হারের হতাশা ভেরাত্তির। ছবি রয়টার্স
পূর্ব ইউরোপের আপাত ক্ষুদ্র একটা দেশ। মাত্র ১৮ লক্ষের বাস। ভারতীয়দের কাছে এই দেশ পরিচিত মাদার টেরিজার জন্মস্থান নামে। সে দেশের রাজধানী স্কোপিয়াতে জন্মেছিলেন নোবেলজয়ী। সেই উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার কাছে বিস্ময় হারে টানা দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল ইটালির। বিশ্বকাপ জয়ের নিরিখে জার্মানির সঙ্গে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যারা, তাদের এমন পরাজয়ে হতবাক গোটা ফুটবলবিশ্বই। ইটালির অবস্থা আরও খারাপ। ফুটবল-পাগল এই দেশের রাতারাতি শোকের ছায়া।
কী করে হল, কেন হল, কী ভাবে হল — ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে পড়েছে। কিন্তু যেটা হল সেটা যে ঠিক হল না এটা প্রত্যেকেই মেনে নিচ্ছেন। ইটালি কার্যত ‘ধ্বংস এবং বিধ্বস্ত’। এমন ভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে তাদের হারকে। মনে রাখা দরকার, আট মাস আগে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এই দলই ইউরো কাপ জিতেছিল। তারাই এখন বিশ্বকাপের বাইরে।
গত বিশ্বকাপের প্লে-অফে সুইডেনের কাছে হেরেছিল ইটালি। তৎকালীন কোচ জিয়ান পিয়েরো ভেঞ্চুরার ইটালি কার্যত ভগ্নপ্রায়। ইউরোপেও কেউ তখন তাদের ভয় পাচ্ছে না। শক্তিহীন ইটালির দায়িত্ব তুলে নিতে এগিয়ে এলেন অভিজ্ঞ কোচ রবার্তো মানচিনি। ইউরোপের একাধিক ক্লাবে কোচিং করিয়ে আসা, ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে প্রিমিয়ার লিগ জেতানো কোচ এসেই দলের খোলনলচে বদলে দিলেন। মানচিনির অধীনে ইটালির মানসিকতাই বদলে গেল। দলে নতুন ফুটবলার এল। পুরনোদেরও সসম্মানে রেখে দেওয়া হল। মানচিনি চেয়েছিলেন প্রাক্তন এবং তরুণদের একটা সংমিশ্রণ। যেখানে জিয়ানলুইগি বুঁফো, জর্জি চিয়েল্লিনিরাও থাকবেন। আবার ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি, নিকোলো জানিয়োলোর মতো তরুণরাও থাকবেন।
NORTH MACEDONIA!!! ONE OF THE GREAT UPSETS OF ALL TIME 🤯
— ESPN FC (@ESPNFC) March 24, 2022
AS IT STANDS, ITALY ARE OUT OF THE WORLD CUP! pic.twitter.com/DBRBcUhZC5
মানচিনির এই পরিকল্পনা ফুল ফোটাতে লাগল। প্রতিপক্ষরা আবার ভয় পেতে শুরু করল ইটালিকে। কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৩৭ ম্যাচে অপরাজিত ছিল ইটালি, যা তাদের দেশের ফুটবল ইতিহাসে রেকর্ড। গত অক্টোবরে স্পেনের কাছে হারার পর সেই দৌড় থামে। তার মধ্যে ঘরে ঢুকে গিয়েছে ইউরো কাপ। তবে এর পর থেকেই ইটালির পারফরম্যান্সের রেখচিত্র ধীরে ধীরে নামতে থাকে। সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টি ড্র ছাড়াও অপেক্ষাকৃত দুর্বল বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে ড্র করে ইটালি। শেষ ম্যাচে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে হারাতে হত। সেখানে ড্র করে মানচিনির দল। জিতলে সরাসরি বিশ্বকাপে চলে যেত তারা। কিন্তু ড্র করে গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়ায় প্লে-অফ খেলতে হয় তাদের। গত বারের মতো সেই প্লে-অফে হেরেই বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল ইটালির।
ম্যাচের পর চিয়েল্লিনি বলেছেন, “আমরা বিধ্বস্ত। ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। একটা অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করছে আমাদের মধ্যে। এতটা হতাশ যে বলে বোঝানো যাবে না। ভাল খেলেও জিততে পারলাম না।” সত্যিই খারাপ খেলেনি ইটালি। উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে ৩২টি শট নিয়েছে তারা। ১১টি গোলে। বলের নিয়ন্ত্রণও তাদেরই ছিল। কিন্তু গোলে এক বারও বল ঠেলতে পারেনি তারা। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে এই প্রথম ঘরের মাঠে হারল ইটালি।
চেলসির ফুটবলার জর্জিনহো বলেছেন, “মাত্র কয়েকটা ম্যাচের ব্যর্থতা। সেখান থেকে কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারলাম না। এই হতাশা সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে।” প্রসঙ্গত, সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরপর দু’টি ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেছিলেন জর্জিনহো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy