Advertisement
E-Paper

হাবাসের ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু মলিনার

আন্তোনিও হাবাসের ছায়া থেকে কিছুতেই যেন বের করে আনা যাচ্ছে না আটলেটিকো দে কলকাতাকে। রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে শনিবার বিকেলে লরিতে করে একের পর এক দুর্গা প্রতিমা যাচ্ছিল মণ্ডপে। প্লাস্টিক বা কাগজ দিয়ে মুখ ঢাকা সব ক’টার।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৮
এটিকে-র প্র্যাকটিসে পস্টিগা। ছবি: উৎপল সরকার।

এটিকে-র প্র্যাকটিসে পস্টিগা। ছবি: উৎপল সরকার।

আন্তোনিও হাবাসের ছায়া থেকে কিছুতেই যেন বের করে আনা যাচ্ছে না আটলেটিকো দে কলকাতাকে।

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে শনিবার বিকেলে লরিতে করে একের পর এক দুর্গা প্রতিমা যাচ্ছিল মণ্ডপে। প্লাস্টিক বা কাগজ দিয়ে মুখ ঢাকা সব ক’টার। উদ্বোধনের আগে পুজো-কর্তারা দেখতে দিতে চান না মায়ের মুখ।

পুজো কর্তারা যেটা পারছেন সেটা যে কিছুতেই পারছেন না আটলেটিকো কর্তারা। হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও।

গত বারের চ্যাম্পিয়ন মার্কো মাতেরাজ্জির চেন্নাইয়ান টিমের বিরুদ্ধে খেলা। সেই ম্যাচের আগের দিন বরং সাদা ফুল শার্ট আর রাগত বক্সার মার্কা চেহারার দু’বছর ধরে দাপিয়ে বেড়ানো মুখটা বারবার চলে আসছে সামনে। নানা ঘটনায়। নানা প্রশ্নে।

আপনার আগে যিনি কোচ ছিলেন সেই হাবাস তো একবার চ্যাম্পিয়ন এবং পরের বার সেমিফাইনালে তুলেছিলেন কলকাতাকে। ওর সাফল্যের ছায়া কি আপনাকে তাড়া করছে? প্রশ্ন শুনে মনে হল কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়ে গিয়েছেন জোসে মলিনা। হাসিখুশি মুখটার রং-ও দেখা গেল সামান্য বদলাল মুহূর্তের জন্য। ‘‘উনি গ্রেট কোচ। ওঁর টিমের সঙ্গে আমরা দুটো ম্যাচ খেলব। এর বেশি কিছু বলার নেই। আমি চেন্নাইয়ান ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। কঠিন ম্যাচ। জিততে হবে।’’ বলতে বলতেই থেমে যান হাবাসের জুতোয় পা-গলানো কলকাতার নতুন কোচ।

ভাঙাচোরা, বিবর্ণ, অন্ধকারে ডুবে থাকা রবীন্দ্রসরোবর স্টেডিয়ামকে মাত্র এক মাসেই ঝাঁ-চকচকে করে তুলেছেন কলকাতার কর্তারা। তা সত্ত্বেও অনেক কাজ বাকি এখনও। মাঠ ভর্তি কয়েকশো শ্রমিক কাজ করছেন ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও। তার মধ্যেই এ দিন বিকেলে অনুশীলন চলছিল দ্যুতি-অর্ণব-বোরহাদের। হাবাসের সঙ্গে দিনরাত ঘর করা এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘ভাগ্যিস হাবাস কোচ নেই। মাঠে এত লোক দেখলে ও কিছুতেই অনুশীলনে নামত না। টিম হোটেলে ফিরে যেত। না হলে সবাইকে বের করে দিত।’’

পাঁচ তারা হোটেলে দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনের পর জোর তর্ক, হাবাস ওই প্রশ্নটা শুনলে কী করতেন? মাইক-টাইক সরিয়ে উঠে পড়তেন, না মুখটা লাল করে চুপ থাকতেন? প্রশ্নটা কী ছিল? কার্যত ঘুরিয়ে অর্ণবদের নতুন কোচ মলিনার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, একজন গোলকিপার কি কখনও সফল কোচ হতে পারেন? শুনে ভেঙে পড়েননি স্প্যানিশ ভদ্রলোক। রেগেও যাননি। বরং শান্ত ভঙ্গিতে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন, ‘‘গোলকিপার হয়ে মাঠে খেলা আর কোচিং করানো দুটো আলাদা বিষয়। কোচিং করানোটা বরং শক্ত। আমি সেটা শিখেছি। আইএসএলে কোচ হিসাবে এখানে এসে আমি উত্তেজিত।’’

হাবাস নামক আতসকাচের তলায় তাঁকে বারবার ফেলা হবে, বুঝে গিয়েছেন আটলেটিকোর নতুন কোচ। প্রথম ম্যাচ থেকেই। সে জন্যই মলিনার মুখ থেকে অন্তত তিন বার বেরিয়েছে, ‘‘এ বারের আইএসএল আমার কাছে তো বটেই সবার কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ। এক মাস মাদ্রিদে প্রি সিজনের পর মনে হচ্ছে আমরা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য তৈরি।’’ তিনি যে হিউম-দ্যুতির চেয়ে টিমের মার্কি হেলডার পস্টিগার উপর বেশি ভরসা রাখছেন সেটা বোঝা গেল যখন তাঁর মুখ থেকে বেরোল, ‘‘গত বার চেন্নাইয়ানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোল করেছিল ও। তার পর আর খেলেনি। এ বার হয়তো দেখবেন দশ ম্যাচে কুড়ি গোল করে ফেলবে।’’ হাবাসের ‘রোমিং ক্যাপ্টেনের’ ভাবনা থেকে সরে এসে টিমের সবচেয়ে সিনিয়র বিদেশি বোরহা ফার্নান্দেজকে অধিনায়ক করে দিয়েছেন মলিনা।

মলিনার অসুবিধা তিনি নিজে টিমে নতুন, তাঁর টিমে নতুন ফুটবলারের সংখ্যাও প্রচুর। অর্ণব মণ্ডল আর জুয়েল রাজা বাদে গত বারের কোনও দেশীয় ফুটবলার এ বার নেই এটিকে টিমে। স্প্যানিশ স্টপার পাবলো পাঁজরে চোট পেয়ে দেশে ফিরে যাওয়ায় রক্ষণ নিয়েও ঘেঁটে গিয়েছেন স্প্যানিশ কোচ। তাঁকে রেখেই গত দেড় মাস স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছিলেন মলিনা। ফলে বুঝে উঠতে পারছে না ডিফেন্স কী ভাবে সাজাবেন? যে সমস্যা মাতেরাজ্জির নেই। আইএসএলের বাকি সাত টিম কোচ বদলালেও চেন্নাইয়ান রেখে দিয়েছে মাতেরাজ্জিকে। শুধু তাই নয়, চ্যাম্পিয়ন টিমের জেজে-সহ চোদ্দ ফুটবলারকে রেখে দিয়েছে অভিষেক বচ্চনের টিম। তবে গতবারের দুই সফল বিদেশি মেন্দোজা এবং ইলানোকে ধরে রাখতে পারেনি চেন্নাইয়ের টিম। ‘‘আমি তারকা প্রথায় চলি না। টিমই আমার কাছে সব। এ বারও আমাদের টিম যথেষ্ট শক্তিশালী।’’ বলার সময় অদ্ভুত রকম উন্নাসিক দেখাল দশ বছর আগে ইতালিকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া চেন্নাইয়ান কোচ-কে। তারপর বললেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হিসাবে নামছি বলে কোনও চাপ নেই। শূন্য থেকে শুরু করছি ভেবেই খেলতে নামব।’’ বিপক্ষের পস্টিগা তো গতবার প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন আপনার দলের বিরুদ্ধে? আবার আপনাদের বিরুদ্ধেই পস্টিগা ফিরছে? ওঁর জন্য আলাদা কোনও স্ট্র্যাটেজি? দু’হাত ভর্তি ট্যাটু। ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের ট্যাটুতে হাত বোলালেন প্রশ্নটা শুনে। একটা হাল্কা হাসিও খেলে গেল মুখের কোণে। ‘‘পস্টিগা বড় ফুটবলার। তবে ওর জন্য আলাদা কোনও ভাবনা নেই। ও যাতে গতবারের পুনরাবৃত্তি করতে না পারে সেটা মাথায় রাখছি।’’ মাতেরাজ্জির কথা শুনে মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপের ফাইনাল জিতেছি, এটা তাঁর কাছে তো নস্যি।

অভিষেক বচ্চন আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়—দুই টিমের দুই মালিক ছাড়া কোনও তারকা আজ মাঠে থাকছেন না মাতেরাজ্জি বনাম মলিনার যুদ্ধ দেখতে। যুবভারতীর তুলনায় মাত্র দশ শতাংশ দর্শক ঢুকতে পারবেন স্টেডিয়ামে। হাজার দশেক। পরিবেশ আদালতের নির্দেশে রয়েছে নানা আাচরণবিধি। যাতে গত বারের তুলনায় খেলার বাইরের জৌলুস কমবে অনেকটাই। সেটা এই টুনার্মেন্টের ইউএসপি।

পুজোর মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। আলোয় আলোয় উজ্বল হয়ে উঠেছে শহর। দোকানে দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে। দেবীপক্ষের আগে ‘ফুটবলপক্ষ’ শুরু হয়ে গেলেও আইএসএল নিয়ে সেই পুরনো উন্মাদনা চোখে পড়ছে না এখনও।

সেটা পড়ুক বা না পড়ুক তা নিয়ে টিমের কর্তারা চিন্তিত হলেও জোসে মলিনার অবশ্য তাতে কোনও মাথাব্যথা নেই। থাকার কথাও নয়।

হিউমদের কোচের বরং বিনিদ্র রাত কাটার কথা অন্য কারণে। শুধু চেন্নাই নয়, হাবাসের সঙ্গে ছায়া যুদ্ধেও যে জিততে হবে তাঁকে। আর মলিনা ধরেই নিয়েছেন, আজ মাতেরাজ্জির চ্যাম্পিয়ন টিমকে হারাতে পারলেই থেমে যেতে পারে হাবাস-হাবাস আওয়াজ।

রবিবারে

আইএসএল—আটলেটিকো দে কলকাতা: চেন্নাইয়ান এফসি (রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম ৭-০০)।

ATK Antonio López Habas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy