Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
I League 2019-20

আত্মতুষ্টি নয়, কিবু চান ধারাবাহিকতা

জুটি: অনুশীলনে বেইতিয়া ও গঞ্জালেস। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

জুটি: অনুশীলনে বেইতিয়া ও গঞ্জালেস। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০৫:০৩
Share: Save:

কিবু ভিকুনাকে জড়িয়ে ধরে গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের কোচ আকবর নওয়াজ বললেন, ‘‘অভিনন্দন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’’ মুখে স্মিত হাসি ছড়িয়ে জোসেবা বেইতিয়াদের কোচ উত্তর দিলেন, ‘‘ট্রফি কিন্তু এখনও হাতে পাইনি।’’

ময়দান জুড়ে পলাশ আর শিমুলের ছড়াছড়ি। কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছে ইডেনের আশেপাশে। দরজায় কড়া নাড়ছে রঙের উৎসব। একশো তিরিশ বছরের ক্লাবে ঢুকলে অজান্তেই মনে হয় প্রকৃতি বাজিয়ে চলেছে, ‘বসন্ত এসে গেছে’ গান। ক্লাব তাঁবুর বারান্দায় সকালের রোদ্দুরে ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ গন্ধও হাজির। প্রতিপক্ষ দলের কোচ ম্যাচের আগেই অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন। তাতে কী! মোহনবাগানের পেশাদার স্পেনীয় কোচ যে এখনও দরজা বন্ধ করে রেখেছেন ড্রেসিংরুমের। সেখানকার পরিবেশে আই লিগের প্রথম ম্যাচের মতোই মেজাজ। গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন সকালে এবং বিকেলে কিবু এবং তাঁর বাহিনীকে দেখে মনে হচ্ছে, আজ কল্যাণীতে ম্যাচ না জিতলেই খেতাব হাতছাড়া হয়ে যাবে। কিবুর কথাতেও তারই প্রতিধ্বনি, ‘‘ড্রেসিংরুমে ছেলেদের বারবার সতর্ক করছি, একটা ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট মানে কিন্তু প্রতিপক্ষ তোমাদের ঘাড়ে এসে উঠবে।’’ বলার সময় পাপা জিয়োহারাদের কোচের মুখাবয়বে চূড়ান্ত সতর্কতা।

বুধবার বিকেল পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করেছিলেন রিয়াল কাশ্মীর বনাম নেরোকা এবং চার্চিল ব্রাদার্স বনাম ট্রাউ ম্যাচের ফলের দিকে। লিগ টেবলের অঙ্ক ছিল কাশ্মীর এবং চার্চিল, দুটি দল হেরে গেলে এবং আজ কল্যাণীতে ম্যাচ জিতলেই গোষ্ঠ পাল সরণির তাঁবুতে পাঁচ বছর পর ঢুকে পড়বে ফের ট্রফি। কিন্তু কাশ্মীর জিতে যাওয়ায় সেই ইচ্ছায় দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্রান গঞ্জালেসরা আজ চেন্নাইকে হারালেও তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে আইজল ম্যাচের জন্য। কিবু অবশ্য কোনও অঙ্কেই ঢুকতে রাজি নন, ‘‘কে কোথায় কী করল, সে দিকে নজর দিতে চাই না। আমরা কী করতে পারি সেটাই মাথায় থাকে সব সময়। আমাদের লক্ষ্য হল লিগ শেষে সবার উপরে থাকা। সেজন্যই তিন পয়েন্ট চাই।’’

শুধু মুখে নয়, মাঠেও কিবু তা করেও দেখাচ্ছেন। ড্যানিয়েল সাইরাসের চোট। কোমরান তুর্সুনভের কার্ড। ফলে চার বিদেশি নিয়েই উপচে পড়া স্টেডিয়ামে আজ নামবে মোহনবাগান। এ দিনের অনুশীলনে তুর্সুনভের জায়গায় মাঝমাঠে রোমারিও জেসুরাজকে রেখে রণনীতি তৈরি করতে ব্যস্ত থাকলেন সবুজ-মেরুন কোচ। সেট-পিস থেকে পেনাল্টি কিক অনুশীলন, ছোট মাঠ করে পাসিং দক্ষতা বড়ানোর পাঠ, কিছুই বাদ গেল না দেড় ঘণ্টার অনুশীলনে। কিবুর গলাতেও নতুনত্ব নেই, ‘‘চেন্নাই খুব শক্তশালী দল। কাতসুমির মতো গতিময় ফুটবলার আছে। পজেশনাল ফুটবল খেলে। কঠিন ম্যাচ। জেতা সহজ হবে না।’’

মোহনবাগান টানা বারো ম্যাচ অপরাজিত। আই লিগের সর্বাধিক গোল (৩৩) পাপা-ফ্রান গঞ্জালেসরাই করেছেন। এই দলকে হারানোর ক্ষমতা কি আপনাদের আছে? প্রশ্ন শুনে চেন্নাই কোচ হেসে ফেলেন। বলেন, ‘‘সেটাই তো আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। যে ক্লাব দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের চেয়ে বারো পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে, তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমাদের লক্ষ্য সেটা কয়েক দিন পিছিয়ে দেওয়া। লিগ শীর্ষে থাকা দলকে হারানোই আমাদের মোটিভেশন,’’ কোনও রাখঢাক না করেই বলে দেন আকবর। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার গতবারের চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে মোহনবাগানের কোনও মিল পাচ্ছেন? সিঙ্গাপুর নিবাসী কোচের মুখ থেকে বেরোয়, ‘‘দলের একাত্মতা থেকে গোল করার ক্ষমতা। কোচের রণনীতি থেকে জেতার খিদে সব এক। আমার দলেও গতবার যা ছিল।’’ বলার পরে লা লিগায় খেলে আসা মোহনবাগান স্ট্রাইকার পাপার প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘অসাধারণ স্ট্রাইকার। এ বারের আই লিগের সেরা ফুটবলার। কতখানি জায়গা নিয়ে খেলে। ও আসার পরেই তো মোহনবাগান বদলে গেল।’’ কিবুর সুবিধা, চেন্নাইও চার বিদেশি নিয়েই আজ নামছে।

কোনও সুবিধা-অসুবিধা নিয়েই অবশ্য কথা বলতে নারাজ কিবু। ময়দান জুড়ে সবুজ-মেরুন আবির উড়তে শুরু করলেও তাঁর ড্রেসিংরুম যে সেই উৎসবের প্রবেশ নিষেধ।

বৃহস্পতিবার আই লিগে: মোহনবাগান বনাম চেন্নাই সিটি এফসি (কল্যাণী, বিকেল ৫.০০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football I League 2019-20 Mohun Bagan Kibu Vicuna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE