Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘হিন্দুস্তানি নাগরিকে’র যন্ত্রণা শোনালেন তারিগামি

সিপিএমের বাংলা মুখপত্রের ৫৪তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে তাঁর প্রতিটা উচ্চারণে আবেগের বারুদ ভরে দিচ্ছিলেন তারিগামি।

বক্তা: প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বক্তা: প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৭
Share: Save:

অবরুদ্ধ কাশ্মীরের কাহিনি শোনাতে এসেছেন তিনি। প্রেক্ষাগৃহ উপচে ভিড়। কিন্তু তিনি— মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি, দু’হাত দু’পাশে ছড়িয়ে জোর গলায় বললেন, ‘‘এক জন মুসলিম বা হিন্দু হিসেবে, এক জন কাশ্মীরি হিসেবে আপনাদের কাছে আসিনি। এসেছি এ দেশের এক জন নাগরিক হিসেবে দেশেরই একটা অংশের যন্ত্রণার কথা বলতে। আমাদের প্রথম পরিচয় ছিল হিন্দুস্তানি, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে!’’

জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও ৩৫এ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরে কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। উপত্যকায় এখনও জনজীবন ফেরেনি স্বাভাবিক ছন্দে। বিরোধী নেতাদের মতে, ভূস্বর্গে এখন শ্মশানের শান্তি! কাশ্মীরের জীবন ওলট-পালট হয়ে যাওয়ার পরে এই প্রথম কলকাতায় আসা তারিগামির। সেই অবসরেই কুলগামের বিধায়ক এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য বলে গেলেন, ‘‘ভূস্বর্গকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ। ইন্টারনেট নেই। নতুন বছরে কেন্দ্রের উপহার এসএমএস আবার চালু করা! কাশ্মীরের ছেলে-মেয়েরা নিট বা অন্য সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসতে চায়। কিন্তু আবেদন করবে কী ভাবে?’’ এক কালে সন্ত্রাসবাদী হানায় নিজের পরিজন হারানো বাম নেতার প্রশ্ন, ছেলে-মেয়েরা স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন নিয়ে এগোতে গেলে বাধা পাবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হতাশা থেকে ভুল পথে গেলে বিচ্ছিন্নতাবাদীর তকমা পাবে। এটাই কি তবে তাঁদের ভবিতব্য?

সিপিএমের বাংলা মুখপত্রের ৫৪তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে তাঁর প্রতিটা উচ্চারণে আবেগের বারুদ ভরে দিচ্ছিলেন তারিগামি। কেমন আছে কাশ্মীর ৩৭০ উঠে যাওয়ার পরে, এই প্রশ্ন কারও থাকলে তারিগামির মতে, তা জিজ্ঞাসা করতে হবে সীতারাম ইয়েচুরিকে। সিপিএমের যে সাধারণ সম্পাদককে নিজের দলের নেতার সঙ্গে দেখা করতে তিন বার বাধা পেয়ে শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র হাতে যেতে হয়েছিল, ‘আজাদ কাশ্মীরে’র অভিজ্ঞতা বলার জন্য তাঁর চেয়ে উপযুক্ত লোক আর কে আছে? ব্যথা ও যন্ত্রণার উপাখ্যানে নিজেদের প্রত্যয় অবশ্য হারাতে দেননি তারিগামি। বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা যত চেষ্টাই করুন, আমাদের দেশ ও সংবিধান বাঁচানোর লড়াই চলবেই!’’

আরও পড়ুন: মোদী কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত: মুখ্যমন্ত্রী

সেই ১৯৮৩ সালে অ-কংগ্রেস দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে শ্রীনগরে বিরোধীদের কনক্লেভ করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সেই স্মৃতি সামনে রেখে বাংলার মানুষের কাছে কাশ্মীরি নেতার আবেদন, ‘‘শুধু কাশ্মীরের সমস্যা ভাবলে এটা কিছুই নয়। অমিত শাহেরা স্বপ্নে যা দেখবেন, রাতারাতি তা-ই করতে যাবেন। অসমের ঘটনা যে কাল বাংলায় ঘটবে না, হঠাৎ কোনও রাজ্যকে যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানিয়ে দেওয়া হবে না— তা বলা যায় না। সতর্ক হয়ে প্রতিবাদে থাকুন, যাতে কাশ্মীরের কালো রাত অন্য কোথাও না আসে!’’

আরও পড়ুন: এনআরবি-বিএএ নিয়ে যুব সিপিএম দিল্লি অভিযানেও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE