Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কে বাঘা, সেরা বাইন আমিই! বাজনদারদের হরীতকী গ্রাম চেয়ে আছে পাকা রাস্তার দিকে

আমবাগানে খাটিয়া পেতে বসে জনা তিনেক যুবক। শুধনো গেল, বাঘা বাইনের নাম শুনেছেন? মুখ তুলে চাইলেন তাঁরা। তার পর সটান জবাব, ‘‘মোড়ল বলতে পারবেন!’’

অভিজিৎ সাহা
হরীতকী শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২১
Share: Save:

আমবাগানে খাটিয়া পেতে বসে জনা তিনেক যুবক। শুধনো গেল, বাঘা বাইনের নাম শুনেছেন? মুখ তুলে চাইলেন তাঁরা। তার পর সটান জবাব, ‘‘মোড়ল বলতে পারবেন!’’

মোড়ল লক্ষ্মীরাম মুর্মুর বাড়ি গ্রামের পুব দিকে। তিনি বাঘার নাম শুনে একটু সুর চড়িয়ে বলেন, “কে বাঘা! আমিই গ্রামে সব থেকে ভাল মাদল বাজাই। হরীতকীতে এই লক্ষ্মীরাম মুর্মুর থেকে ভাল বাজনদার খুঁজে পাবেন না।” উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা এবং সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এর কথা বলতেই এক গাল হাসলেন লক্ষ্মীরাম। বলেন, “আমাদের গ্রাম নিয়ে গপ্পো আছে! আমাদের মাটির রাস্তা কি তা হলে পাকা হবে?”

মালদহের উপর দিয়ে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। গাজলের টোল ট্যাক্স পেরিয়ে ইংরেজবাজার শহরের দিকে এলে একটু এগিয়েই বাঁ হাতে সরকারি সবুজ ফলকটি চোখে পড়বে— ‘হরীতকী গ্রাম’। ওই বোর্ডটির পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে ভাঙাচোরা রাস্তা। ঘোষপাড়া, বাঙালপাড়া, দখলকালি মোড়ের মতো একাধিক গ্রাম পেরিয়ে আরও প্রায় দশ কিলোমিটার গেলে পড়বে হরীতকী। গ্রামে গোটা কুড়ি পরিবারের বাস। তাঁদের মাটির দেওয়ালের উপরে টালির ছাউনি দেওয়া বাড়ি। বিদ্যুৎ সেখানে পৌঁছেছে ঠিকই, তবে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার সামর্থ নেই অধিকাংশের। তাই সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার প্রায় গোটা গ্রাম।

দিনমজুরি করে টেনেটুনে দু’বেলা হাঁড়ি চড়ে লক্ষ্মণ সোরেন, মঞ্চু হাঁসদা, গোলাপী সোরেনদের। তার মধ্যেই ধামসা, মাদল বাজিয়ে গানবাজনাও করেন তাঁরা। কবেকার গ্রাম? লক্ষ্মীরাম বলেন, “আমাদের ভিটে এখনকার বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরে ছিল। সেখানেই ছিল বিশাল হরীতকী গাছ। তার নামেই বোধহয় গ্রামের নাম।’’ সে গাছ এখন কোথায়? সত্তরোর্ধ্ব লক্ষ্মীরাম বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ বছর আগে গাছটি ঝড়ে পড়ে যায়!’’

গুপি-বাঘার গল্প শোনেননি প্রায় কেউই। শোনাতে গেলেও বিশেষ কান দেন না। আমলকি গ্রামের গুপি আর হরীতকী গ্রামে বাঘার প্রথম সাক্ষাৎ হয় গ্রামের বাইরে এক জঙ্গলে। সেখানে প্রথমে বাঘ বেরোয়। তার পরে ভূতের নাচন। সব শেষে ভূতের রাজার বর পেয়ে বরাত খুলে যায় দু’জনের। বাস্তবের হরীতকীর কাছে আমলকি বলে কোনও গ্রাম নেই। এখনও দেখা মেলেনি বাঘেরও। আর ভূত? লক্ষ্মণ সোরেনরা বলছিলেন, ‘‘সূর্য ডুবলে গোটা গ্রামই তো ভুতুড়ে!’’

গাজলের হরীতকী গ্রামে ঢোল বাজানোর রেওয়াজ নেই। তবে বাড়ি বাড়ি রয়েছে ধামসা, মাদল। গ্রামের সকলেই পারেন মাদল বাজাতে। তবে রুজি-রোজগারের তাগিদে সে সব তাকে তুলে রেখেছেন বাবুলাল হাঁসদা, টুনু বাস্কেরা। আর বাজাবেন না? প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘‘যে ভূতের রাজার গপ্পো শোনালেন, তার বরে যদি পথঘাট ঠিক হয়ে যায়, ঘর-সংসার ভরে যায়, তখন নিশ্চয়ই বাজাব মনের আনন্দে।’’

হরীতকী এখন সেই রাজারই পথ চেয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Village Maldah Goopy Gyne Bagha Byne
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE