তাঁর করা গোলে ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক আট বার টানা লিগ জয় ভুলতে পারছেন না আল আমনা।
ঝলমলে ফুটবলজীবনে মিশর, ইরাক, ইরানের মতো দেশের ক্লাবে খেলেছেন চুটিয়ে। তবুও লাল-হলুদের মাঝমাঠের নতুন জেনারেল সোমবার বলে দিলেন, ‘‘ভারতে চার বছর খেলেছি। কখনও ট্রফি জয়ের পর এরকম দৃশ্য দেখিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়ে আসার পর একটা যন্ত্রণা ছিল। তাই মনে হচ্ছে কলকাতায় এসে রবিবারের ডার্বিতে পুর্ণজন্ম হল আমার। মনে হচ্ছে নতুন একটা জীবন পেয়েছি। সিরিয়ার সেই দিনগুলোর কথা বারবার মনে পড়ছে।’’ স্বীকার করলেন, ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল ভাল খেলতে পারেনি। বরং মোহনবাগান তুলনায় গোলের সুযোগ বেশি পেয়েছে। বলার পরও তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা নিয়ে এখন আর ভাবার জায়গা নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত ট্রফি আমরাই জিতেছি। আসল তো ওটাই।’’
ইরাক বা ইরানের বড় ক্লাবে খেলার সময় বহু ডার্বি খেলেছেন। আমনা বললেন, ‘‘সেখানেও ষাট-সত্তর হাজার লোক আসত।’’ তা সত্ত্বেও কলকাতার ডার্বিকে কেন ‘নতুন জীবন পেলাম’ বলে ব্যাখ্যা করছেন তিনি? ‘‘দুটো কারণে। আমি কোনও ডার্বিতে এ রকম পায়ে এসে সমর্থকরা কালার স্প্রে (পড়তে হবে আবির) করছেন দেখিনি। এটা আবেগ থেকে হয়। দ্বিতীয়ত মিশর বা অন্য দেশে থাকার সময় যখন সেরা ফুটবলটা খেলেছি, তখন আমার দুই মেয়ে রেয়তাজ আর তালিন সেটা দেখেনি। উন্মাদনা কম ছিল বলে ওরা বুঝতেই পারত না বাবা কী করে? এখন ওরা উপভোগ করে। কাল জেতার পর আমার চেয়ে ওদের উচ্ছ্বাস যেন বেশি ছিল। ফোনে যেভাবে আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না। ওরা সবসময় বাবার গোল দেখতে চায়। শুনলাম সামনে বাংলার একটা বড় উৎসব আছে। তিন-চার দিন চলে (ইঙ্গিত দুর্গাপুজোর দিকে)। ভেবেছি সেটা মেয়েদের নিয়ে দেখতে যাব। ওরা বাবার গোলের মতোই আনন্দ পাবে।’’
আরও পড়ুন: খেতাব ইস্টবেঙ্গলের, রেফারি বিতর্কে বাগান
আইজল এফ সি-র হয়ে আই লিগ জিতেছেন। অবনমনে চলে যাওয়া দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এ বার আপনার মিশন কি ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ দেওয়া? প্রশ্ন শুনে হাসেন আমনা। বলে দেন, ‘‘শুনলাম ওই ট্রফিটা ক্লাবে আসেনি ১৪ বছর। চেষ্টা তো করতেই হবে। সেটা দিতে পারলে আর একটা ইতিহাস হবে। তবে এটা বলছি যে, আই লিগের চেয়ে কলকাতা লিগ জেতা কঠিন। ডার্বি জেতা আরও কঠিন।’’
বয়স পঁয়ত্রিশের কোটায়। সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাঁটেন। ভারতেই খেলছেন প্রায় চার বছর। আগের তুলনায় নড়াচড়ার মধ্যে স্লথ ভাব এসেছে। কিন্তু মাপা পাস করতে পারেন। মাঠ জুড়ে খেলেন। প্রাণশক্তিতে ভরপুর। লিগের ন’টা ম্যাচেই টিমের প্রাণভ্রোমরা হয়ে উঠেছেন। সদস্য সমর্থকরা তাঁকে দেখে উদ্ধেল। ফুটবলার জীবনের শেষ দিকে এসে এই শক্তি পান কোথা থেকে? আমনা একটু ভাবেন। তারপর বলেন, ‘‘সিরিয়া ছেড়ে আসার পর ফুটবল খেলে বেঁচে থাকার লড়াইটা আমাকে শক্তি যোগায়। ভাল খেলতে উদ্বুদ্ধ করে। দেশে এখনও শান্তি ফেরেনি। আমার অনেক আত্মীয় আছেন ওখানে।’’
ডার্বি জেতার পর রবিবার রাতে ইস্টবেঙ্গল হোটেলের উৎসবে আমনা-ই ছিলেন মধ্যমণি। ‘৮’ লেখা একটি কেক কাটেন অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডল। যিনি ম্যাচটাই খেলেননি। খালিদ জামিল-সহ পুরো টিমই ছিল। কেক নিয়ে জন্মদিনের কায়দায় মাখামাখি হয়। ব্যাস ওই টুকুই।
ইস্টবেঙ্গল এর পর অসমের নওগা-তে একটি টুনার্মেন্ট খেলতে যেতে পারে। তারপরেই আই লিগ। এ দিন আমনার মতোই দারুণ মেজাজে ছিলেন লাল-হলুদ কোচ। খালিদ জামিল বললেন, ‘‘আমাদের পরের লক্ষ্য পরের ম্যাচ। তা সে যেখানেই খেলা হোক।’’ জানিয়ে দিলেন, ‘‘আই লিগটা ভাল শুরু করতে হবে, কলকাতা লিগের মতো। তা হলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে।
দু’টি রাজ্যের ক্লাবকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করার গৌরব শুধু সুভাষ ভৌমিকের আছে। সেটা করার সুযোগ রযেছে খালিদের সামনে। শুনে খালিদ বললেন, ‘‘তা হলে ওটাই এ বার লক্ষ্য হবে আমার।’’ আপাতত ইস্টবেঙ্গলে পাঁচ দিন ছুটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy