Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাগান-যন্ত্রণার শোধ তোলার লড়াই ইস্টবেঙ্গল বেঞ্চে বসে

চব্বিশ ঘণ্টা আগে আনন্দবাজারের খেলার পাতায় কলাম লেখা শুরু করেছেন মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন। পরের দিনই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শিবির থেকে লিখলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্য।চব্বিশ ঘণ্টা আগে আনন্দবাজারের খেলার পাতায় কলাম লেখা শুরু করেছেন মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন। পরের দিনই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শিবির থেকে লিখলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গলে আমার কোচিং করাতে আসা কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই!

ময়দানে প্রতিদিন ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে ভাসছিল অনেক নাম। রোজই প্রায় কাগজে দেখছিলাম ট্রেভর মর্গ্যান, সুভাষ ভৌমিক, ডেরেক পেরিরা, সন্তোষ কাশ্যপ...। কত নাম!

আমার কথা প্রথম দিকে কেউ লেখেননি। অন্তত আমি দেখিনি। যখন লেখা হল, তখন আবার সঙ্গে এ-ও লেখা দেখলাম— আমি কলকাতা লিগের কোচ আর মর্গ্যান আই লিগে। যা পড়ে বেশ অবাক হয়েছিলাম। এ রকম আবার হয় না কি!

ময়দানে বিশেষ করে বড় ক্লাবে কোচের চেয়ার অনেকটা মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো। পাড়া বা অফিস স্পোর্টসে মিউজিক্যাল চেয়ার চলার সময় গান বন্ধ হলেই তবু দৌড়ে সামনের চেয়ারটা ধরার চেষ্টা করা যায়। কিন্তু বড় ক্লাবে কর্তা-অগুনতি সদস্য-সমর্থকের পছন্দসই সাফল্য না পেলে কোচের চেয়ারটাই উধাও হয়ে যায়। বিশেষ করে ভারতীয় কোচেদের ক্ষেত্রে। বিদেশিদের অবশ্য এখানে কিছুটা অ্যাডভান্টেজ। তারা টিকে যায়। নতুন জায়গায় ডাকও পায়। দেখুন না, ইউনাইটেডে কোনও বড় ট্রফি না পেয়েও এলকো আবার ডাক পেয়ে গত মরসুমে ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করিয়ে গেল।

তিন বছর কোচিং করিয়ে একবারও আই লিগ জেতেনি। তা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলে কোচের প্রসঙ্গ উঠলেই মর্গ্যানের নাম ভেসে ওঠে বারবার। কেন জানি না মাঝেমধ্যে মনে হয়, এরা যদি এত বড় কোচই হয়, তা হলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ডাকের অপেক্ষায় বাড়িতে বসে থাকে কেন? কেন তাদের ডাকে না বিদেশের কোনও ক্লাব?

না, এলকো-মর্গ্যানের মতো বিদেশি কোচেদের উপর রাগে এ সব লিখছি না। আসলে আইএসএলের মতো আই লিগেও যদি জিকো, রবের্তো কার্লোসের মতো কোচ যদি আসে, তা হলে আমার কোনও আপত্তি নেই। ওদের থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। আমার সঙ্গে এ বার কোচ হওয়ার ব্যাপারে আলোচনার সময় অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের কোনও কর্তা একবারের জন্যও অন্য কোনও কোচের নাম তোলেননি। মর্গ্যান বা সুভাষদা (ভৌমিক) কারও নাম নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি।

আমি কখনও বিতর্কে জড়াতে চাই না। তবু কেন জানি না, যে ভাবে আমার কোচিং করানোর সময়ই পরবর্তী কোচের নাম নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে সেটা দৃষ্টিকটু লাগে। তবে এটাও লিখতে দ্বিধা নেই—এটা আমাকে বাড়তি মোটিভেটেডও করছে এ বার। বিশ্বাস করুন, আমার জেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ক্লাবে বা ভারতীয় দলে যখন খেলতাম তখন টিমে ঢোকার জন্য লড়াই করেছি সাব্বির আলি, শ্যাম থাপা, জেভিয়ার পায়াসের মতো স্ট্রাইকারদের সঙ্গে। সফলও হয়েছি। এ বার কোচেদের সঙ্গে সে রকম লড়াইয়ে নেমেছি।

আমার কোচিং কেরিয়ার খারাপ নয়। বিশ্বাস করি এ বারও খারাপ করব না। অন্তত কল্যাণীর আবাসিক শিবির কয়েক দিন চলার পর টিমের কন্ডিশন দেখে মনে হচ্ছে কলকাতা ডার্বিটা আমরা জিতব। কলকাতা লিগও। তার পর না হয় আই লিগ নিয়ে ভাবা যাবে। এ বার ইস্টবেঙ্গল কিন্তু বেশ ব্যালান্সড্।

দু’বার মোহনবাগানকে অবনমন থেকে বাঁচিয়ে আই লিগে ভাল জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও আমাকে রাখা হয়নি। একবার তো লাইসেন্সিং রুল দেখিয়ে আমাকে সরিয়ে দিয়ে আনা হয়েছিল সুভাষদাকে। তারও কি সেই সময় লাইসেন্স ছিল? তবুও আমি কোনও বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি। কোনও বিবৃতি দিইনি। কারণ আমি তথাকথিত তারকা কোচেদের মতো ঝামেলা পছন্দ করি না।

তবে মোহনবাগান থেকে যে ভাবে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই যন্ত্রণা, জ্বালাটা যে পুরোপুরি চলে গিয়েছে তা-ও কিন্তু নয়। ইস্টবেঙ্গল বেঞ্চে বসে এ বার সেই শোধটা তোলার চেষ্টা করব। সে জন্যই আরও বেশি করে ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।

একটা সময় সাদার্ন স্পোর্টসে আমার টিমমেট সঞ্জয় (সেন) এ বার ডার্বিতে আমার উল্টো দিকের চেয়ারে বসবে। মনে হয়, সঞ্জয় গত মরসুমে আই লিগ জেতাতেই ইস্টবেঙ্গল কর্তারা আমার মতো বাঙালি কোচের উপর আস্থা রেখেছেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে সঞ্জয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, যার সম্পর্কে এত গুনগান করলেন তার বিরুদ্ধে বড় ম্যাচে আপনার মনোভাব কী হবে? সে দিন উত্তর দিইনি। আজ বলছি, ও হবে আমার সবচেয়ে বড় শত্রু।

কারণ, যাঁর উৎসাহে আমার ফুটবল কোচিংয়ে আসা সেই চিরিচ মিলোভানের মনোভাবও ছিল তাই। দুর্ঘটনার পর চার বার আমার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর আমার সবচেয়ে প্রিয় কোচ মিলোভানস্যার আমাকে বলেছিলেন, কোচিংয়ে আসতে। তিনিই শিখিয়েছিলেন, রিজার্ভ বেঞ্চে যখন বসবে তখন তোমার একটাই লক্ষ্য থাকবে— শুধুই জেতা। উল্টো দিকের কেউ তখন তোমার বন্ধু নয়। শত্রু। সেটাই বরাবর মনে করি আমি। তবে শান্ত ভাবে।

জার্মানিতে ডিএফডি লাইসেন্স করতে গিয়ে পড়েছিলাম স্পোর্টস সাইকোলজি এবং ম্যান ম্যানে়জমেন্ট। সেটা কোচিং জীবনে কাজে লাগাচ্ছি। সিটি থেকে জর্জ, পোর্ট থেকে মহমেডান— বহু ক্লাবে কোচিং করিয়েছি। কখনও কারও সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়নি।

সঞ্জয়ের এ বারের চ্যালেঞ্জটা ওর নিজের সঙ্গেই। গতবার ওর কাছ থেকে কেউ আই লিগ আশা করেনি। ওর উপর কোনও চাপ ছিল না। সেখানে আমার কিন্তু প্রথম বারই চ্যালেঞ্জ। মর্গ্যান, মোহনবাগান এবং আমার অতীত— এতগুলো চ্যালেঞ্জ!

সঞ্জয়ই সবচেয়ে ভাল জানে আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE