Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Scottish Church College

বিভাজন নয়, ভালবেসে ‘শাসন’ করতেন ওয়াজিদ

বর্তমানে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা, জাতি-ধর্মবিদ্বেষ নিয়ে সমাজের একাংশের যে মনোভাব দেখা যাচ্ছে সেই প্রসঙ্গেই আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন নবাব ওয়াজিদ আলি।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ০৪:০৫
Share: Save:

শুধু চিড়িয়াখানা বা বিরিয়ানি নিয়ে আসা নয়, লখনউ থেকে নির্বাসনের সময় নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যকেও। স্কটিশ চার্চ কলেজের ইতিহাস বিভাগ আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে এ ভাবেই নির্বাসিত নবাবের ঐতিহ্যকে তুলে ধরলেন তাঁর বংশধর শাহেনশাহ মির্জা। গোটা ওয়েবিনারে নবাবের রুচি, সংস্কৃতিমনস্কতা, ব্যক্তিগত জীবন সব নিয়ে আলোচনা হলেও মূল সুর বেঁধে রেখেছিল উনবিংশ শতকে ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে এক নবাবের শাসনের কথাই।

বর্তমানে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা, জাতি-ধর্মবিদ্বেষ নিয়ে সমাজের একাংশের যে মনোভাব দেখা যাচ্ছে সেই প্রসঙ্গেই আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন নবাব ওয়াজিদ আলি। ইতিহাসবিদ সর্বপল্লী গোপালের লেখায় উল্লেখিত, ১৮৫৫ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অযোধ্যায় হনুমান গঢ়ী মন্দিরকে রক্ষা করেছিলেন নবাবই।

নবাবের বংশধরের কথাতেও উঠে এসেছে ধর্মনিরপেক্ষতার উল্লেখ। বলেছেন, ‘‘এক বার হোলি ও মহরম একই দিনে পড়ে গিয়েছিল। নবাব আদেশ দেন, সকালে রাজত্বে হোলি উৎসব হবে। বিকেলে মহরম পালিত হবে।’’ শুধু তাই নয়, হিন্দুস্থানি থিয়েটারের অন্যতম স্রষ্টা ওয়াজিদ আলি ‘রাধা-কানহাইয়া কা কিসসা’ লিখেই ক্ষান্ত হননি, তাতে নিজে কৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন। উর্দু বা ফার্সির বদলে বহু ঠুমরি লিখেছেন ব্রজভাষায়। শাহেনশাহের কথায়, ‘‘নবাব তাঁর প্রজাদের ধর্মের নিরিখে বিচার করতেন না। এটাই ছিল তাঁর মূল আদর্শ।’’

নবাবকে অযোধ্যা থেকে উৎখাত করেছিল ব্রিটিশরা। লখনউ থেকে বেনারস হয়ে তাঁর বজরা ভিড়েছিল কলকাতার বিচালিঘাটে। শাহেনশাহ জানান, সেখান থেকে স্পেনসেস হোটেল, ফোর্ট উইলিয়ামে নজরবন্দি, গার্ডেনরিচের বাংলোয় কিছু দিন কাটিয়ে শেষমেশ মেটিয়াবুরুজে ঠাঁই নেন তিনি। গড়ে তোলেন এক টুকরো ছোট্ট লখনউ। তাঁর হাত ধরেই কলকাতায় আসে বিরিয়ানি, পাখির লড়াই, ঘুড়ি ওড়ানো। এসেছিল তাঁর শখের চিড়িয়াখানা এবং কত্থক নাচিয়ে বাইজিরাও। ধীরে ধীরে কলকাতার বাবু কালচারে ঢুকে পড়েছিল সেই সব নবাবিয়ানা। আজও তাই মেটিয়াবুরুজের দর্জিপাড়া বা ঘুড়ির দোকানে ছবিতে নবাবের অস্তিত্ব মেলে।

নবাব কেন কলকাতাকে বেছে নিলেন, তা নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, ওয়াজিদ আলি কোথাও যেন ধর্মনিরপেক্ষতার মিল খুঁজে পেয়েছিলেন গঙ্গাপারের এই মাটিতে, ভালবেসে গড়ে তুলেছিলেন এক জনপদ। সেখানেই সাধারণ কবরে চিরশায়িত তিনি।

রাজত্ব হারানো এক নির্বাসিত নবাবের সেই ভালোবাসাই তো হতে পারে বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতার ‘রক্ষাকবচ’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE