Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Cricket

পাক-দলের চাপে এ বার ভারতীয় ক্লাবের হয়ে বেসরকারি টুর্নামেন্টেও ব্রাত্য কানেরিয়া

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের এক টেলিভিশন চ্যানেলে বোমা ফাটিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। জানিয়েছিলেন, হিন্দু হওয়ায় পাকিস্তান দলে ব্রাত্য ছিলেন দানিশ কানেরিয়া।

পাকিস্তান ক্রিকেটে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন কানেরিয়া।

পাকিস্তান ক্রিকেটে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন কানেরিয়া।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:০৩
Share: Save:

ভারতের একটি ক্লাবের হয়ে সুপার সিক্স টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে মাঠেই নামতে পারলেন না দানিশ কানেরিয়া। তাঁর ‘মুলুক’-এর দলের ক্রিকেটাররা প্রতিবাদ জানানোয় মাঠের বাইরেই বসে থাকতে হল প্রাক্তন পাক লেগ স্পিনারকে। ক্রিকেট খেলতে না পারার দুঃখে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কানেরিয়া বলেন, “একটাই তো টুর্নামেন্ট খেলতাম। সেটাও আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হল।”

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের এক টেলিভিশন চ্যানেলে বোমা ফাটিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। জানিয়েছিলেন, হিন্দু হওয়ায় পাকিস্তান দলে ব্রাত্য ছিলেন দানিশ কানেরিয়া। তার পর এ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু দানিশের জীবনের তেমন উন্নতি হয়নি। ক্রিকেট জীবন অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও তিনি পাকিস্তানে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন। রবিবার যখন কানেরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হল, তখন তিনি ভারত-নিউজিল্যান্ড পঞ্চম টি টোয়েন্টি ম্যাচ দেখছেন।

ব্যাঙ্ককের টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে তাঁকে যে পাক-ক্রিকেটারদের প্রবল প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে কানেরিয়া বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ককে প্রতি বছর তিন দিনের সিক্স আ সাইড টুর্নামেন্ট হয়। ২০১৫ সালে আমি পাকিস্তান থেকে ডিকে সিক্সার্স টিম নিয়ে এই টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিলাম। সেই ডিকে সিক্সার্স টিমের নাম এখন বদলে গিয়েছে। দলটাও আর আমার হাতে নেই। এ বার সৌরাষ্ট্রের একটা দল, মাগরার হয়ে খেলার জন্য আমাকে ডেকেছিল। ওদের হয়ে খেলার জন্য আমি যখন ব্যাঙ্ককে গেলাম, তখন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাই প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে দিল। ওদের বক্তব্য, কানেরিয়া খেললে আমরা কেউ খেলব না এই টুর্নামেন্ট।’’

আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে শুভমনের ডাবল সেঞ্চুরি, শতরান পেলেন হনুমা, পাঞ্চালও

ব্যাঙ্ককের এই সুপার সিক্স টুর্নামেন্টে বয়সের কোনও বাধা নেই। বেসরকারি একটা টুর্নামেন্ট। আইসিসি বা পিসিবি-র ছাতার তলায় এই টুর্নামেন্ট হয় না। ক্রিকেট ভালবাসেন বলেই ভারতের ক্লাবের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রাক্তন পাক লেগস্পিনার খেলতে গিয়েছিলেন ব্যাঙ্কক। কিন্তু মাঠে নামার আগেই তাঁর সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়, তাতে অত্যন্ত দুঃখিত কানেরিয়া। তিনি বলছিলেন, ‘‘ডিকে সিক্সার্স টিমটা আমারই হাতে গড়া। ডিকে সিক্সার্স-এর পুরো নাম হল দানিশ কানেরিয়া সিক্সার্স। সেই দল আমার হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হল। এখন নাম বদলে ডিকে সিক্সার্স হয়েছে ডেয়ার করাচি সিক্সার্স। পাকিস্তানের একাধিক দল এ বার ব্যাঙ্ককে খেলতে গিয়েছিল। পাক ক্রিকেটারদের আমাকে নিয়ে সমস্যা ছিল। টুর্নামেন্টের পরিবেশ খারাপ হচ্ছে দেখে আমি আর ভারতের দলের হয়ে খেলিনি। টিমের সঙ্গে অবশ্য ছিলাম। আয়োজকদের জানিয়ে দিয়েছিলাম, ক্রিকেট যেন কোনওমতেই বন্ধ না হয়।” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন কানেরিয়া।

শোয়েবের ‘বোমা’র পরে কানেরিয়াকে নিয়ে উত্তাল হয় পাক ক্রিকেট। জাভেদ মিয়াঁদাদের মতো প্রাক্তন কিংবদন্তি পর্যন্ত আক্রমণ করেন কানেরিয়াকে। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন দানিশ। ১৯৯২ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক ইমরান সাহায্যের হাত এখনও বাড়িয়ে দেননি কানেরিয়ার দিকে। প্রাক্তন লেগ স্পিনার বলছিলেন, ‘‘আমি তো পাকিস্তানের নাগরিক। অথচ আমার দেশের লোকরাই আমার সঙ্গে এ রকম খারাপ ব্যবহার করছে। এতে তো বাইরের দুনিয়ার কাছে ভুল বার্তা পৌঁছয়। অথচ ভারতের একটা ক্লাব আমাকে সম্মান জানিয়ে ডাকল।’’ নিজের দেশের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া আঘাতে ব্যথিত কানেরিয়া।

চাকরি নেই তাঁর। নিজেই বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে আমার কোনও আয় নেই।’’ সাহায্যের জন্য বারবার অনুরোধ করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। কী ভাবে চলছে তাঁর? কানেরিয়া বলছিলেন, ‘‘চাকরি নেই। ক্রিকেট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাকে। অন্য কিছুও করি না। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, পরিবার আমার পাশে রয়েছে। আমার ইউটিউব চ্যানেলটা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। যে ভাবেই হোক এই অবস্থা থেকে আমাকে বেরিয়ে আসতে হবে।’’

অন্ধকার রাস্তার শেষে আলোর দেখা কবে পাবেন তা নিজেও জানেন না কানেরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Danish Kaneria Former Pakistan Cricketer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE