Advertisement
E-Paper

‘কট সাহা বোল্ড শামি’তে মুগ্ধ কোচ

ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর তেমনই মনে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করে ওঠার পরে শাস্ত্রী বলছেন, ‘‘আমি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ছি নতুন একটা কম্বিনেশন দেখে।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৩৪
দুরন্ত: ভারতীয় দলের চমক নতুন যে জুটি। শ্রীলঙ্কা সিরিজে বিধ্বংসী মহম্মদ শামির বলে কিপার ঋদ্ধিমান সাহা নিয়েছেন দারুণ সব ক্যাচ। ফাইল চিত্র

দুরন্ত: ভারতীয় দলের চমক নতুন যে জুটি। শ্রীলঙ্কা সিরিজে বিধ্বংসী মহম্মদ শামির বলে কিপার ঋদ্ধিমান সাহা নিয়েছেন দারুণ সব ক্যাচ। ফাইল চিত্র

কট মার্শ বোল্ড লিলি। দুই কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয়কে নিয়ে তৈরি ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা এক যুগলবন্দি।

দু’জনের অবসরের চার দশক পরে আধুনিক ক্রিকেটে কি গড়ে উঠছে আর এক উইকেটকিপার ও ফাস্ট বোলারের স্বপ্নের জুটি?

ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর তেমনই মনে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করে ওঠার পরে শাস্ত্রী বলছেন, ‘‘আমি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ছি নতুন একটা কম্বিনেশন দেখে। কট সাহা বোল্ড শামি।’’ এখানেই না থেমে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা মস্তিষ্ক হিসেবে পরিচিত শাস্ত্রী যোগ করছেন, ‘‘পাল্লেকেলের এই টেস্টে সাহা-শামি জুটিকে দেখে কিন্তু আমার মার্শ-লিলি যুগলবন্দির কথা মনে পড়ে গিয়েছে।’’

পাল্লেকেলের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, শাস্ত্রী কেন নতুন এই জুটিকে নিয়ে উত্তেজিত। হোয়াইটওয়াশ করার টেস্টে শামির আগুনে বোলিং গোটা বিশ্বের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এমন উচ্চ মানের পেস বোলিং তাঁরা সাম্প্রতিককালে আর দেখেননি। কিন্তু টেস্টের আরও একটা ‘হাইলাইট’ ছিল উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা এবং পেসার মহম্মদ শামির পার্টনারশিপ।

মার্শ-লিলি ছিল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার। শামি-ঋদ্ধি ওয়েস্ট বেঙ্গলের। রবি শাস্ত্রী

প্রথম ইনিংসে দু’টি উইকেট পেয়েছিলেন শামি। দু’টি শিকারের পিছনেই ঋদ্ধিমানের হাত। দু’টি উইকেটই শামি পান কট বিহাইন্ডে। দ্বিতীয় ইনিংসে শামি পান তিন উইকেট। তার মধ্যে দু’টি উইকেট আসে ঋদ্ধিমানের ক্যাচ থেকে। অর্থাৎ, দুই ইনিংস মিলিয়ে শামি যে পাঁচটি উইকেট পেয়েছেন তার মধ্যে চারটিতেই ভূমিকা রয়েছে ঋদ্ধিমানের বিশ্বস্ত গ্লাভসের। ‘কট সাহা বোল্ড শামি’ সেখান থেকেই এসে পড়ছে।

ভারতীয় দলের হেড কোচ শাস্ত্রী এমনিতেই বাংলার এই দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। শামিকে তিনি ডাকেন ‘পশ্চিমবঙ্গের নবাব’ বলে। এর মধ্যেও একদিন বলছিলেন, ‘‘অসাধারণ পেসার। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের সেরা পেসারদের একজন।’’ তেমনই ঋদ্ধিমানকে নিয়েও শুধু প্রশংসাই শোনা যায় শাস্ত্রীর মুখ থেকে। কলম্বোয় সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের কঠিন পিচে ঋদ্ধিমানের উইকেটকিপিংকে তাঁর দেখা সেরা আখ্যাও দিয়েছিলেন শাস্ত্রী। এমনও বলেছিলেন যে, ঋদ্ধির কিপিং দেখে তাঁর প্রাক্তন ইংল্যান্ড কিপার বব টেলরকে মনে পড়ে যায়।

সত্যিই কি বাংলার উইকেটকিপার-পেসার জুটিকে দেখে তাঁর অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তিদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে? শাস্ত্রী তাঁর স্বভাবসিদ্ধ আগ্রাসী ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, ‘‘একদমই তাই। আমার কট মার্শ বোল্ড লিলি— সেই বিখ্যাত পার্টনারশিপটাই মনে পড়ে যাচ্ছে।’’ এর পরেই দারুণ এক পর্যবেক্ষণ জুড়ে দিলেন, ‘‘মার্শ-লিলি ছিল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার। সাহা আর শামি ওয়েস্ট বেঙ্গলের (পশ্চিমবঙ্গের)। ওদের জায়গার নামেও কত মিল!’’

অ্যালবাম: সেই অমর দৃশ্য। বোলার ভয়ঙ্কর ডেনিস লিলি। উইকেটকিপার রডনি মার্শ। ক্রিকেট লোকথায় ঢুকে গিয়েছে দু’জনের এই জুটি। ফাইল চিত্র

শুনতে শুনতে মনে হবে, নতুন এক স্লোগানই হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটে চালু করে দিলেন শাস্ত্রী। কট মার্শ বোল্ড লিলি হচ্ছে ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা যুগলবন্দির একটা। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াকা-র মাঠ হচ্ছে পার্‌থ। বিশ্বের দ্রুততম পিচ বরাবর যেখানে ব্যাটসম্যানদের স্বাগত জানিয়েছে। পার্‌থে লিলির আগুনে বোলিংয়ের সামনে পড়া মানে ব্যাটসম্যানদের কাছে ছিল সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।

আর তাঁরা জানতেন, ব্যাটে লেগে উইকেটের পিছনে যাওয়া মানেই কোনও এক রডনি মার্শ অপেক্ষা করছেন ওঁত পেতে। শিকার লুফে নিতে ভুল করবেন না। ১৯৭১-এর জানুয়ারি মাসে মার্শ ও লিলি যুগলবন্দির যাত্রা শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে শেষ বার তাঁরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে একসঙ্গে নেমেছিলেন। এর মধ্যে ৯৫বার স্কোরবোর্ডে উঠেছে কট মার্শ বোল্ড লিলি। ১৩ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে শাসন করা একটা জুটি। এক জন উইকেটের পিছনে দস্তানা হাতে দাঁড়াতেন। অন্য জন বল হাতে আগুন ঝরাতেন। আজও তাঁদের নিয়ে সম্ভ্রম এতটুকু কমেনি।

ঐতিহাসিক এক যুগলবন্দির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার দুই ক্রিকেটারের নাম জড়িয়ে দিলেন ভারতীয় দলের হেড কোচ। শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যদ্বাণীও করে ফেললেন, ‘‘এই কম্বিনেশন আরও অনেক দূর যাবে। সাহা যেমন উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ নিচ্ছে আমার শামি নবাবও বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছে। ওদের দু’জনকে দেখে বাংলার ক্রিকেটারদেরও উৎসাহিত হওয়া উচিত। ওদের দেখে নতুন আরও ক্রিকেটার উঠে আসুক বাংলা থেকে।’’

কট সাহা বোল্ড শামি। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মতো পশ্চিম বাংলার জুটিও কি ক্রিকেটের ইতিহাসে ঢুকে পড়ার নতুন যাত্রা শুরু করে দিল?

শাস্ত্রীয় মত সে রকমই!

Rod Marsh Dennis Lillee Wriddhiman Saha Mohammed Shami Ravi Shastri রবি শাস্ত্রী Cricket মহম্মদ শামি ঋদ্ধিমান সাহা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy