চতুর্থ দিন চা বিরতির পরেও যখন শুভমন গিল ও রবীন্দ্র জাডেজা ব্যাট করছিলেন, তখন একটা আলোচনাই হচ্ছিল ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে। কখন ডিক্লেয়ার করবে ভারত? ইংল্যান্ডের সামনে কত রানের লক্ষ্য দিতে চাইবেন শুভমন গিল? ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট তুলতে অন্তত কত ওভার দিতে হবে বোলারদের? চতুর্থ দিন খেলা শেষে একটা বিষয় পরিষ্কার। এই পরিস্থিতি থেকে ইংল্যান্ডের জেতা প্রায় অসম্ভব। ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা হলেও টেস্টের পঞ্চম দিন ৫৩৬ রান তাড়া করা কঠিন। বিশেষত যখন দলের টপ অর্ডারের তিন ক্রিকেটার আউট হয়ে গিয়েছেন। চতুর্থ দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৭২। রবিবার বাকি ৭ উইকেট ফেলার লক্ষ্যে নামবেন আকাশ দীপ, মহম্মদ সিরাজেরা।
তৃতীয় দিনের শেষে ভারতের লিড ছিল ২৪৪ রান। তার পরেও শুরুতে লোকেশ রাহুল ও করুণ নায়ার যে ভাবে সাবধানে ব্যাট করছিলেন, তাতে বোঝা যাচ্ছিল, বড় রান করার লক্ষ্যে নেমেছেন তাঁরা। সেই লক্ষ্য পূরণে সফল ভারত। তার বড় কৃতিত্ব শুভমনের। আরও এক বার বড় রান এল তাঁর ব্যাটে। অধিনায়ক হওয়ার পর শুভমনের ব্যাটিং বদলে গিয়েছে। স্টান্স বদলেছেন। বদল হয়েছে মানসিকতাতেও। ধীর, স্থির, শান্ত মাথায় ব্যাট করছেন। ফল্স শটের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। যেটা ছাড়ার ছাড়ছেন। যা মারছেন, তা ব্যাটের মাঝে লাগছে। এজবাস্টনে দুই ইনিংসে এক বারও মনে হয়নি ইংরেজ বোলারেরা তাঁকে আউট করতে পারবেন। দুই ইনিংসেই দ্রুত খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন শুভমন। ভাল বলে তাঁকে ফেরাতে পারেননি বোলারেরা।
এই টেস্টে চার বার শতরানের জুটি গড়েছেন শুভমন। দু’বার রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে। এক বার করে ঋষভ পন্থ ও ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে। তবে শনিবার শুভমনকে সুবিধা করে দিয়েছেন পন্থ। তিনি নামার পর রান তোলার গতি বেড়েছে ভারতের। পন্থ শুরু থেকেই ছিলেন মারমুখী মেজাজে। একের পর এক বড় শট খেলেছেন। তাতে সময় পেয়েছেন শুভমন। শুরুতে ধীরে খেলে পরে রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন তিনি।
এজবাস্টনে দ্বিতীয় ইনিংসে টেস্টে নিজের দ্রুততম শতরান করেছেন শুভমন। সেখানেই থামেননি তিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, টি-টোয়েন্টির মেজাজে ব্যাট করছেন। আসলে ইংল্যান্ডের ধরাছোঁয়ার বাইরে রান নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। তাতে সফল তিনি। ১৬২ বলে ১৬১ রান করে যখন শুভমন ফিরছেন, তত ক্ষণে ভারতের লিড প্রায় ৬০০। শুভমনের শতরানের পাশাপাশি পন্থ ও জাডেজা অর্ধশতরান করেছেন। টেস্টে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন শুভমন। তিনিই একমাত্র ব্যাটার যিনি টেস্টের দুই ইনিংসে দ্বিশতরান ও ১৫০-এর বেশি রান করেছেন। এই টেস্টে ৪৩০ রান করেছেন শুভমন, যা এশিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বাধিক।
তবে ভারত ডিক্লেয়ার করতে যতটা দেরি করল, তাতে একটা প্রশ্ন উঠে গেল। তবে কি বোলারদের উপর ভরসা ছিল না শুভমন ও কোচ গৌতম গম্ভীরের? টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ৫০০ রান তাড়া করাই প্রায় অসম্ভব। সেখানে ৬০৮ রানের লক্ষ্য দিল ভারত। তবে কি শুভমনেরা ভাবছিলেন, ৫০০-৫৫০ রানও তাড়া করে ফেলতে পারে ইংল্যান্ড? আসলে আগের টেস্টে ইংল্যান্ড সহজে ৩৭১ রান তাড়া করে ফেলায় হয়তো কিছুটা হলেও চিন্তায় ছিলেন গম্ভীর। সেই কারণেই তাড়াহুড়ো করেননি। তবে যদি পঞ্চম দিন ইংল্যান্ডের বাকি ৭ উইকেট ভারত ফেলতে না পারে, বা বৃষ্টির কারণে পুরো খেলা না হয়, তা হলে তার জন্য দায়ী থাকবে ভারতের দেরিতে ডিক্লেয়ার করার সিদ্ধান্ত। আঙুল উঠবে গম্ভীর, শুভমনের দিকে।
আরও পড়ুন:
‘বাজ়বল’ (ইংল্যান্ডের টেস্টে দ্রুত খেলার ধরনকে তাদের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নামে নামকরণ করা হয়েছে) জমানায় ইংল্যান্ডের মাঠগুলোতে বোলারদের জন্য বিশেষ কিছু থাকে না। পাটা উইকেটে সমস্যা হয় বোলারদের। এই ধরনের উইকেটে দুই ইনিংসেই একটা ভাল কাজ করেছে ভারত। প্রায় সারা দিন ফিল্ডিংয়ের পর ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছে তারা। ফলে প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুতে ক্লান্ত দেখিয়েছে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারকে।

এজবাস্টন টেস্টের চতুর্থ দিনের স্কোরকার্ড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম
৬০৮ রানের চাপ সামনে ব্যাট করতে নামার পর ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দিয়েছেন সিরাজ ও আকাশ। আরও এক বার তাদের দুই ওপেনার রান পাননি। ক্রলি শূন্য রানে সিরাজের বলে আউট হয়েছেন। ডাকেট দ্রুত রান করছিলেন। কিন্তু ২৫ রান করে আকাশের বলে বোল্ড হয়েছেন। দুই ব্যাটারের শট দেখেই বোঝা গিয়েছে, ক্লান্তির কারণে বলের কাছে পৌঁছোতে পারেননি তাঁরা। সেই কারণে উইকেট দিয়ে আসতে হয়েছে। তবে ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছেন আকাশ। এজবাস্টনে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান জো রুটের। সেই রুটকেই ৬ রানের মাথায় বোল্ড করেছেন তিনি। আকাশের বলের লাইনই বুঝতে পারেননি অভিজ্ঞ রুট। আউট হয়ে হতবাক হয়ে যান তিনি। এই টেস্টে নতুন বলে আকাশ যে ভাবে বল করলেন তাতে সিরিজ়ের বাকি তিন টেস্টে ভারত তাঁকে না খেলালে ভুল করবে।
এজবাস্টনের পিচের যা অবস্থা তাতে পঞ্চম দিন পুরো খেলা না হলে বাকি ৭ উইকেট নেওয়া কঠিন। রবিবার বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে এই টেস্টের বাকি দিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ফলে ভারত আশা করবে পঞ্চম দিনও পুরো খেলা হবে। তেমনটা হলে সিরিজ়ে সমতা ফিরিয়ে লর্ডসে নামার আশা বাড়বে শুভমনদের।