Advertisement
E-Paper

‘মহড়ার লাফেই প্রকট মেসির সঙ্কল্প’

বৃহস্পতিবারের মস্কোয় যদি দেখা গিয়ে থাকে রঙিলা রাশিয়াকে, যদি মাঠের মধ্যে সকলকে অবাক করে দিয়ে উদয় হয়ে থাকে পাঁচ তারা রাশিয়ার, এ বার তা হলে বিশ্বের সামনে সাড়ম্বর আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে ফুটবল ভক্ত রাশিয়ার।

ওলেগ কোশেলেভ

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০৪:২৪
উড়ন্ত: অনুশীলনেও বল দখলের লড়াইয়ে মরিয়া মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

উড়ন্ত: অনুশীলনেও বল দখলের লড়াইয়ে মরিয়া মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

বোধনের পরে আর এক বোধন!

বৃহস্পতিবারের মস্কোয় যদি দেখা গিয়ে থাকে রঙিলা রাশিয়াকে, যদি মাঠের মধ্যে সকলকে অবাক করে দিয়ে উদয় হয়ে থাকে পাঁচ তারা রাশিয়ার, এ বার তা হলে বিশ্বের সামনে সাড়ম্বর আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে ফুটবল ভক্ত রাশিয়ার।

না, ভুল বললাম। ফুটবল-ভক্ত কেটে দিয়ে বরং লেখা উচিত, মেসি-ভক্ত রাশিয়া। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের মতোই এখানেও যে আর্জেন্তিনীয় মহাতারকার জন্য প্রার্থনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মস্কোয় শনিবারই ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছেন লিয়োনেল মেসি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়া লুঝনিকি স্টেডিয়ামে নয়, মস্কোর স্পার্টাক স্টেডিয়ামে আইসল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা। গ্যালারি যে নীল-সাদা জার্সি আর পতাকায় ভরে যাবে, তা নিয়ে কারও সন্দেহ থাকছে না।

মেসি ম্যানিয়া প্রত্যক্ষ করার জন্য অবশ্য আমাদের শুক্রবারের ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। দু’মাস আগে থেকে তা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের ‘তাস’ সংবাদসংস্থার অফিসই যেমন মস্কোর কেন্দ্রস্থলে। সেই অফিসের পাশেই পাঁচ তলা বাড়ির সমান মেসির ছবি আঁকা হয়েছে। গত দু’মাস ধরে প্রত্যেক সকালেই অফিসে ঢোকা-বেরনোর সময় মেসির সঙ্গে দেখা হচ্ছে আমাদের। সামনেই রাস্তার মোড়। ট্রাফিক লাইটের দিকে তাকিয়ে গত দু’মাস ধরেই মনে হচ্ছে, লিয়োনেল মেসির হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে যেন জ্বলছে-নিভছে ট্রাফিক লাইট।

কী অদ্ভুত মিল এই ট্রাফিক লাইটের সঙ্গে মেসির রুশ অভিযানের! কখনও তা সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছে, অধরা বিশ্বকাপ এ বারই জিতে ফিরবেন বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবল মহাপুরুষ। আবার কখনও তা ‘লাল’ হয়ে যাচ্ছে আশঙ্কার চোরাস্রোতে। রাশিয়াতেও যে সিগন্যালের জ্বলা-নেভার খেলা চলবে না, কে বলতে পারে! ব্রাজিলে গত বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও যে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাঁর! শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালে হেরে অকাল অবসর ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।

নিজের দেশেই প্রবল অসন্তোষ আর ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। রাশিয়ায় ব্যর্থ হওয়া মানে বুয়েনস আইরেসের রাস্তায় আরও জোরাল হবে সেই ধ্বনি— মেসি আর্জেন্টিনার কোথায়! মেসি তো স্পেনের! সেখানেই তো সারা জীবন কাটিয়ে দিলেন! অনেক ট্রফি দিতেছেন, কিন্তু সবই বার্সেলোনার হয়ে। আর্জেন্টিনাকে কী দিলেন!

মেসি জানেন, এই লোকগুলোর কথা। সম্ভবত সেই কারণে মস্কোয় প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগের দিনের অনুশীলনে অসম্ভব ক্ষিপ্র দেখাল তাঁকে। ফুটবল বিশ্বে সকলেই জানে, মেসির একমাত্র দুর্বল জায়গা হেডিং। খুব বেশি তাঁকে হেডে গোল করতে দেখা যায় না। বরং তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর শক্তি মাথা। অনেকটা লাফিয়ে উঠে হেড করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মেসি নন, রোনাল্ডো। কিন্তু গোটা পৃথিবীর চিত্রসাংবাদিকদের উৎফুল্ল করে দিয়ে আর্জেন্টিনার অনুশীলনে এ দিন মেসি লাফাতে থাকলেন রোনাল্ডোর মতোই। সকলের মাথা ছাপিয়ে তাঁর এমন শূন্যে ভেসে ওঠার দৃশ্য খুবই বিরল। প্রায় দেখাই যায় না। আর্জেন্তিনা কোচ হর্হে সাম্পাওলি বল দখলের অনুশীলন করাচ্ছিলেন। সেখানে মেসি যথারীতি মাটির বলের লড়াইয়ে সকলকে তো পিছনে ফেলে দিলেনই। সেটার মধ্যে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে-হেতু তিনি এ রকম হামেশাই করে চলেছেন। যেটা বাকরুদ্ধ করে দিল, তা হচ্ছে, শূন্যের বলেও নাছোড় মেসি। বাতাসে ভেসে উঠে বার বার যিনি সকলের মাথা ছাড়িয়ে বলের দখল নিচ্ছিলেন।

নাকি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বেরনো একটি তথ্য তাঁর চোখে পড়ল? যেখানে বলা হয়েছে, আইসল্যান্ডের অনেক লম্বা ফুটবলার আছেন। তাঁরা নাকি সেই উচ্চতার সুবিধাকে হাতিয়ার করে আর্জেন্টিনার খর্বকায় ফুটবলারদের আটকানোর চেষ্টা করবেন? রাশিয়ায় প্রচুর মেসিভক্ত রয়েছেন, আগেই লিখেছি। শুক্রবার মাঠে যাঁরা আর্জেন্টিনার জার্সিতে, মেসির মুখোশ পরে হাজির হবেন। প্রত্যেকের পিঠে লেখা থাকবে ১০ নম্বর আর মেসির নাম। তাঁরা নিশ্চয়ই চাইবেন, প্রিয় তারকা আবার প্রমাণ করে দিন, বেটেখাঁটো হয়েও তিনিই ফুটবলবিশ্বের শিখরে বসে আছেন! এত দিন এই খর্বকায় চেহারা নিয়েই তো তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন!

মস্কোর মেসিম্যানিয়া নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখছি, শেষ করে ওঠা যাবে না। এখানে নামা মাত্র আর্জেন্টিনার সেরা তারকাকে নিয়ে যা হচ্ছে, রাশিয়ার ইতিহাসে কোনও নায়ককে নিয়ে হয়নি। বিমানবন্দরে যে দিন আর্জেন্টিনা দল নেমেছিল, সে দিনই প্রচুর ভক্ত হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। ব্রনিৎসিতে ‘ওপেন’ অনুশীলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলে-দলে সমর্থকেরা নিজস্বী তুলে এসেছেন। অনেক দলই এমন ‘ওপেন’ অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আর্জেন্টিনার মতো কোথাও এতটা ভিড় উপচে পড়েনি। কারণ, অবশ্যই লিয়োনেল মেসির উপস্থিতি। অনেকে এমনকি, মেসির প্রথম দল নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের জার্সি পরেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এঁদের বেশির ভাগ টিনএজার। মেসির সব চেয়ে কট্টর ভক্ত এই কিশোর-কিশোরীরা।

আইসল্যান্ডের কোচকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মেসিকে কী ভাবে থামাবেন? হেইমির হালগ্রিমসন বললেন, ‘‘মেসি বিশ্বের সেরা ফুটবলার। আমার কাছে কোনও ম্যাজিক ফর্মুলা নেই।’’ প্রতিপক্ষে লিয়োনেল মেসি মানে সব কোচকেই যেটা করতে দেখা যায়— প্রার্থনা!

Lionel Messi Argentina FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy