চেন্নাই ওপেনের ফাঁকে কেক কাটলেন ৯৯-তম ডাবলস পার্টনার, দক্ষিণ আফ্রিকার রাভেন ক্লাসেনকে নিয়ে।
সাকেত মিনেনির জোরাল ফোরহ্যান্ড রিটার্নটা যখন তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে, লিয়েন্ডার পেজ নেট থেকে খুব একটা দূরে নয়। বলটা তাঁর বাঁ পায়ের টেনিস শু্য-এর দিকে যাচ্ছিল। লিয়েন্ডারের শরীর সেই মুহূর্তে ডান দিকে ঝুঁকে। চকিতে তেতাল্লিশের সেই শরীরও ছিলে ছেঁড়া ধনুকের মতো বেঁকে বাঁ দিকে ঘুরল! যে অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্স পেশাদার ট্যুর গত চব্বিশ বছর দেখে চলেছে।
এটিপি ট্যুর ডাবলসে নিজের রজত জয়ন্তী বর্ষেও লিয়েন্ডার একই রকম! ওই অনবদ্য রিফ্লেক্সের মধ্যেই এক লহমায় তাঁর র্যাকেট পজিশন ফোরহ্যান্ড থেকে ব্যাকহ্যান্ডে চলে গেল। এবং নেটের সামনে থেকে ছোট্ট ড্রপ ভলিটা যখন বিপক্ষ কোর্টে মহেশ ভূপতি আর মিনেনি, দু’জনের মাঝে পড়ছে, ততক্ষণে চেন্নাই ওপেনে নুঙ্গমবক্কম স্টেডিয়ামের গভীর রাতেও গ্যালারি ঠাসা দর্শক নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে ওই পয়েন্ট লিয়েন্ডার আর পেশাদার ট্যুরে তাঁর নিরানব্বইতম ডাবলস পার্টনার রাভেন ক্লাসেনের পকেটেই ঢুকছে।
বেজায় নাটকীয় ভঙ্গিতে তেতাল্লিশের লিয়েন্ডারের পঁচিশতম এটিপি মরসুম শুরু হয়েছে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে। দ্বিতীয় ম্যাচেই পেজ-ক্লাসেন (বত্রিশের যে দক্ষিণ আফ্রিকানের সঙ্গে ২০১৫-র জন্য লিয়েন্ডার চুক্তি করেছেন পার্টনারের বিগ সার্ভ আর ব্যাক কোর্ট থেকে জোরাল রিটার্ন দক্ষতার কারণে) পড়ে যান দীর্ঘ নয় মাস পর প্রথম কোনও এটিপি টুর্নামেন্টে নামা মহেশ আর তরুণ জুড়ি মিনেনির মুখোমুখি।
আইপিটিএলের প্রাণপুরুষ মহেশ যতই নিজের র্যাকেট প্রায় দেরাজবন্দি করে ফেলুন না কেন, কোর্টে নেমে নেটের উল্টো দিকে বহুদিনের ‘বন্ধু’ লিয়েন্ডারকে দেখলে যে এখনও তাঁর বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয়, ২০১৫ চেন্নাই ওপেনও তার সাক্ষী। লিয়েন্ডারের তো সব সময়ই বিগ ম্যাচে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরে। যার ধাক্কায় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা একটা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়ে টিম লিয়েন্ডারের অনুকূলে শেষ হয় ১-৬, ৬-১, ১০-৭।
মহেশ যদি তেতাল্লিশের লিয়েন্ডারের অসাধারণ রিফ্লেক্স সম্পর্কে ম্যাচ শেষে বলে দেন, “ওর শরীরটা বাঁ দিকে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গিয়েছিলাম এ বার ব্যাকহ্যান্ড রিটার্নটা আমার আর সাকেতের মাঝে এমন একটা নো ম্যান্স ল্যান্ডে আসছে, যেখানে আমাদের র্যাকেট পৌঁছবে না।” তা হলে, দশ পয়েন্টের টাইব্রেকে সার্কিটে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া মহেশের (বর্তমান ডাবলস র্যাঙ্কিং ৩৩৬) একটা ব্যাক কোর্ট ভলি রিটার্ন ফেরাতে ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ২৮ নম্বর (এখনও ভারতীয়দের মধ্যে সেরা র্যাঙ্কিং) লিয়েন্ডারের প্রতিক্রিয়া, “বলটা ওদের ব্যাক কোর্টে পাঠিয়েই বুঝে গিয়েছিলাম এই পয়েন্টটা আমাদের গেল! কারণ, মহেশ ওই জায়গাটা তার আগের মুহূর্তে কভার করে ফেলবে। এটাই ডাবলস ম্যাচের অনুমানক্ষমতা!”
মহেশের এর পর কেরিয়ার নিয়ে কী পরিকল্পনা এখনও অস্পষ্ট হলেও লিয়েন্ডার আরও একবার সাফ বলে দিয়েছেন, ‘‘আমার কাছে বয়স স্রেফ একটা নম্বর। আমার মাথায় বরং ঘুরছে দু’হাজার ষোলোয় চুয়াল্লিশ বছর বয়সে নিজের সাত নম্বর অলিম্পিক খেলা। রিওতে। আমার আর নতুন করে কাউকে কিছু প্রমাণ করার নেই। তবু আমি পুরো ফিট এবং খেলাটা চূড়ান্ত উপভোগ করছি। সেটাই আমার মোটিভেশন। নিজের জন্য, নিজের দেশের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলে চলার।”
নতুন বছরে নিজের নতুন ডাবলস পার্টনার সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পাশাপাশি লিয়েন্ডার জানিয়েছেন, দশ দিন পর শুরু হতে চলা মরসুমের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলীয় ওপেনে তিনি মিক্সড ডাবলস খেলবেন মার্টিনা হিঙ্গিসকে নিয়ে। “নিরানব্বই একটা বিরাট নম্বর। তবে আমার সব ডাবলস পার্টনারের সঙ্গেই আমি খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছি। প্রত্যেকেই আমার কেরিয়ারে অনুপ্রেরণা ছিল।”
আরও তাৎপর্যের, যখন বিশ্বের এক নম্বর নোভাক জকোভিচ বছরের প্রথম টুর্নামেন্টের গোড়ার দিকে ছিটকে পড়েছেন কার্লোভিচের কাছে কাতার ওপেনে, কিংবা সম্প্রতি ভারতীয় টেনিস ইতিহাসে প্রথম বিশ্ব ডাবলস চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জয়ী মেয়ে সানিয়া মির্জা নতুন বছরের প্রথম টুর্নামেন্ট ব্রিসবেন ওপেন থেকে তাঁর নতুন পার্টনার সিয়ে-কে নিয়ে বিদায় নিলেন আজ, তখন তেতাল্লিশের চিরসবুজ লিয়েন্ডারের দাপট যেন আরও বেশি উজ্জ্বল চেন্নাই ওপেনের ফাইনালে পা রেখে!
ছবি: পিটিআই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy