Advertisement
E-Paper

দুরন্ত সিরাজ হাসি ফোটালেন মায়ের মুখে

মেলবোর্নে আবির্ভাবেই ৪০ রানে দুই উইকেট নিলেন সিরাজ। এই সাফল্য ফের হাসি ফেরাল সিরাজের মায়ের মুখে।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৫৫
—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

মার্নাস লাবুশেনের উইকেট পেয়েই আকাশের দিকে দুই আঙুল তুলে ধরলেন মহম্মদ সিরাজ। প্রথম টেস্ট উইকেট উৎসর্গ করলেন তাঁর জীবনের প্রথম নায়ক, বাবা মহম্মদ ঘউসকে। হায়দরাবাদের বাড়িতে বসে সেই দৃশ্য দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি মা শবানা বেগম। গত মাসেই হারিয়েছেন স্বামীকে। ছেলেকে ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদে অটো চালিয়ে সংসার চালাতেন ঘউস। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁর ছোট ছেলের টেস্ট অভিষেক দেখার সুযোগ হল না। সিরাজের দাদা মহম্মদ ইসমাইলের বিশ্বাস, ‘‘আজ বাবার আত্মা শান্তি পেল। এই মুহূর্তের জন্যই এত পরিশ্রম, এত লড়াই ছিল আমাদের। যা সফল করল সিরাজ। বাবার মৃত্যুর পরে এখনও দেশে ফেরেনি। আমরাই বলেছি, দেশের প্রতিনিধিত্ব কর। তাতে বাবাই খুশি হবে।’’

মেলবোর্নে আবির্ভাবেই ৪০ রানে দুই উইকেট নিলেন সিরাজ। এই সাফল্য ফের হাসি ফেরাল সিরাজের মায়ের মুখে। সিরাজের দাদা বলছিলেন, ‘‘গত এক মাস খুবই দমবন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। মা একেবারেই মানতে পারেনি বাবার মৃত্যু। আজ সিরাজের সাফল্যে হাসি ফিরল মায়ের মুখে।’’

বাবার মৃত্যুর পর থেকে প্রত্যেক দিন ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে পরিবারের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেন সিরাজ। শনিবারও অন্যথা হয়নি। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সিরাজ। তাঁর মা-ও পারেননি নিজেকে সামলাতে। কী বললেন সিরাজ? ইসমাইলের উত্তর, ‘‘ও মাকে সান্ত্বনা দিল। বলল, এটাই সাফল্যের শুরু। এখানে থেমে গেলে চলবে না। বলছিল, যে দিন অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরব সে দিন যেন বিরিয়ানি বানানো হয়। না হলে বন্ধুর বাড়ি থেকে যাবে।’’

আরও পড়ুন: বছরের শেষ ম্যাচেও সমর্থকদের জয় উপহার দিতে পারলেন না ফাওলার

আরও পড়ুন: জয় অধরা, তবু খুশি ফাওলার

দাদার মুখ থেকেই বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলেন সিরাজ। বাবার শেষ যাত্রায় থাকতে না পারলেও ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে বাবার মুখ দেখেন সিরাজ। এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, তাঁকে সামলাতে ছুটে আসেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি ও হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। তার পর থেকে টানা তিন দিন, ফোন করে শুধু কাঁদতেন তরুণ পেসার। দাদাকে প্রশ্ন করতেন, কেন এই আঁধার নেমে এল তাঁর পরিবারে। সেই সময় কী বলে ভাইকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন? দাদার উত্তর, ‘‘বলেছিলাম, আজ সত্যি বাড়িতে সব শূন্য। কিন্তু এই আঁধার মেটানোর চাবিকাঠিও তোর হাতে। একমাত্র তুই পারবি আমাদের সংসারে উৎসব ফেরাতে। ভাই কিন্তু কথা শুনেছে। কথা রেখেছে।’’

সিরাজের ছোটবেলার বন্ধু আহমেদ কথা বলতে গিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলছিলেন। ছোটবেলায় ঘউসের অটো করে সিরাজের সঙ্গেই প্র্যাক্টিস করতে যেতেন আহমেদ। বন্ধুর সাফল্যের দিনে পুরনো স্মৃতি তাঁকেও ফিরিয়ে নিয়ে যায় শৈশবে। আহমেদ ও সিরাজ ভাল খেললে তাঁদের কাবাব খাওয়াতে নিয়ে যেতেন ঘউস। আবেগপ্রবণ আহমেদ বলছিলেন, ‘‘চাচা (ঘউস) আমার বাবার মতো। আর সিরাজকে নিজের ভাই হিসেবেই দেখি। অনুশীলন থেকে ফেরার সময় রাস্তার ধারে কাবাবের লোভনীয় গন্ধ আমাদের টানত। তখন পকেটে একটাও টাকা থাকত না। ভাল খেললে চাচা-ই আমাদের কাবাব খাওয়াতে নিয়ে যেত। সেই স্মৃতি এখনও তরতাজা।’’ যোগ করেন, ‘‘চাচার মৃত্যুর পরে সিরাজ বলেছিল, অনুশীলনে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে। সুযোগ পেলে যেন ফিরে তাকাতে না হয়।’’

মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে দুর্দান্ত অভিষেক ঘটে গিয়েছে। সিরাজের এই আবির্ভাব তাঁর ভারতীয় দলের স্থান পাকা করতে পারে কি না, তা সময়ই বলবে।

Mohammed siraj Cricket India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy