Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল নেতা খুনে ধৃত বিজেপি কর্মী-সহ দুই

পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সুমন কুণ্ডু ও সুজয় ঘোষ। সুমন বিজেপি-কর্মী। সুজয় তার সঙ্গী। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জ়োন-২) আনন্দ রায় জানান, নির্মলকে খুনের ছক কষেছিল ওই এলাকার বাসিন্দা সুমনই।

ধৃত দুই। সুজয় ঘোষ ও  সুমন কুণ্ডু।

ধৃত দুই। সুজয় ঘোষ ও সুমন কুণ্ডু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০৩:৫৯
Share: Save:

কেন খুন করা হল নিমতার তৃণমূল নেতা নির্মল কুণ্ডুকে, সেই বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ। তবে ওই হত্যাকাণ্ডে বিজেপির এক কর্মী-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আগে ওই বিজেপি-কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে ওই এলাকারই এক তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে হুমকি-পোস্টার পাওয়া গিয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার জেলায় কালাদিবস পালনের ডাক দিয়েছে তৃণমূল। সন্ধ্যায় নিহত নেতার বাড়িতে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সুমন কুণ্ডু ও সুজয় ঘোষ। সুমন বিজেপি-কর্মী। সুজয় তার সঙ্গী। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জ়োন-২) আনন্দ রায় জানান, নির্মলকে খুনের ছক কষেছিল ওই এলাকার বাসিন্দা সুমনই। ষড়যন্ত্রে শামিল ছিল সুজয়ও। আদতে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা সুজয় ওই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। ঘটনার পরেই তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে হুগলির উত্তরপাড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, তিন রাউন্ড গুলি এবং একটি মোটরবাইক পাওয়া গিয়েছে।

পুলিশি সূত্রের খবর, ওই নেতাকে খুন করতে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিল সুমনেরা। তাদের নাম জানা গিয়েছে। ‘‘তদন্ত চলছে। ধৃতদের আদালতে তুলে হেফাজতে চাওয়া হবে। তাদের জেরা করলে আরও তথ্য জানা যাবে,’’ বলেন আনন্দবাবু।

নির্মল-হত্যায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। ওই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘নদিয়ার বিধায়ক-সহ তৃণমূলের লোকেরা যেখানেই খুন হচ্ছেন, সব আমাদের নামে চালানো হচ্ছে। পরে দেখা যাচ্ছে, তাদের নিজেদের লোকেরাই জড়িত।’’

সিসি ক্যামেরায় খুন হওয়ার দৃশ্য।

আজ উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কালাদিবসের ডাকের পাশাপাশি হুঙ্কার দেওয়ার পথ নিয়েছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘জেলার প্রতিটি প্রান্তে দলের কর্মীরা বেলা সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৪টে পর্যন্ত কালো ব্যাজ পরে মিছিল করবেন। দলের নেতা-কর্মীদের বার্তা দিয়েছি, এ বার থেকে আমাদের কারও গায়ে হাত পড়লে বিজেপির লোকেদের হাত গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। কেউ মারতে এলে পাল্টা মার হবে।’’

মঙ্গলবার ভরসন্ধ্যায় নিমতার পাটনা-ঠাকুরতলায় নিজের বাড়ির কাছেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন উত্তর দমদমের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি নির্মল। স্থানীয় সূত্রের খবর, ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা করতেন নির্মল। তাঁর বিরুদ্ধেও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তবে তৃণমূল নেতারা তা মানতে চাননি। পুলিশ জানায়, নির্মলের বিরুদ্ধে গত এক বছরে কোনও অভিযোগ আসেনি।

উত্তর দমদম শহর তৃণমূলের সভাপতি বিধান বিশ্বাসের অভিযোগ, বিজেপির লোকেরাই খুন করেছে নির্মলকে। ‘‘লোকসভা ভোটে বিজেপি এই এলাকায় জিততে পারেনি। তাই ওরা আমাকে খুন করে এলাকার দখল নিতে চাইছে,’’ বলেন বিধানবাবু।

তদন্তে নেমে পুলিশ একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দুই যুবক বাইকে চেপে নির্মলের বাড়ির সামনে আসে। চলন্ত বাইক থেকেই গুলি চালিয়ে পালায়। হেলমেট থাকায় তাদের কাউকেই চেনা যায়নি। বাইকটিকে চিহ্নিত করে খুনিদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের ধারণা, খুনিরা স্থানীয়। তারা এলাকার রাস্তাঘাট ভাল ভাবেই চেনে।

নির্মল খুনের পরে এক দল যুবক সুমনের বাড়িতে চড়াও হয়। ভাঙচুর চালানোর পরে বাড়ির একাংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির অভিযোগ, এর পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে। বিধানবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। ওখানে কিছুই হয়নি।’’

এ দিন ভোরে উত্তর দমদম পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল সভাপতি নির্মল বালার বাড়ির বাইরে একটি পোস্টার পাওয়া যায়। তাতে লাল কালিতে লেখা, ‘তৃণমূল করছিস নির্মল বালা। তোর মুন্ডু কেটে ফুটবল খেলব। আরও অনেকে আছে।’ পোস্টারের তলায় লেখা, ‘জয় শ্রীরাম। বিজেপি জিন্দাবাদ।’ বিজেপির উত্তর ২৪ পরগনার সাধারণ সম্পাদক চণ্ডীচরণ রায় বলেন, ‘‘ওগুলো তৃণমূলের ষড়যন্ত্র। সব জায়গাতেই আমাদের লোকেদের ফাঁসানো হচ্ছে। আমাদের এক জন গ্রেফতার হয়েছে। আইন আইনের পথেই চলুক। তিনি দোষী হলে সাজা হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE