ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে উঠে গেলেন নোভাক জোকোভিচ। মঙ্গলবার রাতে তিনি হারালেন আমেরিকার টেলর ফ্রিৎজ়কে। জোকোভিচ জিতেছেন ৬-৩, ৭-৫, ৩-৬, ৬-৪ গেমে। সার্বিয়ার তারকা প্রতিযোগিতায় প্রথম বার কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে চলেছেন। সেমিফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ কার্লোস আলকারাজ়, যিনি মন শান্ত রাখতে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন গলফে। মেয়ের জন্মদিনের উপহার হিসাবে ম্যাচ জিতে কোর্টেই নাচলেন জোকোভিচ। এ দিকে, প্রতিপক্ষ ওয়াকওভার দেওয়ায় না-খেলেই সেমিফাইনালে চলে গিয়েছেন মেয়েদের গত বারের চ্যাম্পিয়ন এরিনা সাবালেঙ্কা।
ফ্রিৎজ়ের বিরুদ্ধে আগের ১০টি ম্যাচেই জিতেছিলেন জোকোভিচ। অপরাজিত থাকার রেকর্ড আরও একটি বাড়িয়ে নিলেন। পাশাপাশি রেকর্ড গড়ে গ্র্যান্ড স্ল্যামের ৫৩ নম্বর সেমিফাইনালে উঠলেন। ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে উঠেছে ১৪তম বার। এই নজির জিমি কোনর্স ছাড়া আর কারও নেই। এ বছর প্রতিটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে উঠলেন জোকোভিচ। কেরিয়ারে সাত বার এই কাজ করে দেখালেন।
গত বছর ইউএস ওপেনে রানার্স হয়েছিলেন ফ্রিৎজ়। এ বার তিনি কোয়ার্টারেই বিদায় নিলেন। একটি সেট পেলেও গোটা ম্যাচে পাল্লাই দিতে পারেননি জোকোভিচের সঙ্গে। ফলে আমেরিকার কোনও পুরুষ খেলোয়াড় এ বার ইউএস ওপেন জিততে পারবেন না। শেষ বার এই কাজ করে দেখিয়েছিলেন অ্যান্ডি রডিক, ২০০৩-এ।
ম্যাচের পর জোকোভিচ বলেন, “খুব হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হয়েছে। যে কেউ জিততে পারত। দ্বিতীয় সেটে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্রেক পয়েন্ট বাঁচাতে পেরে আমি ভাগ্যবান। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সেটের বেশির ভাগ সময়ে ফ্রিৎজ় ভাল খেলেছে। শেষ গেমটা তো দুর্দান্ত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে টেলর ডাবল-ফল্ট করল।”
শুক্রবার পাঁচ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী আলকারাজ়ের বিরুদ্ধে নামবেন জোকোভিচ। আলকারাজ় এই ইউএস ওপেনে এখনও একটিও সেট হারাননি। মুখোমুখি সাক্ষাতে জোকোভিচ ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে। শেষ দু’টি ম্যাচেই জিতেছেন তিনি। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার এবং প্যারিস অলিম্পিক্সের ফাইনালে হারিয়েছেন। এই প্রথম ইউএস ওপেনে দেখা হচ্ছে দুই তারকা খেলোয়াড়ের।
২ সেপ্টেম্বর জন্মদিন ছিল জোকোভিচের মেয়ে তারার। সে কোর্টে হাজির ছিল না। তাই মেয়ের জন্মদিনে উপহার হিসাবে কোর্টেই কোরিয়ান ব্যান্ড ডেমন হান্টার্সের গান ‘সোডা পপ’-এর তালে নেচে দেখান জোকোভিচ। পরে বলেন, “মেয়ের জন্মদিনে একটা ছোট উপহার দিলাম। নাচ দেখে কাল মেয়ে জানাবে কেমন হয়েছে। ওই আমাকে শিখিয়েছে কী ভাবে নাচতে হয়। কয়েক মাস আগে ওর কাছ থেকে এই গানের কথা জেনেছি। বাড়িতে নাচ অনুশীলনও করেছি দু’জনে মিলে।”
এ দিকে, সেমিফাইনালে ওঠার পর আলকারাজ় জানিয়েছেন, মন শান্ত রাখতে এবং ফোকাস ধরে রাখতে তিনি গলফ খেলায় মন দিয়েছেন। কোয়ার্টারে জিরি লেহেচকার বিরুদ্ধে ম্যাচেই আলকারাজ়ের মনঃসংযোগের নমুনা দেখা গিয়েছে। তাঁর শক্তি, টেকনিক এবং নিয়ন্ত্রণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ছিল।
আলকারাজ় বলেছেন, “গলফ খেলে তো ভালই লাগছে। তা হলে কেন বদলাতে যাব? ছুটি পেলেই গলফ খেলতে চলে যাচ্ছি। প্রাক্তন মাস্টার্স চ্যাম্পিয়ন সের্জিয়ো গার্সিয়ার সঙ্গে গলফ অনুশীলন করছেন আলকারাজ়। জানিয়েছেন, ২০২০ থেকে মন দিয়ে গলফ খেলা শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, “খুব ছোটবেলায় বাড়ির সামনে অল্প স্বল্প গলফ খেলতাম। পছন্দ হত খেলাটা। তবে ২০২০-র পর থেকে আরও বেশিকরে খেলা শুরু করি। গলফ কোর্সে চলে যাই এখন। গলফের প্রেমে পড়ে গিয়েছি। গলফ খেলতে নামলে মনে বেশ শান্তি আসে। নিজের খেলারও উন্নতি হয়।”
সিনারের কিট ব্যাগ থেকে কিছু একটা জিনিস নিতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন এক দর্শক। ঘটনাটি ঘটেছে সিনারের ম্যাচের পর। তিনি দর্শকদের কাছে গিয়ে সই বিলোচ্ছিলেন। তখনই এক দর্শক সিনারের কিট ব্যাগের জ়িপার খুলে কিছু একটা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে সফল হননি। সামনেই ছিলেন এক নিরাপত্তারক্ষী। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই দর্শকের হাত সরিয়ে দেন। সিনার তখন অন্য দিকে তাকিয়েছিলেন। তিনি ব্যাপারটি বুঝতে পারেননি। তার পরেই সাজঘরে ঢুকে যান।
আরও পড়ুন:
এ দিকে, না খেলেই সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছেন সাবালেঙ্কা। তাঁর প্রতিপক্ষ মার্কেটা ভন্ড্রোসোভা চোটের জন্য ওয়াকওভার দিয়েছেন। এর আগে সপ্তম বাছাই জেসমিন পাওলিনি এবং নবম বাছাই এলিনা রিবাকিনা হারিয়ে চমকে দিয়েছিলেন ভন্ড্রোসোভা। তবে মঙ্গলবার অনুশীলন করতে গিয়ে চোট পাওয়ায় ম্যাচ খেলতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতে অনুশীলনের কোর্ট ছেড়ে বেরোন।
সমাজমাধ্যমে সাবালেঙ্কা লেখেন, “খুব খারাপ লাগছে ওকে দেখে। মার্কেটার জন্য ব্যথিত। অসাধারণ টেনিস খেলছিল। তাই এই যন্ত্রণা কতটা সেটা বুঝতে পারছি।” শীর্ষ বাছাই সাবালেঙ্কা সেমিফাইনালে খেলবেন জেসিকা পেগুলার বিপক্ষে।