Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সেই রিস্ট স্পিনারদের জাদুই কাজে লাগল ভারতের

রিস্ট স্পিনারদের মাধুর্য হল তাঁরা কব্জির মোচড় কাজে লাগিয়ে উইকেট তোলে। তারা কখনও বল উইকেটের বাইরের দিকে নিয়ে যায়। কখনও সেই বল উইকেটের ভিতরের দিকে নিয়ে আসে। কখনও বা মোক্ষম স্ট্রেটার-এ উইকেট তুলে নেয়।

উৎসব: কুলদীপ, চহালের ম্যাজিকেই কাত অস্ট্রেলিয়া। ছবি: পিটিআই।

উৎসব: কুলদীপ, চহালের ম্যাজিকেই কাত অস্ট্রেলিয়া। ছবি: পিটিআই।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৪২
Share: Save:

সকালই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে। কিন্তু ক্রিকেট এমনই এক মহান অনিশ্চয়তার খেলা যেখানে এই কথাটা খাটে না। কারণ ক্রিকেট খেলাটা সব সময়েই এক বলের খেলা। যেখানে একটা বলই বদলে দেয় গোটা ম্যাচের চালচিত্র।

রবিবার চেন্নাইয়ের ভারত-অস্ট্রেলিয়া একদিনের ম্যাচ ফের সে কথাটাই মনে করিয়ে দিয়ে গেল। শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পিত বোলিংয়ের সামনে যখন ভারত ১১-৩ তখন মনে হচ্ছিল সিরিজটা বোধহয় হার দিয়েই শুরু হতে চলেছে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহালির।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতে সেই আশঙ্কা বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিল অধিনায়ক কোহালি। বিরাট নিজে এ দিন রান পায়নি। কিন্তু তাঁর দল বাছাই অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখবে। আর তা দিয়েই কামাল করে গেল ও। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এই সিরিজে নেই। এ দিন রবীন্দ্র জাডেজাকেও দলে রাখেনি ভারত। দুই ম্যাচ উইনার স্পিনারকে বাইরে রেখে এ দিন যুজবেন্দ্র চহাল এবং কুলদীপ যাদবের মতো দুই রিস্ট স্পিনারকে দিয়েই ম্যাচ বার করে নিয়ে গেল ভারত।

রিস্ট স্পিনারদের মাধুর্য হল তাঁরা কব্জির মোচড় কাজে লাগিয়ে উইকেট তোলে। তারা কখনও বল উইকেটের বাইরের দিকে নিয়ে যায়। কখনও সেই বল উইকেটের ভিতরের দিকে নিয়ে আসে। কখনও বা মোক্ষম স্ট্রেটার-এ উইকেট তুলে নেয়। পিচের সুবিধা কাজে লাগে না তাদের। রবিবার চহাল ও কুলদীপ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঠিক সেটাই করল। ওদের স্পিনের ফাঁদে পড়েই হাসফাঁস করল অস্ট্রেলিয়া। দু’জনে মিলে তুলল অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি উইকেট। যার মধ্যে রয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো দুই মারকুটে ব্যাটসম্যানের উইকেট।

ব্যাটিংয়ের সময় প্রথম দশ ওভার বাদ দিলে পুরো ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করল ভারত। আরও অবাক হলাম উপমহাদেশের পিচে স্টিভ স্মিথ কেন শুধু স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকেই ব্যবহার করল। ম্যাক্সওয়েলকে নয় কেন?

আসলে অস্ট্রেলিয়ার ফোকাসটা নড়ে গিয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে িমরপুর টেস্টে হেরেই। সেই ধাক্কা এখনও কাজে লাগিয়ে উঠতে পারেনি ওরা। এ দিন দ্রুত ভারতের তিন উইকেট চলে যাওয়ার পর হার্দিক পাণ্ড্য ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জুটির ধামাকা। বাইশ ওভারের মাথায় কেদার যাদব যখন আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছে তখনও মনে হচ্ছিল ভারতের ইনিংস শেষ হতে পারে ২১০ বা ২২০ তে গিয়ে। কিন্তু সেখান থেকে এগিয়ে ভারতের ইনিংস যে ২৮১-৭ শেষ হল তার পুরো কৃতিত্বই হার্দিক ও ধোনির।

ধোনি এখন টিমের অভিজ্ঞ সদস্য। ২০১৯ বিশ্ব কাপের জন্য নিজেকে বিশেষ বাবে তৈরি করছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, ইদানিং ওর খেলার ঘরানাতেও একটা পরিবর্তন এসেছে। এ দিনই ও প্রথম চারটা মারল ৬০-এর বেশি বল খেলার পর। যা আগের ধোনির সঙ্গে মেলে না কিছুতেই।

আর হার্দিকের রোমাঞ্চকর ব্যাটিং দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ। এ প্রসঙ্গে ৩৭ তম ওভারের কথা মনে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকে সেই ওভারে তিনটে ছয় ও একটা চার মেরে হার্দিক তুলল ২৩ রান। আর সেই জায়গা থেকেই ম্যাচে জাঁকিয়ে বসা ভারতের।

বিরাট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একটা ব্যাপার দেখছি। তা হল, ডেথ ওভার ও মিডল ওভারে ভারতীয় ব্যাটিং ও বোলিং-এর পারফরম্যান্স আমূল বদলে গিয়েছে। আগে এই জায়গাটা নিয়েই সমস্যা হতো। এখন এই জায়গাটাই ভারতীয় দলের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা।

তবে দিনের সেরা মুহূর্ত যদি বলতে হয় তা হলে ম্যাক্সওয়েলের ওই দুর্দান্ত ক্যাচের কথাই বলতে হবে।

ভারতীয় ইনিংসে এ দিন শুরু থেকেই পরিকল্পনা মাফিক বোলিং করে যাচ্ছিলেন প্যাট কামিন্স এবং নেথান কুল্টার নাইল। ওরা জানতো যে ইনিংসের শুরুতে বিরাট কোহালি অফ স্টাম্পের বাইরে একটু উপরের বলে আউট সুইং হলে খেলতে একটু সমস্যায় পড়ে। ওরা সেই জায়গাতেও বল করে যাচ্ছিল বিরাটকে। কিন্তু বিরাট ফ্রন্ট ফুটে যে জোরালে শটে ম্যাক্সওয়েলের হাতে তালুবন্দি হল তা যদিও নিজের ছন্দেই মেরেছিল। কিন্তু পয়েন্টে দাঁড়িয়ে দু’তিন হাত উপর থেকে অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ম্যাক্সওয়েল যে ভাবে ক্যাচটা ধরল তা দেখে মুগ্ধ হতেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে ওর লাফ দেওয়ার সময়জ্ঞানের তারিফ করতেই হয়। একই সঙ্গে ফিটনেস। ম্যাক্সওয়েল ডান হাতে ক্যাচটা ধরে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে মাটিতে নেমে এল।

এ প্রসঙ্গে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি রোহন কানহাই-এর লেখা বই ‘ব্লাস্টিং ফর রানস’-এর কথা মনে পড়ছে। যেখানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার এডি বার্লোর কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন বার্লোর ফিল্ডিং দেখতে পয়সা দিয়ে লোক মাঠে আসতো। চেন্নাইয়ের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে হার্দিক-ধোনির ব্যাটে যুগলবন্দির সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচও দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছে।

বার্লোর ফিল্ডিং-এর মতোই ম্যাক্সওয়েলের এই ক্যাচ ক্রিকেটের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় সব সময়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE