এই মরসুমের শুরুতে আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের জায়গায় তাঁকে দায়িত্ব নেওয়ার সময় অনেকেই ভ্রূ কুঁচকেছিলেন। মোহনবাগান দল পরিচালন সমিতির উপরেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন কেউ কেউ। তবে মরসুমের মাঝপথেই সেই রাগ, ক্ষোভ, বিরক্তি মিটে গিয়েছে। মরসুম শেষে হোসে মোলিনা হয়ে উঠেছেন মোহন-জনতার নয়নের মণি। জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রি পেত্রাতোস বা শুভাশিস বসুদের নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে, ততটাই হচ্ছে তাঁকে নিয়ে।
তবে মোহনবাগান কোচের চাপ সামলানো যে সহজ কাজ নয় এটা বুঝিয়ে দিলেন মোলিনা। গোয়াকে হারানোর পর উৎসব শেষে সবে ফিরেছেন। সাংবাদিক বৈঠকে আসার পর ঘর্মাক্ত শরীরে সেই চিহ্ন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। তার মধ্যেই বললেন, “মোহনবাগানের কোচ হওয়া সব সময়ই একটা বড় দায়িত্ব। সবাই জানেন কতটা চাপ নিতে হয়। গত মরশুমে শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কিছুই সহজ ছিল না। পর পর শিল্ড জেতার পর বাড়তি চাপ ছিল। খেলোয়াড়দেরও বলেছিলাম এই বছরটা খুব কঠিন হতে চলেছে। কারণ তোমরা চ্যাম্পিয়ন। সবাই তোমাদের হারানোর চেষ্টা করবে। তাই তোমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে এবং সবাইকে প্রমাণ দিতে হবে যে তোমরা সত্যিই চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়। আমার খেলোয়াড়রা প্রমাণ করেছে যে, তারা চ্যাম্পিয়ন। এই বছরটা নিশ্চিত ভাবে গত বারের চেয়েও কঠিন ছিল।”
মোলিনার সংযোজন, “আমরা খুব খুশি। আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমার জন্যও এই ট্রফি বিশেষ একটা উপহার। আমি আমার খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে পেরেছি। অবশ্যই এই সাফল্য আজ উদ্যাপন করব। তার পর আবার মাঠে ফিরে এসে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার জন্য লড়াই করব।”
লিগ পর্বে আলাদা করে কোনও ম্যাচ সেরা হিসাবে বাছতে চাননি মোলিনা। তবে উল্লেখ করেছেন জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচের কথা। মোলিনার মতে, সেরা না হলেও অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সের মধ্যে সেটি থাকবে। বলেছেন, “অনেক ভাল ভাল ম্যাচ খেলেছি। খেলোয়াড়েরা কখনওই হাল ছাড়েনি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছে, ফিরে এসেছে এবং জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে ম্যাচটাও এ রকমই ছিল। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিপক্ষে, ঘরের মাঠে শুরুটা ছিল সত্যিই কঠিন। আমি অনেক বার বলেছি জামশেদপুরের মাঠেই সেরা পারফরম্যান্সের একটি উদাহরণ দেখা গিয়েছে। জিততে পারিনি। কিন্তু জামশেদপুরে সেই ম্যাচ পারফরম্যান্সের দিক থেকে অসাধারণ ছিল।”
আরও পড়ুন:
মোহনবাগানের লিগ-শিল্ড জয়ে অন্যতম ভূমিকা নিয়ে রক্ষণ ভাগ। তারা সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে। ১৫টা ক্লিন শিটও রেখেছে। সে প্রসঙ্গে মোলিনা বলেছেন, “১৫টা ক্লিন শিট রেখেছি। এর পর রক্ষণ নিয়ে আর কিছু বলার দরকার আছে? আবারও বলছি, রক্ষণ মানে শুধু ডিফেন্ডার বা গোলকিপার নয়। রক্ষণ পুরো দলের ব্যাপার। স্ট্রাইকার থেকে গোলকিপার পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে রক্ষণ সামলায়। আজ আপনারা দেখেছেন আমাদের রক্ষণ কেমন খেলেছে। মুম্বইয়ে আমরা সেট পিস থেকে দুটো গোল খেলেও রক্ষণ দুর্দান্ত ছিল। স্ট্রাইকারদের রক্ষণে সাহায্য করাটাই আসল ব্যাপার। কিন্তু আমি শুধুমাত্র রক্ষণের দিকে তাকাতে চাই না। আমার কাছে দল মানে গোটা দল। আমি রক্ষণ এবং আক্রমণকে আলাদা করে দেখতে পারি না।”
মোহনবাগানের সাত জন খেলোয়াড় এ বার জাতীয় দলের হয়ে নামবেন। বাকিরা কিছু দিনের জন্য ছুটিতে যাবেন। তার পরে সেমিফাইনাল খেলার জন্য জড়ো হবে গোটা দল। তাতে কি দলের ছন্দপতন ঘটবে? মোলিনার জবাব, “আমি মনে করি, এখন প্রত্যেকের বাড়ি যাওয়ার, প্রিয়জনদের সাথে দেখা করার, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং বিশ্রাম নেওয়া দরকার। তা হলে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব। দলের কয়েক জন জাতীয় দলে থাকবে। তাতে কিছু যায় আসে না। এটা ওদের জন্য ভাল। ক্লাবের জন্য এবং আমার জন্যও ভাল। আমাদের এত জন খেলোয়াড় জাতীয় দলে আছে। তার মানে আমাদের দল দুর্দান্ত, তাই না?”