Advertisement
০৭ মে ২০২৪
East Bengal

লক্ষ্য ট্রফি, ডার্বি জিতেও হাসি নেই সতর্ক কিবুর

দুই স্পেনীয় কোচের দ্বৈরথ আসলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পেশাদারিত্বই শেষ কথা।

হতাশ: হারের পরে বিমর্ষ মেহতাব সিংহ ও খুয়ান মেরা। ছবি: সুমন বল্লভ

হতাশ: হারের পরে বিমর্ষ মেহতাব সিংহ ও খুয়ান মেরা। ছবি: সুমন বল্লভ

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:২০
Share: Save:

জোসেবা বেইতিয়া, নংদম্বা নওরেমরা যখন হাত ধরাধরি করে দল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন, তখন গ্যালারিতে জ্বলে উঠেছে অসংখ্য মোবাইল-আলো। তার মধ্যেই উড়ছিল মুঠো মুঠো আবির। সবুজ-মেরুন তুবড়ি, মশাল। এই মোহময় দৃশ্য বাঙালির চিরকালীন ডার্বির ক্যানভাসে নতুন নয়।

কিন্তু সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আঁচ যে বাঙালির দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার এই ম্যাচে ছায়া ফেলবে সেটা কে জানত?

কিবু ভিকুনার দল যখন মাঠে নামছে, তখন লাল-হলুদ গ্যালারি থেকে আওয়াজ উঠল ‘এটিকে’, ‘এটিকে’। এটিকের সঙ্গে মোহনবাগানের সম্প্রতি গাঁটছড়া বাঁধার সেই কটাক্ষ মোহনবাগান জনতা ফিরিয়ে দিল একটি বিশাল ব্যানারে। হঠাৎ-ই দেখা গেল সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে সাদা-র উপর জাতীয় পতাকার রং দিয়ে লেখা, ‘‘পলাশীর প্রান্তরে সূর্যোদয়ের পরে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিলাম আমরাই।’’

চুপ করে থাকে কেন উল্টোদিকের গ্যালারি? বাঁটুল দি গ্রেটের ছবি দেওয়া আর একটি ব্যানার ডানা মেলল লাল-হলুদ গ্যালারিতে। তাতে লেখা ‘কি রে বাঙাল, এনআরসি আসছে, এ বার পালা!’ ইস্টবেঙ্গল এই পোস্টার লিখেছে? ভাবার সঙ্গে সঙ্গেই পাশে রক্তের রং দিয়ে লেখা একটা ফেস্টুন ঝুলিয়ে দেওয়া হল, ‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়।’’

ফুটবল মাঠের জয় হলেও, আইএফএ শিল্ডে ব্রিটিশদের হারিয়ে ১৯১১-র শিল্ড জয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্বুদ্ধ করেছিল বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। আই লিগের প্রথম ডার্বির মাঠে দেশ জুড়ে এনআরসি-র প্রভাব বঙ্গ-মনে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা বলা মুশকিল। হয়তো প্রতিবাদের একটা মঞ্চ হিসেবেই থেকে যাবে।

কারণ রবিবাসরীয় ডার্বির পরে তো বিদেশি ফুটবলারদের জয়গান গাইতে গাইতেই বাড়ি ফিরলেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। স্পেনীয় বেইতিয়া আর সেনেগালের পাপা বাবাকর জিওয়ারে নামে স্লোগানে ভেসে যাচ্ছিল ম্যাচ-পরবর্তী যুবভারতী। স্টেডিয়ামের ভিতরে ছোট্ট জলাশয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নৌকাকেও যা নাড়িয়ে দিয়ে গেল। আর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা আফসোস করতে করতে বাড়ি ফিরলেন দুই স্পেনীয় জুয়ান মেরা গঞ্জালেস আর ফ্রান্সের কাশিম আইদারার ব্যর্থতার কথা বলতে বলতে। ম্যাচে ২-১ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় লাল-হলুদের মিডিয়ো জুয়ানের শট প্রতিপক্ষের পোস্টে লেগে ফিরল। আর ইস্টবেঙ্গল ০-১ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় কাশিমের শট গোল লাইন থেকে ফিরিয়েছিলেন মোহনবাগানের ড্যানিয়েল সাইরাস।

রবিবারের ম্যাচ জিতে মোহনবাগান লিগ শীর্ষে রয়ে গেল ঠিক, দ্বিতীয় স্থানে থাকা পঞ্জাবের সঙ্গে ছয় পয়েন্টের তফাত ঘটিয়ে খেতাবের দৌড় শুরু করার রসদও হয়তো পেয়ে গেল কিবু বাহিনী। কিন্তু দুই স্পেনীয় কোচের দ্বৈরথ আসলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পেশাদারিত্বই শেষ কথা। ম্যাচের প্রথম ষাট মিনিট যদি কিবুর রিমোটে চলে, তা হলে শেষ তিরিশ মিনিট তা ছিল আলেসান্দ্রোর দখলে। আক্রমণের ঢেউ সামাল দিতে দিতে, রণনীতি বদলে অভীষ্ট লক্ষ্যে প্রায় পৌছেই গিয়েছিলেন লাল-হলুদ কোচ। দুর্ভাগ্য তাঁর সঙ্গী হয়ে রইল। হারের হ্যাটট্রিকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তাঁকে সাফাই দিতে হল, ‘‘চারটি ডার্বি খেলেছি। তার মধ্যে দু’টো জিতেছি। আজও জিততে পারতাম। ভাগ্য সাহায্য করল না। সেরা কোচও হয়েছি।’’

ডার্বি জেতার পরে কিবুর কাছেও কি ট্রফি জয়ের রাস্তা অনেকটা মসৃণ হল? প্রশ্ন শুনে বেইতিয়াদের স্পেনীয় কোচ গম্ভীর, ‘‘লিগের চল্লিশ শতাংশ রাস্তা পেরিয়েছি মাত্র। ট্রফি নয়, বৃহস্পতিবারের নেরোকা ম্যাচের কথা ভাবছি।’’ বলেই তিনি ফের বাস্তবের জমিতে। তাঁর মুখ থেকে বেরোল, ‘‘আমরা শেষ কুড়ি মিনিট খেলতে পারিনি। প্রথমার্ধে আমরা ভাল খেলেছি। দ্বিতীয়ার্ধে ওরা। ট্রফি জিততে হলে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।’’

স্টেডিয়ামের বাইরে তখন একের পর এক লরি, বাস, টেম্পো সারি দিয়ে চলছে। সবুজ-মেরুন আর জাতীয় পতাকা নিয়ে, উৎসবের মেজাজ তাতে। কিন্তু কিবুর মুখে ডার্বি জেতার পরেও হাসি নেই। ‘‘২-০ এগিয়ে যাওয়ার পরে আমার ছেলেরা ধরে নিয়েছিল ম্যাচটা শেষ হয়ে গিয়েছে। ফুটবল ম্যাচে যে শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়তে হয়, সেটা ওরা ভুলে গিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল সেই সুযোগে গোলটা করে গেল,’’ বলে দেন সবুজ-মেরুনের হেড মাস্টার। আলেসান্দ্রোর হাল দেখে তিনি বুঝে গিয়েছেন, ডার্বি জিতলে এক দিন হইচই হবে, কিন্তু ট্রফি না জিতলে ময়দান মনে রাখবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football East Bengal Mohun Bagan Kibu Vicuna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE