একটা জয়ই ভোল পাল্টে দিয়েছে গোটা দলের। এমনই যে, কিংবদন্তি প্রাক্তন পেসার কোচ বলে দিচ্ছেন বিরানব্বইয়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমের ছায়া দেখছেন তিনি। ‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাঘ’রা যেন ইমরান খানের টিমের বিশ্বাসটা ফিরে পেয়েছে।
একটা জয়ই ছন্দে ফিরিয়ে দিয়েছে দলের। এমনই যে, ন’টা উইকেটই দাপটে তুলে নিয়েছেন পেসাররা। ওপেনিংয়ে নতুন জুটিও নেমেই হিট। এমনকী, স্বভাব শান্ত ক্যাপ্টেন সমালোচকদের পাল্টা আক্রমণাত্মক জবাব দিচ্ছেন। ড্রেসিংরুমে হাসিমুখে সেলফি উঠছে। কিছুদিন আগেই হারের জ্বালায় টিভি ভেঙে ফেলার ফ্ল্যাশব্যাক ভুলে সমর্থকরা মেতে উদ্দাম জয়ের উৎসবে।
একটা জয়েই বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তন হল পাকিস্তানের। শনিবার। এবি ডে’ভিলিয়ার্সের দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৯ রানে হারিয়ে (ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে)। “আশা করছি ১৯৯২-এ আমরা যে ভাবে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম, এ বারও সেটাই হবে। বিশ্বকাপ মানেই চাপ নিতে হবে। যেটা বিরানব্বইয়ের টিম খুব ভাল সামলেছিল,” বলেছেন পাকিস্তানের কোচ ওয়াকার ইউনিস।
সে বারও বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডই। “সে বারও প্রথম দিকের ম্যাচ হেরেছিল পাকিস্তান। তবে পরে দারুণ ভাবে উঠে দাঁড়িয়েছিল টিমটা। ক্যাপ্টেন ইমরান খানের মতো ওদেরও একটা বিশ্বাস ছিল যে আমরা পারব। এই বিশ্বাসটাই আমাদের ড্রেসিংরুমেও ফিরে এসেছে। যেটা ক্রমশ আরও মজবুত হবে,” যোগ করেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার।
পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করতে নামার পর যদিও পাক সমর্থকদেরও মনে হয়নি ম্যাচটা জিততে পারে মিসবা-উল হকের টিম। একে অকল্যান্ডের বাউন্স আর গতিময় পিচে ডেল স্টেইন (৩-৩০), মর্নি মর্কেলরা (২-২৫) পেসের আগুন ছোটাচ্ছিলেন। তার উপর বৃষ্টির দাপট। দু’বার যে জন্য ম্যাচ থামাতে হয়। তার মধ্যেও পাকিস্তানের ওপেনিংয়ে উইকেটকিপার সরফরাজ আহমেদকে খেলানোর ফাটকা কিছুটা হলেও কাজে লাগে। যিনি শেষ পর্যন্ত করেন ৪৯ বলে ৪৯। তবে সরফরাজ আর মিসবা ছাড়া (৫৬) পাকিস্তানের বাকি ব্যাটসম্যানরা বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি। ২২২ এ পাক ইনিংস শেষ হওয়ার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ডে’ভিলিয়ার্সরা সহজেই জিতছেন।
‘হাল্ক’-এর হুঙ্কার। বিশ্বকাপে পাক পেসারদের পেশি শক্তি প্রদর্শনের পর। শনিবার অকল্যান্ডে। ছবি: গেটি ইমেজেস।
ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ডে’ভিলিয়ার্সদের টার্গেট দাঁড়ায় ৪৭ ওভারে ২৩২। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা রান তাড়া করতে নামার পরই ছবিটা পাল্টাতে থাকে। কী ভাবে? “আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছি। যে ক্রিকেটটার জন্যই সবাই পাকিস্তানকে চেনে। ঠিকঠাক কম্বিনেশনটাও খুঁজে পেয়েছি। প্লেয়াররাও নিজেদের ক্ষমতাটা বুঝতে পারছে,” বলেছেন ওয়াকার। পাকিস্তানের পেসার ত্রয়ীর ঝড়টা শুরু হয় প্রথম ওভারেই। মহম্মদ ইরফান (৩-৫২) কুইনটন ডি’কককে ফিরিয়ে। পরে উইকেট তোলার কাজটা ভাগাভাগি করে নেন রাহত আলি (৩-৪০) আর ওয়াহাব রিয়াজ (৩-৪৫)।
২৪ ঘণ্টা আগেই ভারতের ওয়াকার বাউন্সি পিচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ‘কোনওরকমে’ হারানো নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয়েছিল ধোনিদের। পাকিস্তানের পেস ব্যাটারির আক্রমণে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটিংও বাউন্স আর গতিময় পিচে সুবিধে করতে পারল কোথায়! এক মাত্র ডে’ভিলিয়ার্স (৫৮ বলে ৭৭) ছাড়া। তিনিও সোহেল খানের বলে ফিরতেই ৩৩.২ ওভারে ২০২ রানে শেষ প্রোটিয়া ইনিংস। যে হারের জন্য প্রোটিয়া অধিনায়ক দায় নিয়ে বলে দিলেন, “কাউকে দোষ দিচ্ছি না। তবে আমার মনে হচ্ছে কিছুই একশো শতাংশ হচ্ছে না। এটা অনেকটা একটা গাড়ির সেকেন্ড বা থার্ড গিয়ারে আটকে যাওয়ার মতো।”
তবে জয়ের আবহেও পাকিস্তানের পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক। ম্যাচের পরই ওয়াকার হঠাৎ সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে উঠে যান। কোচকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন এ দিন ৪৯ রানের পাশাপাশি রেকর্ড ছ’টা ক্যাচ ধরা উইকেটকিপার সরফরাজ আহমেদকে আগে খেলানো হয়নি? ওয়াকার প্রশ্নটা শুনেই বিরক্ত হন। তাঁর সঙ্গে সরফরাজের ড্রেসিংরুমে ঝামেলা হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছিল। সে ব্যাপারে জানতে চাইতেই, “বোকা বোকা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় নেই,” বলে সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে উঠে যান ওয়াকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ২২২ (মিসবা ৫৬, স্টেইন ৩-৩০)
দঃ আফ্রিকা ২০২ (ডে’ভিলিয়ার্স ৭৭, রাহত ৩-৪০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy