শেষ মুহূর্তে কোনও সমঝোতা সূত্র বেরোলে অন্য কথা। না হলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে রাজ্যের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী মাঠে নামলেও কালীঘাটের দাদা এবং ভাইয়ের চমকপ্রদ এবং আকর্ষণীয় ভোটযুদ্ধ হচ্ছেই। এবং সেটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি বাড়িয়েই।
আজ শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে দুপুর দুটোয় বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার বহু প্রতিক্ষিত নির্বাচন। ফল বেরোতে গড়িয়ে যেতে পারে বিকেল। মোট তেরোটি পদ। ভোটার ৬৪ জন। সংস্থার প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাধারণ সচিব, কোষাধ্যক্ষ এবং সচিব পদে নির্বাচন হচ্ছে। তবে এর মধ্যে নজরকাড়া লড়াই হচ্ছে সাধারণ সচিব পদ। ওই পদ দখলে নেমেছেন বর্তমান সচিব চন্দন রায় চৌধুরী এবং মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চন্দন দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা অজিতবাবুর পছন্দের প্রার্থী হিসাবে। দাদা-ভাইয়ের লড়াই ঘিরে তাই রীতিমতো উত্তপ্ত ময়দান।
দু’দিন আগে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল, বিওএ-র নির্বাচন নিরামিষ হলেও হতে পারে। কিন্তু এ দিন ময়দান এবং সংস্থার অফিস ঘুরে মনে হচ্ছে তা ধুন্ধুমার এবং আগুনে হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। কারণ, দাদা অজিত যেমন তাঁর প্যানেলকে জেতাতে আদা-চাল খেয়ে নেমে সারা দিন চরকি পাক দিয়েছেন, তেমনই ভাই স্বপনও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। বি ও অফিসে সারাদিন পা না রাখলেও দুপুরে স্বপনকে দেখা গিয়েছে ভোট কেন্দ্রে। ফোন বন্ধ রেখেছেন সারাদিন। তবে অন্য নম্বর থেকে যোগাযোগ রাখছেন সতীর্থদের সঙ্গে। সন্ধ্যায় একবার স্বপন কথা বলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী দাদার সঙ্গেও। স্বপনবাবুর প্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানো এক প্রার্থী এ দিন দাবি করলেন, নির্বাচন হবেই। কারও অনুরোধ বা নির্দেশে তা বন্ধ হবে না বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন তাদের নেতা।
ভাইয়ের এই মনোভাবে অবশ্য অবাক নন দাদা। অজিতবাবু বললেন, ‘‘কে কোথায় কী করছে খোঁজ রাখছি না। আমরা ভোটে জিতে দু’টো কাজ করব। বাংলার জাতীয় গেমস করার চেষ্টা করব। তা ছাড়া যে সব সংস্থায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে সেগুলোও মেটাব।’’ বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, অজিতবাবুর সঙ্গে এ দিনও ভোট নিয়ে কথা বলেন রাজ্যের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী। কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চান তাঁরা।
অঙ্ক বলছে, তেত্রিশটা ভোট পেলেই প্রার্থী বা প্যানেলের জয় নিশ্চিত। ফলে দু’পক্ষই নিজেদের বারো প্রার্থীর ভোট নিশ্চিত ধরে বাকি ভোটের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। কোনও পদে টাই হলে প্রেসিডেন্ট কাস্টিং ভোট দিয়ে তাঁকে জেতাতে পারবেন। এই পরিস্থিতিতে দাদা এবং ভাই দু’জনেই ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করছেন, তাদের পুরো প্যানেলই জিতবে। স্বপনবাবুর প্যানেলের বেশ কয়েক জন প্রার্থী আবার একান্তে জানাচ্ছেন, সমঝোতা করে একটা প্যানেল হোক সেটাই চান তাঁরা। ফলে ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে ক্লাব বা রাজ্যের বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থার বহু চমকপ্রদ নির্বাচনের সাক্ষী থেকেছে ময়দান। তবে কখনও রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দাদা-ভাই ক্রীড়াসংস্থার ভোটযুদ্ধ মুখোমুখি হয়েছেন, এই দৃশ্য দেখেনি। তাই নির্বাচন ঘিরে আজ ময়দানে কোন নতুন নাটক হয় কি না তা দেখতে আগ্রহী ক্রীড়াপ্রেমীরা।