Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Naihati

বাজি তৈরির রাসায়নিক বিক্রি করত ধৃত মুন্না

পুলিশ জানিয়েছে, মুন্নার রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নৈহাটি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪৫
Share: Save:

দেবক গ্রামে বিস্ফোরণের ঘটনায় নৈহাটি থানার পুলিশ রবিবার রাতে কাঁচরাপাড়া থেকে বাজির মশলার এক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে। নাম, বলরাম সাউ ওরফে মুন্না। পুলিশ জানিয়েছে দেবক-সহ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বেশির ভাগ বাজি কারখানায় রাসায়নিক সরবরাহ করে মুন্না। সোমবার ব্যারাকপুর আদালত তাকে পাঁচ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মুন্নার রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্স অনুযায়ী, কেবলমাত্র অনুমোদনপ্রাপ্ত কল-কারখানা বা শিল্পক্ষেত্রে রাসায়নিক বিক্রি করার কথা। তবে সে কেবল মাত্র বাজি কারখানাতেই রাসায়নিক বিক্রি করত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। দীর্ঘ দিন ধরেই সে এই কারবার চালিয়ে আসছিল। তার নিজেরও বাজি কারখানা রয়েছে। সেই কারখানারও অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু এ সবের আড়ালে তার আসল কারবার ছিল বিভিন্ন অবৈধ বাজি কারখানায় রাসায়নিক সরবরাহ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবকে যে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার মালিক নুর হোসেনকে জেরা করে মুন্নার খোঁজ মেলে। রবিবার রাতে কাঁচরাপাড়ার বাগ মোড়ে বাড়ি থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। ধৃতের গুদামে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক মজুত আছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এ ছাড়াও, আরও অনেক জায়গায় সে রাসায়নিক মজুত রেখেছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। আজ, মঙ্গলবার মুন্নাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে যাবেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুন্নার পারিবারিক ব্যবসা রাসায়নিক সরবরাহ। বাবা গঙ্গাপ্রসাদ ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পরে কারবারের হাল ধরে মুন্না।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কয়েকশো অবৈধ বাজির কারখানা রয়েছে। তার বেশিরভাগই নৈহাটি, হালিশহর এবং কাঁচরাপাড়ায়। দেবক গ্রামে বেশ কয়েকটি অবৈধ বাজি কারখানা রয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সব ক’টি কারখানাতেই বাজি তৈরির মশলা যেত মুন্নার গুদাম থেকে। মুন্নার কারখানায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম নাইট্রেট, সালফার, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম নাইট্রেট, ব্যারিয়াম ক্লোরাইড এবং আরও বেশ কিছু রাসায়নিক মজুত আছে।

পুলিশ জানিয়েছে, রাসায়নিক বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেনি মুন্না। কাকে কত পরিমাণ রাসায়নিক বিক্রি করছে, তার হিসেব থাকার কথা। যাদের সে রাসায়নিক বিক্রি করছে, ওই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহারের কোনও অনুমোদন তাদের আছে কিনা, তা দেখে তবেই তাদের রাসায়নিক বিক্রির কথা। কিন্তু সে সব দিকে খোঁজ রাখত না মুন্না। কাঁচামালের সহজলভ্যতার জন্যই ওই এলাকায় অবৈধ বাজি কারখানার এমন রমরমা বলে মনে করছে পুলিশ।

এ দিকে, এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকাও। এত দিন ধরে এমন কারবার চললেও কেন পুলিশ তাকে আগে পাকড়াও করেনি, উঠছে সেই প্রশ্ন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, লাইসেন্স থাকায় পার পেয়ে গিয়েছে মুন্না। যেখান থেকে রাসায়নিক কেনে সে, সেখানেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি নেই কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন। নজরদারি না থাকলে ওই রাসায়নিক দিয়ে অন্য বিস্ফোরকও তৈরি হতে পারে, এই আশঙ্কা আছে।

আরও প্রশ্ন, মুন্নাকে জেরা করে রাসায়নিক উদ্ধার হলে সে সব নষ্ট করা হবে কোথায় এবং কী ভাবে। কারণ, গত সপ্তাহে নৈহাটির গঙ্গার পাড়ে বিস্ফোরক নষ্ট করতে গিয়ে প্রবল বিস্ফোরণে আশপাশের বাড়ি ভেঙে পড়েছিল। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, বম্ব ডিজপোজ়াল স্কোয়াডের সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মুন্না ছাড়া আর কেউ রাসায়নিকের কারবার করে কিনা, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Naihati Blast Bombs Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE