দরের। ২৪ রানে ১ উইকেট মহম্মদ সিরাজের। কুলদীপ যাদব ১ উইকেট নিলেন ৫০ রানে। এ দিন প্রথম একাদশে ঢোকা আর এক বোলার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ১ উইকেট পেলেও ৭ ওভারে খরচ করে বসলেন ৫২ রান। সতীর্থদের মতো নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারলেন না। বেশ কয়েকটি আলগা বল বেরিয়েছে তাঁর হাত থেকে। তবে পারে সাজঘরে বসে থাকার কুপ্রভাব।