Advertisement
E-Paper

তবু হাবাসেই আস্থা রাখছে কলকাতা

মাঠে নামার আগে আটলেটিকো কলকাতার ড্রেসিংরুমে সৈনিকদের জন্য শেষ বার্তায় ‘মেজর’ আন্তোনিও হাবাস তুলে এনেছিলেন এক বিখ্যাত কিট প্রস্তুতকারক কোম্পানির পরিচিত স্লোগান। ‘ইমপসিবল ইজ নাথিং’!

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৪২
যন্ত্রণাবিদ্ধ।-উৎপল সরকার

যন্ত্রণাবিদ্ধ।-উৎপল সরকার

মাঠে নামার আগে আটলেটিকো কলকাতার ড্রেসিংরুমে সৈনিকদের জন্য শেষ বার্তায় ‘মেজর’ আন্তোনিও হাবাস তুলে এনেছিলেন এক বিখ্যাত কিট প্রস্তুতকারক কোম্পানির পরিচিত স্লোগান।

‘ইমপসিবল ইজ নাথিং’!

শেষ পর্যন্ত অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেননি স্প্যানিশ কোচ। আইএসএল-ওয়ান চ্যাম্পিয়নরা ছিটকে গিয়েছে আইএসএল-টু থেকে।

তার পরেও আইএসএল-তিনে হাবাসকেই কোচ রাখার দিকে এই মুহূর্তে ঝুঁকে এটিকে ম্যানেজমেন্ট।

টিমের পাঁচ মালিকের অন্তত চার জনের ভোট পাচ্ছেন হাবাস। আর দলের পঞ্চম অংশীদার আটলেটিকো মাদ্রিদ তো হাবাসের নিজের টিম-ই।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন, ‘‘হাবাস আমাদের টিমের ম্যাসকট।’’ আর এ দিন যুবভারতী ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘হাবাস ইজ হার্টবিট অব দ্য টিম। ওকে তো পরের বার রাখতেই হবে।’’

সৌরভ না হয় হাবাস সম্পর্কে বরাবরই আবেগ প্রবণ। কিন্তু বুধবার ভিভিআইপি লাউঞ্জে হাজির এটিকের অন্য তিন মালিকও তো দেখা গেল টুর্নামেন্ট থেকে দল ছিটকে যাওয়ার পরেও ঝুঁকে অকুতোভয়, একরোখা, জেদি সেই সাদা শার্টের দিকেই।

পরের মরসুমেও কি হাবাসের উপরই দলের দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন?

আটলেটিকো দে কলকাতার মালিকানার সবচেয়ে বেশি শেয়ার যাঁর হাতে সেই সঞ্জীব গোয়েন্কা প্রশ্ন শুনে প্রথমে দু’টো বুড়ো আঙুল তুললেন। থামস আপের ভঙ্গিতে। তার পর বললেন, ‘‘সবাই প্রতি বার চ্যাম্পিয়ন হয় না। কিন্তু এক বার চ্যাম্পিয়ন এবং পরের বার সেমিফাইনালিস্ট। এর চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স আর কী করতে পারেন এক জন কোচ!’’

সরাসরি না বললেও বোঝাই যাচ্ছিল, কর্তাদের অনেকে চেন্নাইয়ানের কাছে পুণেতে তিন গোলে হারার পর হাবাসের উপর কিছুটা বিরূপ হলেও এ দিন ফিরতি সেমিফাইনালে মহাচাপের সামনে দলের মরিয়া লড়াই দেখে স্বয়ং প্রধান মালিকই মুগ্ধ। ‘‘গোলগুলো সব হয়ে গেলে অন্য রেজাল্ট তো হতেই পারত,’’ বলছিলেন সঞ্জীব। সঙ্গে সংযোজন, ‘‘হাতে সময় আছে। আমরা সব পার্টনার মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেব। কাজ চলছে।’’

সেই ‘পার্টনার’দের এক জন সৌরভ তো হাবাসের জন্য এ দিনই প্রকাশ্য সওয়াল করে গেলেন। অন্য দুই টিম মালিক হর্ষ নেওটিয়া এবং উৎসব পারেখ-ও দেখা গেল হাবাসের পক্ষে। হর্ষ বললেন, ‘‘হাবাস আর ওঁর টিম এর চেয়ে আর কী ভাল করবে? খেলায় তো হারজিত হবেই।’’ আর এ মরসুমে এটিকের হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খেলার সাক্ষী উৎসব বললেন, ‘‘হাবাসের প্রচুর বায়নাক্কা আছে ঠিক। প্রতিদিন নানা ইস্যু নিয়ে সমস্যা ডেকে আনেন। কিন্তু এটাও ঠিক, আজ যে মাঠে সত্তর হাজারের কাছাকাছি দর্শক এসেছিলেন সেটাও হাবাসের জন্যই।’’

০-৩ পিছিয়ে। অফুরান চাপ। টিম মালিক-সহ সবাই ধরে নিয়েছেন ‘অসম্ভব’। সেই ম্যাচে টিম হোটেল থেকে বেরোনোর আগে হাবাস টিম ঘোষণার সময় সবার চোখ কপালে! পস্টিগা আঠারোতেই নেই। মোহনরাজ লেফট ব্যাক। টিমের সঙ্গে সর্বক্ষণের সঙ্গী এক কর্তা ম্যাচ শুরুর আগে বলছিলেন, ‘‘লোকটার মাথার ঠিক নেই। পস্টিগা, নাতোকে আঠারোজনে রাখবে না? লেকিচ প্রথম এগারোয়! পুণের মতো আবার আজ ডুববে টিমটা।’’ মালিকদের হাতে টিম লিস্ট পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে সেই আশঙ্কার কথা পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ম্যাচের পর সেই কর্তাটিকেই দেখা গেল উচ্ছ্বসিত! ‘‘লোকটা ফুটবলটা বোঝে। কী সাহসী ম্যাচ খেলল। গোলগুলো নষ্ট না হলে আমরাই ফাইনালে চলে যাই আজ।’’

এটিকে সচিব সুব্রত তালুকদার ম্যাচের পর স্টেডিয়ামের লবিতে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘হাবাসের সঙ্গে কথা বলে কোন বিদেশি আর স্বদেশি ফুটবলার রাখব ঠিক করে নেব। ওর সঙ্গে চুক্তি তো ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এখনও আলোচনার সময় আছে।’’ শেষ মিনিটে লাল কার্ড দেখায় সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি হাবাস। তবে যুবভারতী ছাড়ার সময় বললেন, ‘‘মাদ্রিদে এ বার স্পেশ্যাল ক্রিসমাস হবে। পরিবারের সবাই থাকবে। ওই উৎসবে যোগ দিতে যাব কয়েক দিনের মধ্যেই।’’

কিছুটা দাম্ভিক। কিছুটা অতৃপ্ত। কিছুটা মনমরা। লালকার্ড দেখে বেরেনোর সময় রেফারির উপর রাগে টানেলের বোর্ডে সজোরে লাথি মারেন। আবার ম্যাচের কিছু নিয়েই কথা বলতে চাইলেন না।

এহেন হাবাস আটলেটিকো কলকাতা চাইলেও কি তাঁর চুক্তি বাড়াবেন? হাবাসের ঘনিষ্ঠমহলের খবর, পরের মরসুমে তিনি দায়িত্বে নিলে নতুন কিছু শর্ত দেবেন টিম ম্যানেজমেন্টকে। তার মধ্যে একটা স্বদেশি ফুটবলার নির্বাচনে নিজের পূর্ণ ক্ষমতা চাইবেন হয়তো। হোমে ফ্লাডলাইট থাকা মাঠে গোটা মরসুম প্র্যাকটিসের ব্যবস্থার কথা বলবেন। আরও কিছু শর্ত দেবেন তিনি।

হাবাস পরের বার থাকুন বা না থাকুন, যুবভারতীর সামনের রাস্তায় এ দিন সুঠাম চেহারার সাদা শার্টের গাড়িতে উঠে মিলিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে মনে হল, আলেকজান্ডারের কাছে হেরে যাওয়া ইতিহাসের সেই পুরু। যিনি হেরেও বেঁচে থাকেন বীরের মতোই!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy