মেধা-তালিকায় অষ্টম নৌরিন খাতুন, সাইন আলম। নবম স্থানে রয়েছেন সোমা সাহা (বাঁ দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র।
কারও পরিবার চলে ছোট্ট মুদি দোকানের আয়ে। কারও টোটো চালিয়ে। কিন্তু এত অনটনেও লেখাপড়ায় ছেদ পড়েনি ওঁদের। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই গৌড়বঙ্গের তিনকন্যার লড়াই আজ সাফল্যের মুখ দেখল। নৌরিন খাতুন ও সাইন আলম উচ্চ মাধ্যমিকে অষ্টম স্থান পেয়েছেন। সোমা সাহা নবম হয়েছেন।
মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের বুধিয়া গ্রামের বাসিন্দা নৌরিন স্থানীয় হাই মাদ্রাসার ছাত্রী। বাবা ফিরোজ হোসেন টোটো চালিয়ে সংসার চালান। সংসারে স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে। ছেলেমেয়েরা সকলেই লেখাপড়া করে। নৌরিন চান অধ্যাপক হতে। এ দিন তিনি বললেন, “আর্থিক অনটনের কারণে দু’জনের বেশি শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশন পড়তে পারিনি। অধ্যাপক হয়ে সংসারের হাল ধরতে চাই। দিদি কলেজে পড়ে, আমিও ভর্তি হব। দুই বোনকে বাবা কলেজে কী ভাবে পড়াবেন তা ভেবেই পাচ্ছি না।” মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, “আর্থিক প্রতিবন্ধকতা না থাকলে নৌরিন আরও ভাল ফল করতে পারত।”
প্রায় একই গল্প উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের কেওটাল গ্রামের ছাত্রী সাইনের। অষ্টম হওয়া ওই ছাত্রীর পরিবারের আর্থিক অবস্থাও শোচনীয়। বাবা সফিকুল আলম একটি মুদিখানা দোকান চালান। তাতেই সংসার চলে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলে বাবা-কাকারা তাঁকে পৌঁছে দিতেন। বাবা সফিকুল বলেন, “মেয়ে ডাক্তার হতে চায়। অত খরচ বহন করব কী ভাবে?”
অন্য দিকে, নবম স্থানাধিকারী সোমা যখন তিন বছরের, তখন মাকে ছেড়ে চলে যান তাঁর বাবা। সেই থেকেই মা ও দুই বোন মামাবাড়িতে। মালদহের মানিকচক ব্লকের মথুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মুটোলায় তাঁর মামাবাড়ি। সংসার চালাতে মা ইতি সাহা তাঁর ভাইয়ের ছোট্ট মুদির দোকানে বসতেন। আঁকার খুব শখ ছিল। কিন্তু মামার সংসারে সেই শখ পূরণ হয়নি মানিকচক শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রী সোমার। তবে আর্থিক কষ্টের মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন। সোমা বললেন, “ছোট থেকে খুব কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। অনেক শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছি। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল, হয়নি। দাদু-মামারা না দেখলে সংসার ভেসেই যেত। এখন লেখাপড়া শিখে অধ্যাপক হয়ে রোজগার করে দাদু, মামা ও মায়ের ভরসা হতে চাই।” সোমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক জ্যোতিভূষণ পাঠক বলেন, “সোমা খুবই আর্থিক টানাটানির মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া করছে। তা সত্ত্বেও মেধা তালিকায় ও জায়গা করে নিয়েছে। এ তো গর্বের কথা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy