ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় দুই দলের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি। সেই সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচ সহজেই জিতল ভারত। টস জিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হলেন ইংরেজ ব্যাটারেরা। ২৪৮ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। দলকে জেতাতে পারলেন না বোলারেরাও। ভারত ৪ উইকেটে জিতলেও চিন্তা রয়ে গেল অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে নিয়ে।
নাগপুরে প্রথম এক দিনের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারত-ইংল্যান্ড। নতুন পিচে প্রথম বার খেলা হল। পিচ প্রস্তুতকারক জানিয়েছিলেন, ৩০০ রানের পিচ তৈরি করা হয়েছে। তবে ইংল্যান্ড শুরুটা যে ভাবে করেছিল, তাতে অনেকেই মনে করছিলেন তাদের রান ৩৫০ পার করে যাবে। ইংরেজ ওপেনার ফিল সল্ট (২৬ বলে ৪৩ রান) আগ্রাসী ব্যাটিং করছিলেন। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা পেসার হর্ষিত রানার এক ওভারে ২৬ রান নিয়েছিলেন তিনি। অন্য ওপেনার বেন ডাকেটও (২৯ বলে ৩২ রান) দ্রুত রান করছিলেন। তবে শুরুর দিকে হর্ষিতই বেশি রান দিচ্ছিলেন। মহম্মদ শামি খুব বেশি রান দেননি। কিন্তু সল্টদের আক্রমণে বেশ চাপেই পড়ে গিয়েছিল ভারত। ম্যাচের ভাগ্য ঘুরে যায় একটি রান আউটে। তিন রান নিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে আউট হয়ে যান সল্ট। ওপেনিং জুটি ভাঙতেই ভারতীয় বোলারেরা চাপে ফেলে দেন ইংল্যান্ডকে। প্রথম ৮ ওভারে কোনও উইকেট না হারানো দল, আট বলের ব্যবধানে তিন উইকেট হারায়। দুই ওপেনার এবং হ্যারি ব্রুককে (০) দ্রুত সাজঘরে ফেরায় ভারত।
দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া ইংল্যান্ডকে বাঁচাতে ইনিংস ধরার কাজটা শুরু করেন জো রুট এবং জস বাটলার। তাঁরা ৩৪ রানের জুটি গড়তে ৫১ বল নেন। যেখানে প্রথম ৭৭ রান উঠেছিল ৬০ বলে। রুটদের মন্থর ইনিংসটা ওই সময় প্রয়োজন ছিল। কারণ ৫০ ওভারের ক্রিকেটে যদি তাঁরা অন্তত ২০-২৫ ওভার খেলে দিতে পারতেন, তা হলে শেষ দিকে ইংল্যান্ড আবার আগ্রাসী ব্যাটিং করে রান তুলে নিতে পারত। কিন্তু ভারত সেই জুটিটা বেশি ক্ষণ টিকতে দেয়নি। রবীন্দ্র জাডেজার বলে এলবিডব্লিউ হন রুট (১৯)। ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের পর প্রথম বার খেলতে নেমে খুব বেশি রান করতে পারলেন না তিনি।
আরও পড়ুন:
ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের জুটিটি গড়েন বাটলার (৫২) এবং জেকব বেথেল (৫১)। তাঁরা ৫৯ রানের জুটি গড়েন। সেই জুটি ভেঙেছিলেন অক্ষর পটেল। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে বাটলারকে আউট করেন তিনি। পাওয়ার প্লে-তে অক্ষর একটি ওভার করেছিলেন। তখন ১৫ রান দেওয়ায় আর বল করানো হয়নি। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে যদিও অধিনায়ককে হতাশ করেননি তিনি। ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জুটিটি ভেঙে দেন।
ভারতের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন হর্ষিত রানা এবং রবীন্দ্র জাডেজা। একটি করে উইকেট নেন কুলদীপ যাদব, মহম্মদ শামি, অক্ষর পটেল। হার্দিক পাণ্ড্য উইকেট না পেলেও ৭ ওভারে ৩৭ রানের বেশি দেননি। একটি ওভার মেডেনও দেন তিনি। ভারতের সব বোলারই বৃহস্পতিবার সফল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে যা স্বস্তি দেবে রোহিতকে।
নাগপুরে বিরাট কোহলি খেলেননি। তাঁর হাঁটুতে চোট। সেই কারণে খেলতে পারেননি তিনি। যে কারণে যশস্বী জয়সওয়ালকে দলে নেয় ভারত। তরুণ ওপেনার টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে আগে খেললেও বৃহস্পতিবার এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হল তাঁর। রোহিতের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন তিনিই। কিন্তু ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হয়ে যান যশস্বী। ২ রানের বেশি করতে পারেননি রোহিতও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে রোহিতের সাদা বলের ক্রিকেটেও রান না পাওয়া চিন্তা ভারতীয় দলের কাছে। বড় প্রতিযোগিতায় অধিনায়ক এবং ওপেন করতে নামা রোহিতের ব্যাট না চললে সমস্যায় পড়বে ভারত। স্বস্তির জয়ের মাঝে যা কাঁটা কোচ গৌতম গম্ভীরের কাছে।
ভারতের দুই ওপেনার রান না পেলেও তিন নম্বরে নামা শুভমন গিল এবং চার নম্বরে নামা শ্রেয়স আয়ার দলকে জয়ের পথ দেখালেন। তাঁদের ৯২ রানের জুটিই স্বস্তির জয় এনে দিল। শ্রেয়স যদিও ৫৯ রান করে আউট হয়ে যান। বাকি কাজটা করেন শুভমন (৮৭) এবং অক্ষর (৫২)। তবে শ্রেয়স ৩৬ বলে ৫৯ রান না করলে এত সহজে জিততে পারত না ভারত। বার্ষিক চুক্তি থেকে বাদ পড়েছিলেন শ্রেয়স। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে রানে ফিরেছেন। সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের জার্সিতে খেলতে নেমে তাঁর ৫৯ রানের এই ইনিংস সত্যিই স্বস্তি দেবে দলকে। ভারতের মিডল অর্ডারে বড় ভরসা শ্রেয়স।
শুভমন শেষ দিকে শতরানের জন্য খেলতে গেলেন। দ্রুত রান নেওয়া ছেড়ে ইনিংস মন্থর করলেন। উল্টো দিক থেকে সেই সময় অক্ষর এবং লোকেশ রাহুল (২) আউট হয়ে যান। হার্দিক পাণ্ড্য যদিও নেমেই ছক্কা মারেন। তাতেই দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন শুভমন। কিন্তু বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে বসেন তিনি। ফলে আর শতরান করা হয়নি। জায়গা ছেড়ে খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিলেন শুভমন।
ম্যাচ শেষ করেন হার্দিক (৯ রানে অপরাজিত) এবং জাডেজা (১২ রানে অপরাজিত)। ইংল্যান্ডের স্পিনারেরা ভারতীয় ব্যাটারদের কিছুটা বিপদে ফেলেছিল। সেটা সামলে ১১.২ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নিল ভারত।
পরের ম্যাচ কটকে। রবিবার আবার মুখোমুখি ভারত-ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচ জিতলে সিরিজ় জিতে নেবে ভারত। রোহিত সেই ম্যাচে শুধু জয় নয়, রানেও ফিরতে চাইবেন।