Advertisement
E-Paper

কী ভাবে ব্যাট করা উচিত, ন’নম্বরে নেমে পন্থদের শেখালেন কুলদীপ! গুয়াহাটিতে চাপে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে ৩১৪ রানে

গুয়াহাটি টেস্টের এখনও দু’দিন বাকি। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে ভারতকে। যা পরিস্থিতি তাতে এই ম্যাচ বাঁচানো কঠিন হবে ঋষভ পন্থদের পক্ষে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৯
cricket

ওয়াশিংটন সুন্দর (বাঁ দিকে) ও কুলদীপ যাদবের ব্যাটে ২০০ রান পার হল ভারতের। ছবি: পিটিআই।

ন’নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ বল খেললেন কুলদীপ যাদব। শুধু এই ইনিংসের নয়, চলতি টেস্ট সিরিজ়ে এক ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল খেললেন তিনি। গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে কুলদীপই বলেছিলেন, এই পিচ রাস্তার মতো পাটা। শুধু বলা নয়, কাজেও করে দেখালেন তিনি। সাবলীল ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সামলালেন। বাকিরা সেখানে হিমশিম খেলেন। কুলদীপের কাছ থেকে ঋষভ পন্থদের শেখা উচিত, এই উইকেটে কী ভাবে ধৈর্য ধরে ব্যাট করতে হয়।

ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের সামলাতে পারেনি ভারত। গুয়াহাটিতে পারল না পেসারদের। মার্কো জানসেনের ৬ উইকেটে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০১ রানে অল আউট হয়ে গেল ভারত। প্রথম ইনিংসে ২৮৮ রানের লিড নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পড়েনি। দিনের শেষে তাদের রান ২৬। অর্থাৎ, তৃতীয় দিনের শেষে ৩১৪ রানে এগিয়ে টেম্বা বাভুমারা। এখনও ১০ উইকেট রয়েছে তাদের হাতে।

cricket

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের স্কোরকার্ড।

এই পিচেই দু’দিন ব্যাট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই পিচেই সেনুরান মুথুস্বামী শতরান করেছেন। ৯৩ রানের ইনিংস খেলেছেন জানসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার নীচের সারির ব্যাটারেরা ২৬৪ রান করেছেন। যে পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় ১২ ঘণ্টা ব্যাট করেছে, সেখানে সাড়ে ৫ ঘণ্টা ব্যাট করতেও হিমশিম খেল ভারত। যে ভাবে তারা আউট হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কোথায় টেস্ট খেলার মানসিকতা? কোথায় ধৈর্য? কোথায় খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করা? সর্বোপরি, কোথায় টেস্ট খেলার টেকনিক? এই টেকনিকে ২০ ওভারের ম্যাচ সামলে দেওয়া যায়, কিন্তু টেস্ট? নৈব নৈব চ! যে ভাবে পন্থেরা উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন, তাতে সুনীল গাওস্কর থাকলে বলতেন, স্টুপিড, স্টুপিড, স্টুপিড!

টেস্ট ব্যাটিংয়ের অ-আ-ক-খ ভুলে গিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। না আছে ডিফেন্স, না আছে ডিফেন্স করার মানসিকতা। প্রথম থেকেই চালিয়ে খেলার চেষ্টা। যতই পাটা উইকেট হোক, সেখানেও যে বোলারকে সম্মান করতে হয়, সেটা হয়তো ভুলে গিয়েছেন পন্থেরা। গাওস্করের মতো ব্যাটার বার বার বলেছেন, টেস্টে প্রথম ঘণ্টা বোলারকে দাও, পরের পাঁচ ঘণ্টা তোমার। সেই আপ্তবাক্যও মানছে না ভারত। তার ফলেই ভরাডুবি হচ্ছে।

নতুন বলে পেস বোলারদের সামলাচ্ছিলেন লোকেশ রাহুল। কিন্তু স্পিন আসতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। কেশব মহারাজের বল পিচে পড়ে সামান্য ঘুরল। সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন। বল ভাল ছিল। কিন্তু রাহুলের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারের উচিত ছিল তা সামলানো। পারলেন না রাহুল। একমাত্র যশস্বী জয়সওয়ালকেই যা একটু সাবলীল দেখাচ্ছিল। অর্ধশতরান করেও খেলছিলেন। সেই তিনিও ৫৮ রানের মাথায় সাইমন হারমারের বলের বাউন্সই সামলাতে পারলেন না। আর একটু দেরিতে খেললে ক্যাচ উঠত না। তাড়াতাড়ি শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি।

আইপিএলের রেকর্ড দেখে কাউকে টেস্ট খেলিয়া দিলে যা হয়, সাই সুদর্শনের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। লাল বলের ক্রিকেটেও তিনি টি-টোয়েন্টির শট খেলেন। হারমারের একটি শর্ট পিচ বল তিনি মিড উইকেটে খেলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বল মাটিতে রাখতে পারেননি। হাওয়ায় খেলেন। ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন। যে তিন নম্বরে এক সময় রাহুল দ্রাবিড়, চেতেশ্বর পুজারারা খেলতেন, সেই তিন নম্বরকে হাসির খোরাক বানিয়ে ছেড়েছেন সুদর্শন। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে খেলা ও ভারতীয় দলের হয়ে খেলা যে এক নয়, সেটা হয়তো এখনও বুঝতে পারেননি ধ্রুব জুরেল। এই সিরিজ়ে তাঁকে ব্যাটার হিসাবে খেলানো হয়েছে। দুই টেস্টের তিন ইনিংসেই ব্যর্থ তিনি। জানসেন তাঁর উচ্চতার জন্য বাকিদের থেকে বেশি বাউন্স পান। সেটা যাঁরা খেলা দেখছেন, তাঁরাও জানেন। জুরেল বোধহয় জানেন না। তিনি নামার পর বার বার বাউন্সার করছিলেন জানসেন। বার বার মারার চেষ্টাও করছিলেন জুরেল। ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরের একটি বাউন্সারে অবশেষে ব্যাট লাগল। বল সামান্য হাওয়ায় উঠে ফিল্ডারের হাতে পড়ল। শূন্য রানে ফিরলেন জুরেল।

একই অবস্থা অধিনায়ক পন্থেরও। ইডেনে হারের পর বলেছিলেন, অজুহাত দিতে চান না। ১২৪ রান করা উচিত ছিল। তাঁরা পারেননি। গুয়াহাটিতে তো তার প্রয়োজন ছিল না। ৪৮৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মারেন পন্থ। সকলে জানেন, তিনি এ ভাবেই খেলেন। কিন্তু এই টেস্টে তো দ্রুত রান করার প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল উইকেটে পড়ে থাকার। পন্থ নতুন নন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁর। সেই তিনিই জানসেনের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে শট মারতে গেলেন। এটা তো টি-টোয়েন্টি চলছে না। কেন টেস্ট সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন ভারতের ব্যাটারেরা। অধিনায়ক যে ভাবে উইকেট ছুড়ে দিলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।

বিশেষজ্ঞেরা বার বার প্রশ্ন তুলছেন, ভারতের মাটিতে টেস্টে নীতীশ রেড্ডির কাজটা ঠিক কী? তার পরেও গম্ভীর তাঁকে খেলাচ্ছেন। নীতীশ বার বার প্রমাণ করছেন, বিশেষজ্ঞেরাই ঠিক। ভারতের উইকেটেও যিনি বলের বাউন্স সামলাতে পারেন না, তিনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে গেলে কী করবেন? কী ভাবে খেলবেন। ১০ রানে আউট হলেন তিনি। কিছুটা ভরসা ছিল রবীন্দ্র জাডেজার উপর। কারণ, আগেও তিনি দেখিয়েছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে পারেন। গুয়াহাটিতে পারলেন না। জানসেনের বল ছাড়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বল ছাড়ার ন্যুনতম নিয়মও কি জানেন না তিনি? যে ভাবে ব্যাট উপরের দিকে রেখে তিনি বল ছাড়তে গেলেন তা দেখে অবাক হতে হয়। বল তাঁর কাঁধে লেগে তার পর ব্যাটে লেগে হাওয়ায় উঠল। আউট হলেন। ১২২ রানে ৭ উইকেট পড়ে গেল ভারতের।

সেখান থেকে লড়াই করলেন ওয়াশিংটন সুন্দর ও কুলদীপ। আগের টেস্টে ওয়াশিংটনকে তিন নম্বরে খেলিয়েছিলেন গম্ভীর। ওয়াশিংটনই একমাত্র ব্যাটার যিনি ইডেনে দুই ইনিংসেই রান করেছিলেন। এই টেস্টে আট নম্বরে নামলেন। আবার রান করলেন। এই সিরিজ়ে ওয়াশিংটনই ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার। কিন্তু অবাক করলেন কুলদীপ। সাবলীল ব্যাট করলেন। ৩৫ ওভার ব্যাট করলেন ওয়াশিংটন ও কুলদীপ। ৭২ রানের জুটি হল তাঁদের। তাঁদের জন্যই দ্বিতীয় নতুন বল নিতে বাধ্য হল দক্ষিণ আফ্রিকা। কুলদীপ দেখিয়ে দিলেন, উইকেট পড়ে থাকলে রান আসবে।

কিন্তু কত ক্ষণ টানবেন তাঁরা। অবশেষে ৪৮ রান করে হারমারের বলে আউট হলেন ওয়াশিংটন। কুলদীপকে ১৯ রানের মাথায় ফেরালেন জানসেন। ভারতের ইনিংস শেষও করলেন তিনি। ব্যাট হাতে ৯৩ রান করার পর বল হাতে ৪৮ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিলেন তিনি। হারমার নিলেন ৩ উইকেট। ভারত ৮৩.৫ ওভার ব্যাট করে ২০১ রানে অল আউট হল।

দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার নিজেদের ছন্দে ব্যাট করা শুরু করলেন। কোনও তাড়াহুড়ো নেই। উইকেটে পড়ে থাকলেন। খারাপ বল মারলেন। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজদের বল তাঁদের মাঝে মাঝে সমস্যায় ফেলছিল ঠিকই, কিন্তু উইকেট দিয়ে আসেননি তাঁরা। স্পিনারদেরও বল করান পন্থ। তাতেও উইকেট পাননি তিনি। প্রথম দু’দিনের মতো এ দিনও আলো কমে যাওয়ায় খেলা শেষ হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন বিনা উইকেটে ২৬। ভারতের থেকে ৩১৪ রানে এগিয়ে বাভুমারা।

India vs South Africa 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy