E-Paper

বাংলার জার্সি ছাড়াই সোনা ঋতু, সাথীদের

সোনা পাওয়ার সময় আনন্দে চোখের কোণ চিকচিক করে উঠলেও আক্ষেপ কম নেই। কারণ পদক জিতলেও বাংলার প্রতীক দেওয়া ট্র‌্যাকসুট এবং জার্সি তাঁদের ভাগ‌্যে জোটেনি।

সুতীর্থ দাস

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:২০
লড়াই: জাতীয় গেমসে যোগাসনে পদক জয়ী বাংলার মেয়েরা।

লড়াই: জাতীয় গেমসে যোগাসনে পদক জয়ী বাংলার মেয়েরা। —নিজস্ব চিত্র।

‘চ‌্যাম্পিয়ন অব চ‌্যাম্পিয়ন্স’।

উত্তরাখণ্ডে জাতীয় গেমসে বাংলার সোনা যোগ। মোট তিনটি সোনা এবং একটি রুপো এসেছে মেয়েদের যোগাসনে। চার প্রতিযোগীর প্রত‌্যেকেই শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রথম বারে নেমেই ভারত সেরার মঞ্চে তুলে ধরেছেন বাংলাকে। সোনা পাওয়ার সময় আনন্দে চোখের কোণ চিকচিক করে উঠলেও আক্ষেপ কম নেই। কারণ পদক জিতলেও বাংলার প্রতীক দেওয়া ট্র‌্যাকসুট এবং জার্সি তাঁদের ভাগ‌্যে জোটেনি।

কেন? রাজ‌্য যোগাসন সংস্থার সচিব গৌতম সিংহ বল ঠেলছেন অল বেঙ্গল যোগাসন সংস্থার দিকে। আনন্দবাজারকে ফোনে বললেন, “জাতীয় গেমসের আগে বৈঠকের সময় অল বেঙ্গল যোগসনের যুগ্ম সচিব অঞ্জন রায়ের সঙ্গে কথা হয়। সে দিন পোশাক তৈরি ছিল না। পরে ওঁর নম্বরে ফোন করলেও কোনও সাড়া পাইনি। পোশাক বাংলা অলিম্পিক্স সংস্থার ঘরেই পড়ে রয়েছে।”

তাঁর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তীহীন দাবি করে সুদূর উত্তরাখণ্ড থেকে অঞ্জন বললেন, “আমরা সে দিন বৈঠকের পরে ওঁর কাছে পোশাক চাওয়াতে উনি গোডাউন থেকে নিতে বলেছিলেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, প্রতিযোগী এবং কোচদের পোশাক তৈরিই হয়নি। পরে পোশাক দেওয়ার কথা বলা হলেও আমরা পাইনি। নিজেদের পোশাকেই তাই প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছে।”

অঞ্জনের আরও অভিযোগ, তাঁরা নিজেদের খরচেই প্রতিযোগীদের নিয়ে গিয়েছেন। যদিও তা নিয়ে গৌতম বলছেন, “নথিপত্র দিলেই যাবতীয় টাকার ব‌্যবস্থা করে দেওয়া হবে।”

বাইরে এত কিছু চললেও প্রতিযোগিতায় এক বারের জন‌্যও নিজেদের উপরে বিশ্বাস হারায়নি চার বঙ্গ কন‌্যা। ট্র‌্যাডিশনাল ইভেন্টে সোনা পাওয়া হিন্দমোটরের মেয়ে ঋতু মণ্ডলের বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী। কেন যোগার প্রতি আকর্ষণ? ঋতু ফোনে বললেন, “দাদার ছোটবেলা থেকে শ্বাসকষ্টের সমস‌্যা থাকায় যোগাসনে ভর্তি হয়েছিল। দাদাকে দেখেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। এখন দাদাই আমার প্রশিক্ষক।” ট্রেনে ওঠার সময়ে কেউ শুভেচ্ছা দূরে থাক, সামান‌্য খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি। এখন অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে ফোন আসছে। যোগ‌্য জবাব কী দেওয়া গিয়েছে? ঋতুর উত্তর, “পদক ছিনিয়ে আনতে না পারলে কেউই মনে রাখবে না। আশা করি সাফল‌্যই আমার হয়ে কথা বলবে।”

রিদ্‌মিক ইভেন্টে জুটি বেঁধে সোনা জিতেছেন সাথী মণ্ডল ও সর্বশ্রী মণ্ডল। এছাড়াও ট্র‌্যাডিশনাল ইভেন্টে রুপো জয়ের স্বাদ পেয়েছেন সাথী। তাঁর বাবা টোটোচালক। সাথীর বক্তব‌্য, “অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি। বাবা-মার আত্মত‌্যাগের জন‌্যই আমি এত কথা বলতে পারছি।” পদক জিতলেই চাকরি ও আর্থিক পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। খুশি হলেও এখনই আবেগে ভাসতে নারাজ সাথী।

একই সুর সর্বশ্রী মণ্ডলের গলাতেও। রিদ্‌মিক ইভেন্টের আলাদা কোনও পরিকাঠামো নেই বলে কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গানের তালে তালে এই যোগাসন অভ‌্যাস করি।”

মুর্শিদাবাদের মেয়ে শিল্পা দাসও আর্টিস্টিক ইভেন্টে সোনা পেয়ে উচ্ছ্বসিত। তাঁর বাবা বাসচালক। অভাবের সংসারেও কোনও দিন মেয়ের চাহিদা বাকি রাখেননি। বললেন, “পরিবারের অভাব ঘোচানোই লক্ষ‌্য। সোনা জয়ের স্বাদ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।”

একদা অবহেলিত চার কন‌্যাই এখন দ‌্যুতি ছড়াচ্ছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Women bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy